পশ্চিমবঙ্গের ছোট শিল্প: হ্যান্ডলুম থেকে টেরাকোটা রোজ বদলাচ্ছে আকাশের মেজাজ: দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার আপডেট (Weather Update of Bengal) ক্যাপসিকাম চাষে ফলন ভালো, লাভ নেই! সরকারি সাহায্যের অভাবে ক্ষোভে চাষিরা
Updated on: 5 October, 2018 1:44 AM IST

আপনার ছাদের উপর আপনার নিজের একটা ধান ক্ষেত - ব্যাপারটা এখন মোটেই স্বপ্ন নয়। আপনি নিজের ধান নিজেই তৈরী করা- আজ সেই অসম্ভব কাজকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন একজন মানুষ। মিঃ আর.রভিন্দ্রন একজন নিপাট শহুরে জৈব কৃষক যিনি কেরালার তিরুভনন্তপূরম-এ থাকেন, আপনাকে যদি ছাদে ফসল ফলাতে হয় তাহলে আপনাকে ওনার সাথে দেখা করতেই হবে। তিনি একমাত্র আশার চিহ্নস্বরূপ এবং তিনি সবসময়ই একটি সুস্থ জীবন যাপন করেন।

অসীম ধারণাসমৃদ্ধ একজন গুণী কৃষক

ওনার চিন্তাধারা অত্যন্ত নতুন ধাঁচের, যা তিনি তাঁর বাড়ির প্রতিটি কোনার ফাঁকা জায়গায় কাজে লাগিয়েছেন। একটি সাধারণ দুইতলা বাড়ি শুধুমাত্র তাঁর বাড়িই নয়, এটা তাঁর ধান ক্ষেতও বটে। শুধু ধান্যক্ষেত্রই নয়, এই বাড়ির ছাদে কিচেন গার্ডেন, ও ছোটো একটা ফলের বাগানও রয়েছে। তবে সবথেকে যেটা আপনার চোখে লাগবে সেটা হচ্ছে বাড়ির ছাদে ধান চাষ। এই মানুষটি তাঁর ছাদের ৩০০ বর্গফুট অঞ্চল জুড়ে ধান চাষ করেছেন। তিনি নিশ্চিত যে, এতে তাঁর বাড়ির ছাদে যে পরিমান ভার বাড়বে, তা তাঁর বাড়ীর ছাদ, দেওয়াল, ও প্যারাপেট দেওয়ালের কোনো ক্ষতি সাধিত হবে না। কারণ এই ছাদের প্রতিটি কোনায় কোনায় লোহার খাঁচা বানানো হয়েছে এবং কয়েকটি লোহার পাইপ দিয়ে সেটিকে টেরেস থেকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পুরো ব্যবস্থাটি ভারসাম্য বজায় থাকে। এই লোহার বিশাল খাঁচার মধ্যে লোহার পাত লাগান হয়েছে যার উপর তিনি ধান্যযুক্ত পাত্রগুলিকে এমনভাবে সাজিয়ে রেখেছেন যেন দেখে মনে হয় কোনো ছাদ-এ নয়, কোনো ধান্যক্ষেত্রে ঘুরতে এসেছেন। এতে যেমন ছাদের সুরক্ষাও হয় তেমন চারপাশটাও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।

এই ছাদে তাঁর সর্বসাকুল্যে ১৫০ টি ধানযুক্ত টব রয়েছে , এবং তিনি শুকনো চাষ পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন। এইভাবে ধান চাষ করে তিনি প্রতি বার ৩২ কেজি করে উৎপাদন পেয়েছেন। এইভাবে তিনি বৎসরে ৩ বার করে চাষ করেছেন। এই শুকনো ধান চাষের একটাই সুবিধা যে এতে জল খুব কম খরচ হয়। এই ধরণের ধান চাষের ক্ষেত্রে সপ্তাহে মাত্র একদিন নিয়ম মেনে জল দেওয়া হয়। আসলে এই টবগুলিতে জল অনেকদিন পর্যন্ত থিতু হয়ে থাকে কারণ প্রতিটি তবে অ্যাজোলা রাখা থাকে। এতে বাষ্পমোচন আটকানো যায়। প্রত্যাশা ও উমা জাতের ধানের ফলন একমাত্র এইভাবে তিনি করে আসছেন।

একটি চলমান জীবনযাত্রার প্রকৃষ্ট উদাহরণ

আর.রভিন্দ্রন হলেন একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার যিনি খুব সম্প্রতি কৃষকে পরিণত হয়েছেন। তিনি সমাজে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন এবং এখন তিনি তাঁর নিজস্ব উৎপাদিত ফসল খেয়ে জীবনধারণ করেছেন। আসলে বর্তমানে আমরা আমাদের খাদ্যে ক্ষতিকারক সার ও কীটনাশক সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। আমরা এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এটা ছাড়া আর কিছুকেই ভাবতে পারি না। কিন্তু তিনি এটাকে সম্ভব করেছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে সামান্য জায়গাতেই তিনি এটা করতে পেরেছেন। তার জন্য কৃষিকে তিনি দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন নি।

তাঁর ছাদে ও চিলেকোঠায় তিনি প্রয়োজনীয় সবজি ও ফলের উৎপাদন করছেন। এর কারণে তাদের বাইরে থেকে খুব কম পরিমাণে সবজি কিনতে হয়। তিনি প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন ও এইভাবে দেখতে দেখতেই তিনি কৃষিকে ভালোবেসে ফেলেছেন। এবং এই ভালোবাসা থেকেই তাঁর মধ্যে এই ধারণাটি এসেছে। ২০১৭ সালে তিনি ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচার রিসার্চ সেন্টারে এর ফেলো ফার্মার অ্যাওয়ার্ড পান এছাড়াও  তিনি তাঁর এই নতুন কাজের জন্য বহু স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি এই কাজের সাথে যুক্ত আছেন ১৯৯৬ সাল থেকে।

তিনি তাঁর নতুন এই উদ্ভাবনী ধারণাকে যতজনের কাছে সম্ভব প্রচার করেছেন। তাঁর ৪ বৎসরের নাতি তাঁর নার্সারির পরিচর্যা করে চলেছে, এইভাবেই তিনি তাঁর কর্মসংস্কৃতি ও বার্তাকে পৌঁছে দিতে চান পরবর্তি প্রজন্মের কাছে।

- প্রদীপ পাল

English Summary: Terrace cultivation rice
Published on: 05 October 2018, 01:44 IST