জাতীয় মৎস্য চাষি দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল, শনিবার ১০ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের তরফ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল এক ভার্চুয়াল সভার। অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি হিসাবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভারপ্রাপ্ত মৎস্য মন্ত্রী মাননীয় শ্রী অখিল গিরি। জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সাবজেক্ট ম্যাটার স্পেশালিস্ট তথা মৎস্য বিশেষজ্ঞ শ্রী ইন্দ্রনীল ঘোষ সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ এনিম্যাল এন্ড ফিসারি সায়েন্সের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ড. বি কে দাস, ড. এন জে মৈত্র, ড. বি কে চাঁদের মতন পদস্থ কর্মকর্তারা। ড. জি এইচ পৈলানের মতন অভিজ্ঞ মৎস্য বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিও এদিনের অনুষ্ঠান সফল করে তোলার অন্যতম প্রধান কারণ। এরা ছাড়াও গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন, উত্তরবঙ্গের এডিশনাল ডিরেক্টর অফ ফিসারিস ড. পিকে জানা।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা: (Participants on virtual platform)
জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ফার্মাস ক্লাব তথা সমগ্র রাজ্যের বেশ কয়েকটি মৎস্য চাষ সংগঠনের সদস্যবৃন্দও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল 'অন্বিতা' নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের, যারা দীর্ঘদিন ধরে অনাথ মেয়েদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। এই সংগঠন তাঁদের মেয়েদের নিয়ে মাছ চাষে এতটাই আগ্রহী যে তারাও এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অনুপ্রেরণায় স্বতোৎপ্রনোদিত ভাবে অংশ নেন। জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট বিপ্লব দাসও এই অনুষ্ঠানের অন্যতম মুখ ছিলেন। এছাড়াও গোটা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মৎস্য চাষিরাও এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
মৎস্য মন্ত্রীর বার্তা: (Fishery Minister speech)
মৎস্য মন্ত্রী অখিল গিরি এই সভায় অংশ নিয়েই মাছ চাষিদের উদ্দেশ্যে ইতিবাচক বার্তা দেন এবং এই বিশেষ দিনের সম্বন্ধে মূল্যবান বক্তব্য রেখে মৎস্য চাষিদের, মাছ চাষের কার্যকারিতা ও ব্যবসায়িক সাফল্যই নিয়ে অনুপ্রাণিত করেন। করোনা কালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই এই অনুষ্ঠান ধীরে ধীরে পূর্ণতা লাভ করতে থাকে। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া, মাছ চাষিরাও নির্দ্বিধায় তাদের নানাবিধ সমস্যার কথা অখিল বাবুকে জানাতে থাকেন। রাজ্যের একজন পদস্থ মন্ত্রী হয়েও অখিল বাবু নির্দ্বিধায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সেই প্রশ্নগুলির মুখোমুখি হন, এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। প্রশাসনের গাফিলতিতে মাছচাষিদের যে অসৎ পুলিশ কর্মীদের কাছে অকারণে নিগৃহীত হতে হচ্ছে, সেই বিষয়েও এই সভায় প্রশ্ন ওঠে। মাননীয় মৎস্য মন্ত্রী গুরুত্ব সহযোগে সেই অসুবিধার কথা জেনে, স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বৈজ্ঞানিক ইন্দ্রনীল ঘোষ, প্রান্তিক মৎস্য চাষিদের জীবন-জীবিকার গুরুত্ব অনুধাবন করে মন্ত্রী অখিল গিরির কাছে মৎস্য ক্রেডিট কার্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। মৎস্য মন্ত্রী এই প্রশ্নের উত্তরে নিজের পূর্ণ ইতিবাচক মতামত সহযোগে জানান, খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য দফতর এই ক্রেডিট কার্ডের সূচনা করবেন। এই বিষয়ে মৎস্য মন্ত্রী অনুষ্ঠানে আসা জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্য আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা দেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মশাইয়ের সহৃদয় উপস্থিতি এবং কৃষকদের প্রতি তাঁর আন্তরিক মমত্ত্ব সবাইকে মাছ চাষের প্রতি আরও বেশি করে আগ্রহান্বিত করবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: National Fish Farmers Day – কেন পালন করা হয় ন্যাশনাল ফিশ ফার্মার্স ডে, জেনে নিন এই দিনের তাৎপর্য
জাতীয় মাছ চাষি দিবস উদযাপন: (Nation Fish Farmer Day Celebration)
জাতীয় মাছ চাষি দিবসের এই শুভ লগ্নে জলপাইগুড়ি কেভিকে-র এই আহ্বান, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার এবং দার্জিলিং জেলার মৎস্য দফতরের আধিকারিকগণ, WBADMIP প্রকল্পের কর্মকর্তারা এবং ATMA কর্মকর্তারা কোনও ভাবে উপেক্ষা করতে পারেননি। ড. বিপ্লব দাশের মনোগ্রাহী ভাষণে এদিনের এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সবশেষে বলাই যায়, 'মাছে-ভাতে' বাঙালির পাতে যেন প্রত্যেকটা দিন একটুকরো হলেও মাছের পদ ওঠে, তাঁর ব্যবস্থা করতে KVK ও মৎস্য দফতরের তৎপরতা এককথায় তুঙ্গে!
আরও পড়ুন: Procedure of Turtle Farming: কচ্ছপ চাষের আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে হয়ে উঠুন লাভবান