ভারতীয় পাট নিগমের (JCI)ব্যবস্থাপনায় "জুট আই কেয়ার"এর ৫ম ধাপে "পাট চাষীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হলো আজ ময়নাগুড়ি ব্লকের বেংকান্দি এলাকায়।জে সি আই এর পক্ষে শিলিগুড়ি বিভাগ)উপস্থিত ছিলেন জোনাল ম্যানেজার ডক্টর বি এন বনসল , ক্রাইজাফ (CRIJAF)এর বিজ্ঞানী ডক্টর বিজন মজুমদার, শ্রী পুলক ঝা(এন জে বি) এবং জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কো অর্ডিনেটর ডক্টর বিপ্লব দাস,ব্লক সুপারভাইজার শ্রী পুষ্পজিৎ রায় ও এই ব্লকের মাস্টার ট্রেইনার শ্রী তপন অধিকারী প্রমুখ।
প্রশিক্ষণের শুরুতে বনসল বাবু বলেন পাট চাষীরা কি পদ্ধতিতে চাষ করলে অন্ততঃ ২৫% কিংবা আরো বেশি আয় বৃদ্ধি পাবে এই নিয়েই আজকের উদ্যোগ।চাষীরা একমাত্র সঠিক বীজ নিবার্চন করে চাষ করতে হবে।উপযুক্ত হচ্ছে JCI অনুমোদিত "সার্টিফিয়েড" বীজ চাষ করা উচিৎ।এছাড়া বাজার থেকে "সঠিক যাচাইয়ের" মাধ্যমে বীজ নির্বাচন করতে হবে।উনি উদাহরণ হিসেবে JCI এর একটি বীজ প্যাকেট এনে চাষীদের "দুটি ট্যাগ" লাগানোর বিষয়টিকে দেখান।একটি থাকবে বীজ প্রস্তুত কারী সংস্থার সার্টিফিকেট অন্যটি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে সরকারের অনুমোদন করা বীজ।
ডক্টর বিজন মজুমদার পাট চাষীদের কি ভাবে উন্নত প্রথায় চাষ আবাদ করতে হবে তা বিস্তারিত আলোচনা করেন।তিনি বলেন,বর্তমানে যে ভালো বীজটা জুট আইকেয়ার এ অর্ধেক দামে দেওয়া হচ্ছে সেটি JRO 204। তিনি সেটিকে ছিটিয়ে না বুনে মেশিনে বুনতে হবে বলেন।মেশিনে বুনলে প্রতি বিঘা জমিতে ৪০০ গ্রাম বীজ ই যথেষ্ট।প্রতি ১গ্রাম বীজে পাট থাকে প্রায় ৫০০ টি ।আর প্রতি বিঘায় ৬০-৭০হাজার বীজ ফেললেই যথেষ্ট।রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে দিয়ে জমিতে অতি অবশ্যই জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।প্রতি বিঘায় ৪০০কেজি থেকে ৬০০ কেজি গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে।অথবা পরিমান মত কম্পোস্ট অথবা সবুজ সার নাহলে ৮০-১০০ কিলো কেঁচো সার যদি ব্যবহার করা যায় তবে আরো ভালো কারণ এতে মাটির স্বাস্থ্য বজায় থাকে।
তিনি চাষীদের লাইনে পাট বুনলে কি লাভ হয় সেটি বোঝান।বলেন এতে যেমন প্রতিটা চারা ভালো হয় তেমনি পাট নিরানিতে সুবিধা হয় ও লেবার খরচ কমে।
রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইউরিয়া ব্যবহার করলে হবে না, বিঘা প্রতি ইউরিয়া ১৭কেজি, সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ২৫কেজি, মিউরিয়েট অফ পটাশ ৮কেজি হিসেবে দিতে হবে।প্রথমে জমি তৈয়ারীর সময় SSP ও MOP জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে তারপর ২১ দিন পর প্রথম নিড়ানি র পর অর্ধেক ইউরিয়া, এবং ৪২ দিন পর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়া তিনি বলেন, মাটি পরীক্ষা করে বিভিন্ন সার প্রয়োগ করতে হবে।উত্তর বঙ্গের মাটি যেহেতু অম্লীয় তাই জমিতে চুন প্রয়োগের মাধ্যমে এই অম্লীয় ভাব দূর করতে হবে।৬.৫ থেকে ৭.৫ অবধি পি এইচ (pH) যে কোনো চাষ আবাদের জন্য উপযুক্ত। অম্লীয় ভাবের কারণে এখানে রোগ পোকার আক্রমণ বেশি তাই চাষীদের সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষনের মাধমে ব্যবস্থা নিতে হবে।রোগ হলে প্রথমেই কোনো ওষুধ দিতে তিনি না করেন।ভালো ভাবে বুঝে নিয়ে তারপর ওষুধ প্রয়োগ করতে বলেন।তিনি বলেন, শুয়ো পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা যেতে পারে যদি চাষী তার পাট ক্ষেত মাঝে মাঝেই পর্যবেক্ষণ করেন তবে লক্ষ করবেন যে এই শুয়ো পোকার ডিম পাট খেতের চারিপাশে ধার গুলিতে প্রথমে পাট পাতার নীচে ডিম পেড়েছে সেগুলি যদি প্রথমেই ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলা হয় তাহলে গোটা পাট ক্ষেতে তা ছড়ায় না।
মজুমদার বাবু আবার বলেন, পাট যখন ১০০-১২০ দিনের মধ্যে কেটে ফেলা হয় তখন,৩/৪দিন তা রেখে পাটের পাতা গুলো ঝাড়িয়ে পাট পচাতে(জাঁক দিতে) হবে। এই সময় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো পাটের উপরে কখনোই কলার গাছ বা মাটি (ওজন দেবার জন্য) সরাসরি ব্যবহার করা যাবে না।মাটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরানো প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে চাপা দেওয়া যেতে পারে
এবং পাট পচানোর জন্য CRIJAF এর পাউডারটি ব্যবহার করতে হবে। এইসব ধ্যান এইজন্য দিতে হবে যে এতে পাটের গ্রেড খুব ভালো থাকে।গ্রেড বলতে উনি পাটের রং,(সোনালী) উচ্চতা,শক্তি,ইত্যাদি বিষয় গুলি চাষীদের সামনে তুলে ধরেন।
সবশেষে জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কো অর্ডিনেটর ডক্টর বিপ্লব দাস চাষীদের উদ্দেশ্যে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন যেমন,১০ বছরের বেশি পুরনো বীজের জাত গুলি পরিহার করতে হবে।নিড়ানোর ক্ষেত্রে যান্ত্রিক সহায়তা যেমন নীল উইডার এর ব্যবহার বাড়তে হবে। সুসংহত সার ও ওষুধের ব্যবহারের পাশাপাশি পাট চাষের সাথী ফসল যেমন মুগ ডাল,ভেন্ডি, পুঁইশাক কিংবা লাল/সাদা ডাটা শাক চাষ করা যেতে পারে।ভালো গ্রেডের পাট হওয়ার জন্য পাট ক্ষেতে সম্ভব হলে অতিরিক্ত জল বের করে দিতে হবে।
এই প্রশিক্ষণে স্বতস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করছেন, বেংকান্দি কৃষকবন্ধু ফার্মারস ক্লাব ও পশ্চিম বারোগিলা সমাজ কল্যাণ জল সমিতির বিভিন্ন কৃষক ভাইরা।
অমর জ্যোতি রায়(amarjoti@krishijagran)