ফসলকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন উৎসবের নামই হল “নবান্ন”। নতুন ধানের উৎসব “নবান্নে” মাতোয়ারা রাজ্যের শস্য ভান্ডার পূর্ব বর্ধমান জেলার মানুষজন। এই উৎসবের মূল আকর্ষণ নতুন ধানের বিভিন্ন পদ রান্না করে খাওয়া। এ দিন অনেকের বাড়িতে দেবী অন্নপূর্ণার পূজা হয়। তবে শুধু গ্রাম না নগরেও থাকে নবান্নের বর্ণাঢ্য আয়োজন।
এবার নবান্নে পূর্ববর্ধমান জেলা যেন একটু ভিন্ন রুপেই সেজে উঠেছে। কারনটা হল জেলা সদর বর্ধমান, খণ্ডঘোষ, রায়না, ভাতার, মেমারি, গলসি, আউশগ্রাম,মন্তেশ্বর এলাকায় ধানের ব্যপক ফলন হয়েছে। হেমন্তের শুরুতেই ধান কেটে বাড়িতে আনতে ব্যস্ত সমস্ত কৃষকরা। মাঠের সমস্ত ধান তোলা হলেই ওই নতুন ধান থেকে চাল তৈরি করে, নতুন চাল গৃহদেবতাকে অর্পণ করার পর। সদ্য তৈরি নতুন চাল গুঁড়ো করে সন্দেশ, কলা, দুধ ও নারকেল-সহ বিভিন্ন ফল দিয়ে মেখে খাওয়া হয়। এছাড়াও নবান্ন উৎসবের দিন গৃহস্থ বাড়িতে নানা পদ রান্না হয়। শাক, বিভিন্ন ভাজিসহ কুড়ি থেকে চল্লিশ পদের তরকারি রান্না করা হতো কোনো কোনো বাড়িতে।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, নবান্নের অনুষ্ঠানের সঙ্গে কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান যুক্ত হয়। যেমন, নতুন ধান উৎপাদনের পর পিতৃপুরুষ জন্য অন্ন প্রার্থনা করা। এছাড়াও নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা বিশেষ লৌকিক প্রথা। তবে আজকের দিনে নবান্নের অধিকাংশ আচার অনুষ্ঠান বদলে গিয়েছে। বলা চলে আজকের প্রজন্ম আমাদের মৌলিক সংস্কৃতি ও ফসলকেন্দ্রিক উৎসবগুলো সম্পর্কে জানে না। সব শেষে একটাই প্রশ্ন- পুরনো ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার দায়ভার কিন্তু আমাদেরই।
নবান্ন বানাতে গেলে কী কী উপকরণ লাগে ও কীভাবে তৈরি করবেন এক নজরে দেখে নিনঃ
উপকরণঃ
১ কাপ চাল বাটা।
১ কাপ নারকেল কোরা।
১/২ কাপ নলেন গুড়।
১/২কাপ ফলের কুচি (নিজ পছন্দ অনুযায়ী)।
৪-৫ টা সন্দেশ।
১ কাপ দুধ।
কীভাবে বানাবেনঃ
প্রথমে এই বিশেষ পদটি তৈরি করুন। এবং একটি পাত্রের মধ্যে চাল বাটা ও গুড় দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর নারকেল কোরা, ফলের কুচি, সন্দেশ ও সামান্য দুধ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে নবান্ন।