চন্দ্রমল্লিকা সারা বিশ্বে ফোটা চমৎকার একটি ফুল। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এই ফুলটি ফোটে ও বেশ সমাদৃতও।জনপ্রিয়তার দিক থেকে গোলাপের পরই এর স্থান। চন্দ্রমল্লিকা জাপানের জাতীয় ফুল। ক্রিসমাসের সময় ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমামও বলা হয়।এই ফুলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। তাই এই চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়ে চাষ করুন সফল হবেন।
প্রয়োজনীয় মাটি
অল্প অম্লতা (pH ৬.০-৬.৫) যুক্ত হাল্কা দোঁয়াশ বা বেলে-দোঁয়াশ মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের পক্ষে উপযুক্ত। মাটিতে প্রচুর জৈব সার থাকা দরকার। চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্র দরকার । তাই শীতকাল হল চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।
জাত
ডিগনিটি, নীরা, স্নোবল, যুবরানী, টেম্পটেশন, টোকিও, পিটার মে, গোল্ডেন গ্লিন ইত্যাদি।
আবহাওয়া
চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের জন্য উর্বর হালকা দোআঁশ মাটি, উচু, শুষ্ক ও সহজে জল নিস্কাশিত হয় এমন জমি প্রয়োজন। দক্ষিণ খোলা জমি চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। শীতকালই এই ফুল চাষের উত্তম সময়। বছরে একবার ফুল ফুটলেও সারা বছরই চন্দ্রমল্লিকা গাছ বেঁচে থাকে। জলনিকাশের সুবন্দোবস্ত থাকলে বেশি বৃষ্টিতেও ছোট জাতের চন্দ্রমল্লিকার বিশেষ ক্ষতি হয় না।
চারা লাগানোর পদ্ধতি
পশ্চিমবঙ্গের সমতলভূমির জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসই কাটিং বা চারা গাছ লাগানোর পক্ষে আদর্শ সময়, যা থেকে শীতকালে ফুল পাওয়া যায়।চারা লাগানোর প্রায় এক মাস পরে বিঘা প্রতি ১০০ কেজি নিম খোল এবং ১০ কেজি ইউরিয়া চাপান সার হিসাবে দিতে হবে। এই পরিমাণ সার আরো এক মাস পরে আর একবার দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা
জাবপোকা খুব ছোট আকৃতির, নরম ও কালো-সবুজ বর্ণের হয় । শীতকালে এর প্রকোপ খুব বেড়ে যায়। এ পোকা গাছের পাতা, ডগা এবং ফুল থেকে রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। আক্রান্ত নতুন কুঁড়ি ও পাতা কুঁকড়ে যায়। সাবান গুঁড়া ৫ গ্রাম/লিটার হারে জলে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করেও এই পোকা দমন করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ আদা চাষে লাভ হবে প্রচুর, জেনে নিন চাষ করার আধুনিক পদ্ধতি
সার প্রয়োগ
চন্দ্রমল্লিকা গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদন শোষণ করে থাকে। এ কারণে জৈব ও রাসায়নিক খাদ্যযুক্ত মাটিতে এ গাছ খুব ভালোভাবে সাড়া দেয়। প্রতি হেক্টরে ১০ টন পঁচা গোবর ,৪০০ কেজি ইউরিয়া, ২৭৫ কেজি টিএসপি, ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক অ্যাসিড ও জিংক অক্সাইড সার প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
জমির আগাছা মুক্ত রাখতে এবং গাছের যথাযথ বিকাশের জন্য ২-৩ বার হাত দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রথম আগাছা দমন বীজ রোপণের ৪ সপ্তাহ পর করতে হয়। চারা লাগানোর মাসখানেক পর গাছের আগা কেটে দিতে হয়। এতে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়।
ফুল সংগ্রহ
চন্দ্রমল্লিকা ফুল কুঁড়ি অবস্থায় তুললে ফোঁটে না। বাইরের পাপড়ি গুলো সম্পূর্ণ খুলে গিয়েছে এবং মাঝের পাপড়ি গুলো ফুটতে শুরু করেছে এমন অবস্থায় খুব সকালে অথবা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল তোলা উচিত। জাত ভেদে ফলন কম বেশি হয়। তবে গাছ প্রতি বছরে গড়ে ৩০-৪০ টি ফুল পাওয়া যায়।