আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের প্রথমেই জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে সমস্যার সম্মুখীন দেশের জনগণ। তা সত্ত্বেও দেশের এবং জনজীবনের মঙ্গলার্থে নাগরিকগণের সমর্থন লকডাউন বাড়ানোর পক্ষেই রয়েছে। সকল স্টেকহোল্ডাররাও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন। ‘২০ শে এপ্রিল অবধি সমস্ত জেলা, এলাকা, রাজ্যগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে, এখানে কতটা কঠোরভাবে নিয়মগুলি প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা দেখা হবে’ বলে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর। যেসব রাজ্য হটস্পট অঞ্চল বাড়তে দেবে না, তাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম কিছু শর্তাবলী মেনে পুনরায় চাল করতে দেওয়া হবে বলে- প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, হটস্পট-এর তালিকাভুক্ত নয় এমন জায়গাগুলিতে ২০ শে এপ্রিলের পরে অবস্থা বিবেচনা করে কিছুটা ছাড়ের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তাঁর মতে, ‘নতুন হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত হওয়া অঞ্চল আমাদের জন্য পুনরায় সঙ্কট তৈরি করবে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লকডাউন ও সামাজিক দূরত্বের কারণে আমাদের দেশ কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন যে, আর হটস্পট অঞ্চল যাতে নতুন করে সৃষ্টি না হয়, এই বিষয়টি দেশের জনগণকেই সতর্কতার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
কোভিড -১৯ করোনাভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, বিমানবন্দরগুলিতে স্ক্রিনিং শুরু করার ক্ষেত্রে ভারত প্রথম চুক্তিগুলির মধ্যে একটি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আক্রান্তের সংখ্যা অনুযায়ী আমরা প্রাথমিকভাবে ১৪ দিনের জন্য মানুষকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভারতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করার আগেই আমরা জনসমাগম বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তবে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫০ হলে অবস্থার ভিত্তিতে আমরা ২১ দিনের জন্য দেশকে লকডাউন করেছিলাম।"
ভারত কীভাবে ভাইরাসকে মোকাবেলা করছে, সে সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন যে, অন্যান্য দেশের মতো ভারতে সংক্রামিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য আজ আমাদের অবস্থা অন্য দেশের চেয়ে উন্নত।
আরোগ্য সেতু হল, ভারত সরকার কর্তৃক কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত লড়াইয়ে ভারতের জনগণের সাথে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সংযোগের জন্য তৈরি একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক প্রচলিত এই আরোগ্য সেতু মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করতে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঘোষণা -
১. নতুন হটস্পট অঞ্চল তালিকাভুক্ত করা হবে
২. ২০ শে এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে
৩. বিভিন্ন ক্ষেত্রে তদারক ব্যবস্থা কঠোর করা হবে
৪. ঘরের বাইরে বেরোবেন না
৫. আগামীকাল বিস্তারিত নির্দেশিকা সমন্ধে তথ্য জানানো হবে
৬. দিন মজুর ও কৃষকদের ত্রাণ দেওয়া হবে
৭. আমরা আমাদের স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নতি করছি এবং অন্যান্য ব্যবস্থাও সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি
৮. ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি আমরা সকলে
৯. সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নীতি মেনে চলা আবশ্যক
১০. লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে তা জারি করা হল ৩ রা মে ২০২০ পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “জনগণ দেশকে বাঁচাতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগের জন্য শ্রদ্ধার সাথে ভারতের জনগণের সামনে মাথা নত করছি। আমাদের সম্মিলিত শক্তির এই প্রদর্শন বি আর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকীতে সত্যিকারের শ্রদ্ধা নিবেদন”।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, "ভারত অন্যান্য দেশের মত এই ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তারের অপেক্ষা করেনি, বরং সমস্যাটি উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এটি বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। এ জাতীয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে পরিস্থিতি কেমন হত তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। "তবে তিনি একথাও বলেন যে, ‘২১ দিনের লকডাউনের সাথে অর্থনৈতিক ব্যয়ের বিষয়টি সংযুক্ত রয়েছে, তবে মানুষের জীবন বাঁচানোর বিকল্প নেই’। ভারতের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী শেষে জানান যে, ‘তার সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দ্রুত সিদ্ধান্তের কারণে ভারত অনেক উন্নত অবস্থানে রয়েছে’।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)