বিশ্বব্যাপী মহামারী নভেল করোনা ভারত সহ ২০০ টি দেশে তার ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করেছে। যার কারণে ভারত ১৪ ই এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের অধীনে রয়েছে, তবে সম্প্রতি অনেকের মনেই প্রশ্ন যে, লকডাউন প্রত্যাহার করা হবে না কি ইতালি এবং অন্যান্য দেশের মতো বাড়ানো হবে?
সূত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে লকডাউন অপসারণের বিকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে, কারণ, তাদের মতানুযায়ী, ভারতের মতো দেশে লকডাউন দীর্ঘকাল ধরে স্থায়ী হলে দরিদ্র মানুষের অবস্থা আরও সংকটজনক হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ ই এপ্রিলের পরে ভারতে রেল পরিষেবা পুনরায় চালু হবে কিনা সে বিষয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়া ৩০ শে এপ্রিল পর্যন্ত বুকিং বাতিল করে দিয়েছে। তবে ১৪ ই এপ্রিল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের অবস্থার উপর নির্ভর করে, এই পরিস্থিতিতে দেশে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হবে না কি প্রত্যাহার করা হবে, তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২৪ শে মার্চ লকডাউন শুরুর পর থেকেই কয়েক লক্ষ ভারতীয়, বিশেষত অভিবাসী কর্মীরা খাদ্য এবং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করে যাচ্ছেন। গ্রামাঞ্চল থেকে এসে অনেকে বাইরের শরে থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকে আবার দিনমজুর, শ্রমিক বা গৃহকর্মী হিসাবেও কাজ করেন। প্রয়োজনবোধে লকডাউনের সময়সীমা বাড়লে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই সকল দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষেরাই।
প্রতাপ কুমার (এক শ্রমিক) আরএফআইকে জানিয়েছেন, “আমার পরিবার প্রতিদিন খাবারের জন্য লড়াই করে চলেছে। কারফিউ থাকায় আমরা আমাদের গ্রামেও ফিরে যেতে পারছি না। আমরা যদি এই সময়কালে খাদ্য ছাড়া বেঁচে থাকতে পারি, তবে তা হবে অলৌকিক”।
সঞ্জয় দীপ নামে এক কৃষক বলেছেন, “ভাইরাসের কারণে যদি আমাদের মৃত্যু নাও ঘটে, ক্ষুধার কারণে অবশ্যই ঘটবে। পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে সরকার আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা আমাদের কাছে পৌঁছয় নি”।
সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, অভ্যন্তরীণ অভিবাসীরা শ্রমশক্তির প্রায় ২০% এবং ভারতের অর্থনৈতিক আয়ের ১০% অবদান রাখে।
জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে, অবশেষে সরকার গরিবদের জন্য কয়েকটি কল্যাণ প্রকল্প ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে বিদ্যমান জাতীয় কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে খাদ্য রেশনের পরিমাণ দ্বিগুণ করা, প্রবীণ নাগরিকদের পেনশন এবং বিনামূল্যে সিলিন্ডার সরবরাহ ইত্যাদি অনুদান দেওয়া হচ্ছে।
অপর্যাপ্ত চিকিত্সা সরঞ্জাম -
সংক্রামিতের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রস্তুতি সম্পর্কেও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। কোভিড -১৯ এর মতো সংক্রামক রোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের যে ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের (পিপিই) অভাব দেখা দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। এক ডাক্তার বলেছেন, “মহামারী বাড়লে আমাদের আরও ভেন্টিলেটর, আইসোলেশন ওয়ার্ড, পিপিই কিট এবং আরও নার্সিং স্টাফ প্রয়োজন। সরকার সহায়তা দিচ্ছে তবে তা পর্যাপ্ত নয়”।
চিকিৎসকদের মতে, একমাত্র লকডাউনের মাধ্যমেই সম্ভব এই মহামারী রোগের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা। যেহেতু আমাদের দেশের চিকিৎসার সরঞ্জামও অপর্যাপ্ত, তাই সকলেরই উচিৎ এই লকডাউনের সময়ে সরকারের সহযোগিতা করা। নচেৎ এই ভয়ঙ্কর রোগের ছড়িয়ে পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
সুতরাং, সব দিক বিবেচনা করে মোদী সরকার এখন লকডাউন প্রত্যাহার করবেন কি না, বা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে ভাবছেন কি না, তা সময় এবং পরিস্থিতির ভিত্তিতে ঘোষণা করা হবে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)