আজাদপুর মান্ডি দিল্লি। ৮০ একর জায়গা জুড়ে এই মান্ডি শুধু ভারতের নয় এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ফল এবং সব্জির মার্কেট। দিল্লি সহ গোটা উত্তর ভারতে তাজা পন্য সরবরাহে লাইফ লাইন এই মান্ডি। কথিত আছে এই মান্ডি কখনও ঘুমায় না। ২৪ ঘণ্টা কাজ চলে এই মার্কেটে। পুব আকাশে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতিটি কোনা থেকে ফল সব্জির সমাগম ঘটে এই বাজারে। তারপর আবারও এখান থেকে তাজা পন্য সরবরাহ হয় দিল্লি সহ প্রতিবেশি রাজ্য গুলিতে।
এই একইভাবে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪*৭ কাজ চলছে এই মান্ডিতে। কৃষকদের কাজ খেত থেকে পন্য বাজারে পৌঁছানো আর ব্যবসায়ীদের কাজ সেই পন্য গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া। তবে এই গতিশীল এবং প্রাণবন্ত হাবটিকে পরিচালনার পেছনে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিদ্রাহীন রাত, পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট আর রুজি রোজগারের জন্য টিকে থাকার লড়াই। এই মান্ডির প্রতিটি কোনে রয়েছে এক একটি কাহিনি। আজ তুলে ধরা হবে সেই কাহিনিই। কীভাবে কাজ চলছে, কত টাকা রোজগার হয়, পরিবার থেকে দূরে থেকে কিভাবেই বা চলছে জীবন যুদ্ধ, সমস্যা কোথায় কোথায়, এই অক্লান্ত পরিশ্রমের সঠিক দাম কি পাচ্ছে আজাদ পুর মান্ডি?
আরও পড়ুনঃ ISF World Seed Congress 2024: বিশ্ব বীজ শিল্পের প্রধান ইভেন্ট
খেত থেকে গ্রাহকের রান্না ঘরে পৌঁছানো পর্যন্ত সব্জিকে তিনটি স্টেপ পূরণ করতে হয়। সড়ক বা রেলপথে কৃষকের দ্বারা উৎপাদিত পন্য প্রথমে মান্ডিতে এসে পৌছায়। তারপর এই সব্জি মান্ডিতে থাকা এজেন্সির কাছে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে এই সব্জির নিলাম হয়। তারপর সেখান থেকে পন্য পৌছাই বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে, সেটি সরাসরি মান্ডি থেকেও হতে পারে আবার পাইকারি সব্জি বিক্রেতার হাত ধরেও হতে পারে। প্রত্যেক কৃষক, ব্যবসায়ী এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি।
আরও পড়ুনঃ কৃষি নিয়ে এই এক রত্তির কথা শুনলে আপনিও অবাক হবেন
এখানে কর্মরত একজন মাশরুম ব্যাবসায়ী বলেন, “ ২০ বছর ধরে এই মান্ডিতে কাজ করছি। মাশরুমের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আমি। এখান থেকে মাশরুম দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় যায়। আগে কলকাতা, বিহার, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি রাজ্যে এখান থেকেই যেত। তবে বর্তমানে সমস্ত রাজ্যেই আশেপাশে প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছে তাই এখন শুধু দিল্লিতেই সরবরাহ হয়।“
বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের মতে উন্নত পরিকাঠামো দরকার, প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ সব্জি নষ্ট হয় সেদিকেও নজর দেওয়া উচিত। মান্ডিটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তবে এই মান্ডি সফল ভাবে পরিচালনা করার পেছনে আরও একদলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁরা হলেন মজদুর। রোদে গরমে এই শ্রমিকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার সাক্ষী আজাদপুর মান্ডি। এখানে কর্মরত অনেকেই রয়েছেন যারা তাঁদের জীবনের ২০ -২৫ বছর দিয়েছেন এই মাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহনের কাজে। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার হাতিয়ারও তৈরি করেছেন তাঁরা নিজেই। পিঠের ব্যাথার হাত থেকে বাঁচতে তৈরি করেছেন একটি বিশেষ অস্ত্র।
হাজারো সমস্যার ভিড়ে সবটুকু মানিয়ে নিয়ে চলছে এই গতিশীল মান্ডি। রুজি রোজগারের জ্বালায় সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হচ্ছে জীবন- জীবিকার লড়াই। প্রতিদিন ভোর হলেই চোখে নতুন আশার স্বপ্ন নিয়ে শুরু হচ্ছে যাত্রা। তাঁরা লড়াই করতে প্রস্তুত কিন্তু তাঁদের চাই ধারালো অস্ত্র। উন্নত পরিকাঠামো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আর এই অক্লান্ত পরিশ্রমের সঠিক দাম পেলেই তাঁরা রোজ মাঠে নামবে লড়াই করতে। প্রশ্ন একটাই, সরকার কি শুনবে এই আজাদপুর মান্ডির আবদার?