কৃষিজাগরন ডেস্কঃ এযেন গোদের উপর বিষফোঁড়া, এমনিতেই অস্বস্তিতে তৃণমূল। সেই অস্বস্তি আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিলেন দলের সাংসদ জহর সরকার। তার দাবি, দলের একটা দিকে পচে গিয়েছে।এই পচা শরির নিয়ে কোন মতেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা সম্ভব হবে না।
মাত্র বছর খানেক আগে তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত জহরবাবু এদিন এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে জহর বলেছেন, ‘ঘটনা যখন প্রথমে টিভিতে দেখলাম বিশ্বাসই করতে পারিনি। কারও বাড়ি থেকে এত টাকা - রসদ বেরোতে পারে আমার কাছে কল্পনাতীত। সে যে দলেরই হোক, এরকম দুর্নীতির দৃশ্য টিভিতে কম দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ লিস্ট তৈরি আছে! মেয়ো রোড থেকে সিংহনাদ মমতার
তাঁর সংযোজন, দুর্নীতির টাকা দিয়ে এভাবে অলঙ্কৃত করা দেখলে গা শিরশির করে। এদের যদি এখনই বর্জন না করা হয় , তবে এক সাইড পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালে লড়াই করা মুশকিল!’’
দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির লোকেরা সাথে সাথে বলল, তুমি ছেড়ে দাও। বন্ধুরা বলছে, তুই এখনও আছিস? কত পেয়েছিস? এই ধরনের লাঞ্ছনা তো জীবনে কখনওই শুনতে হয়নি।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ভালো সম্পর্ক আদ্যন্ত বাঙালি জহর সরকারের। স্কুল জীবন কেটেছে সেন্ট জেভিয়ার্সে। প্রেসিডেন্সি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন তিনি। এর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। মাস্টার্স করেন সমাজবিদ্যাতেও।
ছাত্র হিসেবে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রথম দিনেই রাজনৈতিক অশান্তিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি! নকশালপন্থী এক সিনিয়র ছাত্র তাঁকে বলেছিলেন 'প্রিভিলেজ্ড ক্লাসের সদস্য'। জহরের কথায়, 'যেহেতু আমি সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে পাশ করে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হয়েছিলাম, তাই আমি নাকি 'প্রিভিলেজ্ড ক্লাস'!
আরও পড়ুনঃ গুলাম এখন সম্পূর্ন ‘আজাদ’
ইচ্ছে ছিল অধ্যাপনা করার। কিন্তু দেওয়া নিয়ে অনর্থক কার্পণ্য, রাজনৈতিক ডামাডোলে পরীক্ষা হতে দেরি হওয়া বাধ সাধল তাঁর ওই স্বপ্ন পূরণে। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, বেকারত্বের জ্বালা। মরিয়া হয়ে বসেছিলেন আইএএসে। রেজাল্ট বেরোতে দেখলেন, নাম রয়েছে প্রথম দশ-বারো জনের মধ্যে।'
রাইটার্স ব্লিল্ডিংসে কাজ করার সময়ে অর্থ দপ্তরের বিল কম্পিউটারাইজ্ড করার জন্য কোঅর্ডিনেশন কমিটি তাঁর উপর বেজায় খাপ্পা হয়েছিলেন।ইউপিএ জমানায় এক কংগ্রেসি মন্ত্রীর কাজকর্মের ধরনধারণ নিয়ে তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। আর মোদীকে নিয়ে তার কী মনোভাব বা সমালোচনা, তা তো কারও অজানা নয়।
আরও পড়ুনঃ কেন দুর্গা পূজা কমিটিকে অনুদান? সোমবার হাইকোর্টে হলফনামা জমা দেবে মমতা সরকার
রাজনৈতিক মহলে তিনি বরাবরই ঠোট কাঁটা হিসাবেই পরিচিত। নিজের হতাশা ব্যক্ত করে জহর সরকার বলেছেন, 'মোদির সঙ্গে লড়াই করতে পারে একমাত্র যে শক্তি, আমি সেই দলের অংশ ভেবে গর্ব বোধ হত৷ এ বছরের শুরুর দিকেও সেই অনুভূতি কাজ করত৷ বুকের ছাতি ফুলিয়ে আমরা সংসদে ঘুরে বেড়াতাম৷ কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কেমন একটা হীনমন্যতায় ভুগছি৷
২০২৪-কে পাখির চোখ করেই এগোচ্ছে তৃণমূল৷ যদিও দুর্নীতি নিয়ে দলকে সতর্ক করে জহর সরকারের বার্তা, 'এক সাইড পচা শরীর নিয়ে ২০২৪-এ লড়াই করা খুব মুশকিল৷' বলেই মনে করছেন প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন দীনেশ। তাঁর জায়গাতেই জহরকে পাঠান মমতা। এক বছর আগে ২০২১ সালের ৯ অগস্ট রাজ্যসভার উপনির্বাচনে সহজ জয় পান জহর। ২০২৬ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাংসদপদের মেয়াদ রয়েছে তাঁর।