কৃত্রিম রং স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর, আর এই রাসায়নিক রঙের সমস্যার প্রতিকারের জন্য এখন থেকে বিক্সা গাছের ফুলের থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক রঙকে খাদ্যে, মিষ্টান্নে, এমনকি হোলিতে আবির তৈরির কাজে ব্যবহার করার একটি প্রচেষ্টা চলছে। কৃত্রিম রঙের থেকে আমাদের চর্মরোগ জনিত সমস্যা হতে পারে, কিন্তু বিক্সা ফুলের থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক রং স্বাস্থ্যের পক্ষে একেবারেই ক্ষতিকারক নয়।
রাজ্যে এখনো প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম রং ব্যবহার হয়ে চলেছে। বিশেষত বাইরের খাদ্যে এই ধরণের রং সবথেকে বেশী ব্যবহৃত হয়। মাঝে মাঝে হয়তো এই বিষয়ের উপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ হয়ে থাকে তবে তা বেশী দিন পর্যন্ত বজায় থাকে না। তাই এই কৃত্রিম রঙের বিষয়টিকে সমূলে উৎপাটন করবার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ দরকার।
বিক্সা গাছকে খুব পরিচিত ভাষায় লিপস্টিক গাছ বলে, কারণ আমেরিকার এই গাছের বীজ থেকে প্রাপ্ত রং দিয়ে লিপস্টিক তৈরী হয়। একবার যদি বিক্সা গাছের বীজের পরিমাণ বাড়িয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সমস্ত রাজ্যে প্রাকৃতিক হলুদ কমলা রঙের প্রাপ্তি অনেকটাই সুলভ হয়ে যাবে এবং এই রঙের সুলভপ্রাপ্তি আমাদের খাদ্যে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে দিতে সক্ষম।
বিক্সা গাছের বীজ নিঃসৃত রং থেকে যে ভোজ্য রং উৎপন্ন হয় তাতে আমাদের খাদ্যের গুনগত মান অনেকটাই সুরক্ষিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কৃষি বিভাগে এই বীজের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিখুঁত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনার কথা আলোচিত হয়েছে। এখন থেকে কৃত্রিম রঙের ব্যবহারের শেষের দিনের শুরু, কারণ এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্সা গাছ রোপণের মাধ্যমে এর বীজের অধিক উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষিমন্ত্রক সূত্রে খবর।
ফুলিয়ার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে খুব সম্প্রতি বাংলার কৃষিমন্ত্রী শ্রী আশিস ব্যানার্জী পর্যবেক্ষণ করেন এবং তিনি সেখানে দুটি বিক্সা গাছ দেখতে পান। তিনি এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে যখনই ওয়াকিবহাল হন্, তারপরই তিনি সারা রাজ্যে এই গাছের চাষের ব্যাপারে নির্দেশ দেন । তিনি বলেন যে সমস্ত জায়গাতেই তিনি এই লিপস্টিক গাছের উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছেন এবং সমস্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরকে এই গাছের বীজ থেকে কীভাবে আরো ভালোভাবে রং উৎপাদন করা যায় সেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে অনুরোধ করেছেন।
রাজ্যের মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর আদেশানুসারে ফুলিয়ার এগ্রিকালচারাল ট্রেনিং সেন্টার বিক্সা উদ্ভিদের ফলন বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে । এই কেন্দ্রের কয়েকজন বিজ্ঞানীর প্রচণ্ড পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ২ কেজি বিক্সা বীজ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই উদ্ভিদ চাষের জন্য দরকার ৭০-বিঘা জমির একটি উন্মুক্ত প্রান্তর। প্রথমিকভাবে রাজ্যের কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে এই লিপস্টিক গাছের উৎপাদন করতে চায় এবং ভবিষ্যতে এটিকে তারা একটি প্রকল্প হিসাবে নেবে বলে ঠিক করেছে।
- প্রদীপ পাল