পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত আগামী দুইদিনে সংগঠিত হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে এবং এর প্রভাবে ২০১৮-এর সবথেকে শক্তিশালী ঝড় মাংখুট সংঘটিত হতে পারে বলে জানানো হচ্ছে। বর্তমানে এই নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি চীন থেকে সরে এসে মায়ানমারে দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
যখন এই নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি বঙ্গোপসাগরে এসে পৌঁছবে তখন এটি বঙ্গোপসাগরে উপস্থিত অক্ষরেখাটির সাথে মিশে গিয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্তের আকার ধারণ করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বাস্তবে, এই নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং সাগরে যতক্ষণ অবস্থান করবে এটির শক্তি বৃদ্ধি হবে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর থেকে আশা করা হচ্ছে এই ঘূর্ণাবর্তটি সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গ অ ওড়িশা উপকূল অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে। তারপর সেটি অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে। স্থলভাগে ঢুকে এই নিম্নচাপ শক্তিহীন হয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। একটি শাখা তামিলনাড়ু উপকূলে ও অপর শাখাটি ঝাড়খণ্ড ও বিহার অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। এমনকি এই ঝোঁকে উত্তর-পূর্ব ভারতেও প্রবল বৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ সমগ্র ভারতে ভালো বৃষ্টিপাতের আবহ তৈরী হচ্ছে।
ঘূর্ণাবর্তটি স্থলভাগের উপর একটি দীর্ঘ পথ প্রায় পাঁচদিন ধরে অতিক্রম করবে, এই সময়কালে এটি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ও তেলেঙ্গানাতেও ভালো বৃষ্টিপাত ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যানুসারে এই নিম্নচাপের দাপটে গুজরাট ও কোঙ্কণ উপকূল, গোয়া এমনকি রাজস্থানের কিছু অংশেও বৃষ্টিপাত ঘটতে পারে।
আগামী সপ্তাহে যখন নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি রাজস্থানে গিয়ে পৌঁছবে তখন উত্তর ভারতের কিছু অংশতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়া নিম্নচাপের এই শাখাটির সাথে যদি পশ্চিমীঝঞ্ঝার যোগসূত্র স্থাপিত হয় তাহলে পশ্চিমহিমালয় অঞ্চলসমূহে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, এখন পশ্চিম হিমালয় অংশে পশ্চিমীঝঞ্ঝা অক্ষরেখাটি অবস্থান করছে। সুতরাং,আশা করা যাচ্ছে যে দিল্লী, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থান এই মরশুমের বৃষ্টিপাতের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারবে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল অনেকটা পিছিয়ে যেতে পারে।
এই মরশুমে গুজরাট হলও ভারতের সবথেকে খারাপ বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল। গুজরাটের সবথেকে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ, এই বছর এই দুটি অঞ্চল তাদের স্বাভাবিকের থেকেও কম বৃষ্টি পেয়েছে। গুজরাট এবছর এখনো পর্যন্ত ২৩% ও সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ অঞ্চল ৩১% কম বৃষ্টিপাত পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে সারা ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান ঘাটতি রয়েছে কারণ, এবছর মৌসুমি বায়ু এমনিতেই একটু দেরী করে প্রবেশ করেছে। সমগ্র ভারতে মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার কারণে বৃষ্টিপাতেরও ঘাটতি রয়েছে প্রচুর এবং এই ঘাটতি যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এখন ধীরে ধীরে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল এগিয়ে আসছে, যখন গুজরাটে নতুন করে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এই সপ্তাহান্তে, যার প্রধান কারণই হল বঙ্গোপসাগরে নতুন করে নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হওয়া। এই নিম্নচাপ এর হালহদিশ তখনি পাওয়া সম্ভব যখন সে স্থলভূমিতে অগ্রসর হবে।
তবে সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছের তুলনায় গুজরাটের বাকী অংশে তুলনায় বৃষ্টিপাত বেশী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুতরাং, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে গুজরাট অঞ্চলে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত আশা করা যেতে পারে। এরসাথে অবশ্য সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ অঞ্চলে কিছুটা মাঝারি মানের বারিপাতের অবস্থা তৈরী হতে পারে।
এছাড়াও, আমরা বলতে পারি যে, এই বৃষ্টিপাতের ফলে গুজরাটের বৃষ্টিপাতের ঘাটতি খানিকটা পুষিয়ে নিতে পারে। এর সাথে সাথে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমতে পারে, এর ফলে গুজরাটের আবহাওয়া স্বস্তিদায়ক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। NCR থেকে বিগত সপ্তাহের আবহাওয়া রিপোর্টে উষ্ণ ও গরম আবহাওয়াজনিত অবস্থা প্রত্যক্ষ করা গেছে। আকাশ ছিলো পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত, যার ফলে এই অঞ্চলে রৌদকিরণজ্বল দিবস প্রত্যক্ষ করা গেছে।
.স্কাইমেট ওয়েদারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৌসুমি অক্ষের পশ্চিম অংশটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান করছে। সেই কারণে উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে শুষ্ক এবং উষ্ণ বাতাস প্রবাহিত হয়ে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। আমরা এমন শুকনো আবহাওয়া আশাই করছিলাম ২১শে সেপ্টেম্বর। যাইহোক, আগামী শনিবার থেকেই আবহাওয়া পরিবর্তন দেখা যাবে। ২২শে সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লীসহ সমস্ত উত্তর -পশ্চিম ভারতে বিস্তীর্ণ অঞ্চল যেমন গুরুগ্রাম, নয়ডা, ফরিদাবাদ, এবং গাজিয়াবাদ ইত্যাদি জায়গায় প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হতে পারে।
- প্রদীপ পাল