সব ম্যাচ জিতলেও একটুর জন্য হাতছাড়া হচ্ছিল বিশ্বজয়ের অনুভূতি। আজ থেকে ৭ মাস আগেও সব ম্যাচে অপরাজেয় থেকেও অধরা ছিল বিশ্বকাপ। তবে বলে বাঘ দু পা পেছোয় আরও হিংসাত্মক আক্রমণ করার জন্য। আবারও বিশ্বজয়ের দৌড়ে নামল ভারত। অপরাজেয় থেকে এবার লিখল জয়ের কাহিনি।
দাঁতে দাঁত চেপে এই জয়ের কাহিনি লিখতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল এক হতভাগ্য ক্যাপ্টেন। বিগত ১০-১২ বছর ধরে শুধু জয়ের হাসির অপেক্ষা করে যাচ্ছিল এই মানুষটা। অবশেষে শান্তি। ক্যারিয়ারের শুরু ২০০৭ এর টি ২০ ওয়ার্ল্ড কাপের মাঠে। আর কি অদ্ভুত দেখুন এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিলেন সেই একই টি ২০ র ওয়ার্ল্ড কাপের মাঠেই। চোখে আনন্দের অশ্রুধারা আর হাতে বিশ্বকাপ। এর থেকে সুন্দর মুহূর্ত আর কিই বা হতে পারে। ধোনির পর ভারতীয় ক্রিকেটের নায়ক রোহিত শর্মা। এটা তাঁর প্রাপ্য ছিল। It's God's Plan.....
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে লেখা হয়ে থাকবে বিরাট বীরত্বের কাহিনি আর রাজার রাজকীয় বিদায়। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে তাঁকে ট্রোল, তাঁরা ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন। আমারও একবার মনে হয়েছিল "কী করছে এটা বিরাট" । তবে না ওই ভগবানের প্ল্যান। ফাইনালের টেম্পারর্মেন্ট সহ্য করে নিল বিরাটের ব্যাট। সৌরভ গাঙ্গুলি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন " Don't even talk about Virat Kohli, he is a once in a life time player" । সবটা সহ্য করে দলের স্বার্থে খেলে গেল বিরাট। তবে ম্যাচ শেষে চোখের কোনে জল এল যখন বিরাট বললেন "এটাই শেষ টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে, এটা ছিল সিক্রেট সারপ্রাইজ"। বলেছিলেন হঠাৎ করে একদিন চলে যাবেন। ক্রিকেট থেকে না গেলেও এর একটি অংশ থেকে অবসর নেওয়ার কথা শুনে বুকের ভেতর যেন ছ্যাঁত করে উঠল সেই হঠাৎ চলে যাওয়ার আতঙ্কে।
আর একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি বিদায়ী কোচ। তিনি রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তিনি। কিন্তু অধরা ছিল বিশ্বকাপ স্পর্শের অনুভূতি। অন্তিম লগ্নে এসে কোচ হিসেবে ছুঁয়ে দেখলেন বিশ্বকাপকে। আর ছুঁতেই যেন শরীরে কারেন্ট লাগল। ওইভাবে ওই মানুষটাকে এতটা উচ্ছসিত হতে প্রথমবার দেখল গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষায় এ যেন "Us Moment vai us moment"। আবারও মনে হল God's Plan।
"এভাবেও ফিরে আসা যায়" এই বিশ্বকাপ লিখল আরও এক যোদ্ধার কাহিনি। যিনি জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম, ডেডিকেশন, নিষ্ঠার তাগিদে ফের মাঠে ফিরলেন ঋষভ পন্থ। আবারও বুঝিয়ে দিলেন " হাল ছেড়না বন্ধু" । বিছানা থেকে একা ওঠা যার কাছে দুস্কর ছিল তাঁর হাতে আজ বিশ্বজয়ের ট্রফি।
মনে থাকবে হার্দিক পান্ডিয়ার চোখের জলের অনুভূতি। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে চুপ করে সহ্য করে যাচ্ছেন। চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল বার করেন নি। শুধু সয়ে গেছেন। শেষ ওভারে সব কিছুর উত্তর দিলেন হার্দিক।
" সূর্যের থেকে একটু আলো চেয়েছিলাম। সে হাতে ধরিয়ে দিল গোটা সূর্যটাই"। স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সূর্যকুমার যাদবের ক্যাচ।
অলরাউন্ডার হিসেবে অপরাজেয় অক্ষর পটেল। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ গুলিতে তাঁর অবদান মনে রাখবে গোটা দেশ।
সোনার ছেলে জসপ্রীত বুমরা। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষের শুরু করেছে এই মানুষটা। কীভাবে কারোর হাত থেকে জয় কেড়ে নিতে হয় শেখালেন বুম বুম বুমরা।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব এড়িয়ে আজ ভারতের মাটিতে পা রাখলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা (ICC T20 World Cup 2024)। সঙ্গে সেই ট্রফি। এসেই ভারতীয় ক্রিকেটাররা সাক্ষাৎ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে। মোদীর বাসভবনে তাঁরা এক ঘণ্টারও বেশি সময় কাটান। ট্রফি হাতে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা হয়।
দুপুর ১ টা নাগাদ মুম্বাইয়ের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয় মেন ইন ব্লু। আজ তাঁদের গায়ে রয়েছে নতুন জার্সি। জার্সির গায়ে যুক্ত হয়েছে একটি তারা। আর দেশের নামের নীচে লেখা “ চ্যাম্পিয়ন্স”। প্রধানমন্ত্রী টিমের সঙ্গে ফাইনালের ম্যাচ নিয়ে কথা বলেন। সেই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের বেশ কিছু শটস এবং ক্যাচ নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে দুপুর ১ টায় দিল্লির বিমান বন্দরের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয় বিরাট কোহলিরা। এবার তাঁদের গন্ত্যব্য মুম্বাই। অধীর আগ্রহে বিশ্বজয়ীদের জন্য অপেক্ষা করছেন মুম্বাইবাসিরা। আবারও হতে চলেছে ২০০৭ সালের প্রত্যাবর্তন।