করোনা ভাইরাসের কারণে সমগ্র দেশে ২১ দিনের লকডাউনে দুগ্ধ চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। হোটেল, রেস্তোঁরা, মিষ্টান্ন দোকান সহ বাণিজ্যিক অফিস বন্ধ থাকায় সমবায়ের দুগ্ধ বিক্রয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিক্রি কম হওয়ায় দেশের বড় বড় সমবায় সমিতি কৃষকদের কাছ থেকে দুগ্ধ কিনতে নারাজ।
সমবায় সমিতিগুলি কৃষকদের কাছ থেকে দুগ্ধ ক্রয়ের পরিমাণ হ্রাস করেছে -
রাজস্থানের বৃহত্তম দুগ্ধ ক্রেতা রাজস্থান কো-অপারেটিভ ডেয়ারি ফেডারেশন লিমিটেড (আরসিডিএফএল) দুধের ক্রয় ২৫ শতাংশ কমিয়েছে। আরসিডিএফএলের ডেপুটি ম্যানেজার বিনোদ গেরা বলেছেন, ‘১৫ ই মার্চের আগে আমরা দিনে ৪১ লক্ষ লিটার দুগ্ধ কিনতাম, তবে এখন আমরা তা কমিয়ে ৩০ লক্ষ লিটার করেছি। যে সকল কৃষকরা আগে বেসরকারী সংস্থাগুলিতে দুধ বিক্রি করতেন তারা আরসিডিএফএলকে দুধ বিক্রি করতে শুরু করেছেন তাই আমাদের কাছে ক্রয়ের পরিমাণ হ্রাস করা ছাড়া উপায় নেই। দুগ্ধের মালিকরা অতিরিক্ত দুগ্ধকে গুঁড়োতে রূপান্তরিত করেন, তবে গেরা বলেন যে এর একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতাও রয়েছে। আমরা উত্তরপ্রদেশে দুগ্ধ পাঠাচ্ছি কারণ সেখানে আমাদের গুঁড়ো তৈরির প্ল্যান্ট রয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আমরা অতিরিক্ত দুগ্ধ ক্রয় করব এবং তা পরিবহন করে অন্যত্র প্রেরণ করব’।
লকডাউনের পরে দুধের চাহিদা হ্রাস -
গ্রাম পর্যায়ে মোট ১,৯০,৫০০ সমবায় সমিতি রয়েছে। একটি অনুমান অনুসারে, ১ ই মার্চ থেকে ১৫ ই মার্চ পর্যন্ত গড়ে দুধের বিক্রয় প্রতিদিন প্রায় ৩৯০ লক্ষ লিটার ছিল। লকডাউনের পরে বিক্রি কমে হয়েছে ৩৩০ লাখ লিটারে প্রতিদিন।
আমুলের দুগ্ধ বিক্রি কমেছে ১০% –
গুজরাট সমবায় মিল্ক বিপণন ফেডারেশন লিমিটেড, আমুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপিন্দর সিং সোধা জানিয়েছেন যে, ‘এই ব্র্যান্ডের বিক্রয় দশ শতাংশ কমেছে। লকডাউনের পরপরই আতঙ্ক দেখা দেয় এবং লোকেরা তিন-চার দিনের জন্য দুগ্ধ সংরক্ষণ করে, কিন্তু এর পরে বিক্রয় ৩০ শতাংশ কমে যায়। যদিও অবস্থা এখন কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, তা সত্ত্বেও আমাদের বিক্রয় এখনও ১০ শতাংশ কম রয়েছে। তিনি বলেন যে,আশা করা যায় যে গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার সাথে সাথে দুধের উত্পাদন হ্রাস এবং চাহিদা বৃদ্ধি পাবে’।
কোলহাপুর মিল্ক ইউনিয়ন, যা মহারাষ্ট্রের একটি বৃহৎ দুগ্ধ সংস্থা, এর দুধের ক্রেতা কমেছে ২৫ শতাংশ। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিভি ঘানেকার, লকডাউন বাস্তবায়নের আগে সরকারের স্বল্পদৃষ্টি এবং নীতিকে দোষ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মিষ্টির দোকানগুলি আমাদের গ্রাহকদের একটি বড় অংশ। যদি মুদি দোকানগুলিকে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে মিষ্টির দোকানগুলি কেন বন্ধ রয়েছে’?
ঝাড়খণ্ড সরকার শ্রমিকদের মধ্যে দুগ্ধ বিতরণের প্রস্তাব নাকচ করেছে -
সংস্থার সক্ষমতা না থাকায় ঝাড়খন্ড মিল্ক ফেডারেশন লকডাউনে কৃষকদের কাছ থেকে দুগ্ধ সংগ্রহ বন্ধ করেছে। জেএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুধীর কুমার সিং আউটলুকে বলেছেন যে, তিনি রাজ্য সরকারকে ছাড়ের মূল্যে বাকী দুগ্ধ কিনে দরিদ্র ও অভিবাসীদের মাঝে বিতরণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু সরকার এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি আরও বলেন যে, ‘ঝাড়খণ্ডে দুগ্ধকে গুঁড়োতে রূপান্তর করার জন্য কোনও মেশিন নেই, তাই আমি দুধের দু'টি ট্যাঙ্কার, অর্থাৎ ২০,০০০ লিটার দুগ্ধ লখনউতে পাঠিয়েছি’। তাঁর অভিমত অনুযায়ী, হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক অনাহারে মারা যাচ্ছেন এবং বাকি দুগ্ধ তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে না, এটা সত্যি দুঃখের বিষয়।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)