পিরোজপুরের নাজিরপুরে মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন শিকদার।উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে এ চাষ হচ্ছে। মাত্র ৮ মাসেই এ সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি। মাত্র ৪২ হাজার টাকা খরচ করে ৫-৬ লাখ টাকা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি। তার বাড়ির নিজস্ব মাত্র ৬ শতাংশের পুকুরে তিনি এ মুক্তার চাষ করছেন। পুকুরে ভাসমান অবস্থায় মুক্তার জন্য ঝিনুক রাখা নেটের ব্যাগ রয়েছে। পুরো পুকুরে রশিতে বেঁধে রাখা রয়েছে প্রতিটি ব্যাগ। আর এ রশি ও ব্যাগগুলো জলে ঝুলিয়ে রাখতে ভাসমান খালী বোতলে রশি বেঁধে তা ভাসিয়ে রাখা হয়েছে।
চাষীর সাফল্যের কাহিনী:
তিনি জানান, উপজেলা মৎস্য অফিসার গৌতম মণ্ডলের উৎসাহে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পুকুরে ৭০০ ঝিনুক নিয়ে চাষ শুরু করেন। প্রথম চাষেই তিনি সফলতা পেয়েছেন। তিনি কুষ্টিয়া থেকে এ ঝিনুক ক্রয় করেন। প্রতিটি ঝিনুক সেটিংসহ ৪৫ টাকা করে খরচ হয়েছে। এছাড়া ঝিনুকের খাবার তৈরি ও অন্যান্য ব্যয়সহ মোট ৪২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত সাত মাস আগে তিনি এ ঝিনুকগুলো চাষ (Peral cultivation) শুরু করেছেন। আগামী ১ মাসের মধ্যে তা বিক্রি করবেন।
চাষ পদ্ধতি(Farming process):
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, ঝিনুক সংগ্রহ করে তার খোলসের ভিতরের শিরা কেটে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মুক্তা তৈরির জন্য সেটিং করা হয়। একটি ঝিনুকে ৫-৬টি মুক্তা জন্ম নিতে পারে। আর এ ঝিনুকগুলো যাতে মাটিতে না মিলে যেতে পারে সে জন্য একটি নেটের ব্যাগে করে জলে ঝুলিয়ে রাখতে হয়।
আর এসব ব্যাগ যাতে সব সময়ই জলে থাকতে পারে সেজন্য পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রশি বেঁধে ওই সব ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এজন্য কিছু খালি বোতলের ছিপি (মুখ) আটকে বোতলগুলো ওই রশির মাঝে মাঝে বেঁধে দিতে হবে।
আরও পড়ুন -Periphyton based aquaculture: মাছ চাষে পেরিফাইটন পদ্ধতিতে উৎপাদন বাড়বে তিনগুন
এভাবে ওই সব ব্যাগে ঝিনুক রেখে ব্যাগগুলো ঝুলিয়ে রাখলে ওই ঝিনুকের ভেতর মুক্তা তৈরি হয়। ৮ মাস পর প্রতিটি ঝিনুক থেকে পরিপূর্ণ মুক্তা পাওয়া যায়। মুক্তার দুটি ধরন রয়েছে। এর একটি নিউক্লিয়ার ডাইস ও অন্যটি মেন্টাল টিস্যু। তবে মেন্টাল টিস্যুর থেকে নিউক্লিয়ার ডাইসের মুক্তার চাহিদা বেশি।
নিউক্লিয়ার টিস্যু থেকে অন্য যে কোনো আকৃতির মুক্তা তৈরি করা যায়। আর মেন্টাল টিস্যু থেকে অন্য আকৃতিতে পরিণত করার কোনো সুযোগ থাকে না। তাই ঝিনুক চাষের আগে তা সংগ্রহ করে সেটিং করার সময় এ বিষয়টি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এসব ঝিনুকের খাবার হিসেবে জলে সার প্রয়োগ করতে হয়। এ সার জলের উর্বরতা বৃদ্ধি করে ফাইটো প্লানটন ও জুয় প্লানটন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাভাবিক খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করে।
কৃষি দপ্তরের মতামত:
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মণ্ডল জানান, ওই চাষীকে কুষ্টিয়া থেকে মুক্তার জন্য ওই ঝিনুকগুলো সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঝিনুক সেটিং করাসহ ব্যয় হয়েছে ৪৫ টাকা। ঝিনুকগুলোর খাবার জন্য জলে খাবার তৈরির পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া এর অন্যান্য ব্যয় আরও প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ওই ৭০০ ঝিনুকে প্রায় ৪২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ঝিনুক থেকে ওই চাষীর একটি করে মুক্তা আসলেও প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আসবে। মাত্র ৮ মাসেই ঝিনুক চাষ করে মুক্তা পাওয়া যায়। এখানের ঝিনুকগুলো নিউক্লিয়ার ডাইসে চাষ করা হচ্ছে। প্রথমবার চাষ করায় তার প্রতিটি ঝিনুক থেকে ১টি করে মুক্তা আসবে সেভাবেই তা সেটিং করা হয়েছে। তবে প্রতিটি ঝিনুক থেকে ৫-৬টি মুক্তাও পাওয়া যায়। বর্তমানে, ওই চাষীকে দেখে বহু বেকার যুবক এগিয়ে আসছে মুক্ত চাষে | এতে গ্রামীণ অর্থনীতিরও উন্নতি ঘটবে |
আরও পড়ুন -Black wheat farming: এই জাতের গম চাষে কৃষকবন্ধুরা পাবেন অধিক ফলন