Weather Update: ঝেঁপে নামবে বৃষ্টি! শনিবার থেকেই আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তনের পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের “ট্র্যাক্টর কে খিলাড়ি” কৃষকদের 51 হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার “মিলিওনেয়ার ফার্মার অফ ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ডস 2024” এবার জুরির সভাপতিত্বে নীতি আয়োগের সদস্য অধ্যাপক রমেশ চাঁদ
Updated on: 28 March, 2021 10:36 PM IST
Moringa Tree (Image Credit - Google)

সজিনা অতি পরিচিত সুস্বাদু সবজি। সজিনার ইংরেজি নাম ‘‘ড্রামস্ট্রিক’’ (Drumstick) যার অর্থ ঢোলের লাঠি এবং বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলেইফেরা (Moringa oleifera )। সজিনা মোরিনগেসি (Moringaceae) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সজিনার উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ হলেও শীত প্রধান দেশ ব্যতীত সারা পৃথিবীতেই এই গাছ জন্মাতে দেখা যায়।

সজিনা আমাদের দেশে এটি একটি বহুল পরিচিত গাছ। সাধারণত এ গাছের উচ্চতা ২৩ ফুট থেকে ৩৩ ফুট বা তারও বেশি হয়ে থাকে।

সজনের জাত (Variety) -

আমাদের দেশে সজনে ডাঁটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতির সজনে বছরে একবার ফলন পাওয়া যায়। এই সজনের দুটি জনপ্রিয় জাত হল পি.কে.এম -১ ও পি.কে.এম -২ । স্থানীয়ভাবে আরো একটি প্রজাতির নাম বারোমাসি সজনে বা নাজনে। বারোমাসি সজিনার জাত বছরে প্রায় তিন-চার বার ফলন দেয়।

মাটি ও জলবায়ু (Soil and climate) -

সজিনা চরম প্রাকৃতিক অবস্থা সহ্য করতে সক্ষম, তবে ২০ হতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সজনে চাষের জন্য উপযোগী। যেসব এলাকায় ২৫০ হতে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেখানে এই গাছ ভাল জন্মায়। মাটি বেলে দোঁআশ হতে দোয়াঁশ এবং পি.এইচ ৫.০ হতে ৯.০ সম্পন্ন মাটি সহ্য করতে পারে। এটি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সজিনা চাষে সারের তেমন প্রয়োজন হয়না। কারণ সজিনার বিস্তৃত ও গভীর শিকড় রয়েছে। তবে ইউরিয়া এবং জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ ভাল হয়। সজনে গাছ যে কোনো পতিত জমি, পুকুর পাড় রাস্তা বা বাঁধের ধারে যে কোনো ফাঁকা জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে লাগানো যায়।

সজিনার বপন/রোপণ প্রযুক্তি (Sowing/planting technology) -

প্রতিটি লম্বা সজিনার ফলে ১০-১৫ টি বীজ থাকে, এগুলো তিন শিরাবিশিষ্ট এবং ত্রিভুজাকৃতির হয়। বীজ থেকে বংশবিস্তার সম্ভব হলেও অঙ্গজ বা কাটিং (Cutting) থেকে নতুন চারা তৈরি করাই সহজ এবং উত্তম।

বীজ থেকে বংশবিস্তার -

আমাদের দেশে বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষাবাদের রীতি এখনও পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়না। কারণ বীজ থেকে চারা তৈরি ব্যয়বহুল, কষ্ঠসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে, তারপর সেটিকে হালকা রৌদ্রে শুকিয়ে ফাটলে বীজ পাওয়া যাবে। এ বীজ শুকনো বায়ুরোধী পাত্রে ১-৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়। তারপর জুলাই-আগষ্ট মাসে বীজ তলায় অথবা পলি ব্যাগে বপন করতে হবে। তবে বীজ বপনের আগে বীজগুলোকে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজ থেকে চারা গজাতে সুবিধা হয়। বীজ থেকে চারা বের হতে সময় লাগে ১০ থেকে ২০ দিন। ৫০-৬০ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার প্রস্থ ও জমির আকার অনুযায়ী লম্বা করা যেতে পারে। তবে বেডের চতুর্দিকে ৩০-৫০ সেমি. আকারে ড্রেন রাখতে হবে। অতঃপর বীজ, ১০-১৫ সেমি. দূরে দূরে লাইন করে বপন করতে হবে। চারা বের হবার পর নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও অন্যান্য যত্ন পরিচর্যা করতে হবে। তবে বীজ থেকে তৈরি চারার ফল আসতে তিন-চার বছর সময় লাগে।

কাটিং এর মাধ্যমে বংশবিস্তার -

আমাদের দেশে ডাল পুঁতে অঙ্গজ উপায়ে বংশ বিস্তার পদ্ধতিটি বেশি ব্যবহৃত হয়। তার কারণ হল এটি করতে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয়না আর খরচও কম। কাটিং রোপণের জন্য উত্তম সময় এপ্রিল থেকে মে মাস। কারণ এই সময়ে সজনে ডাঁটা পেড়ে ফেলার পর গাছের ডালপালা ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। এই ছাঁটা ডালকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে পুঁতে দিলেই নতুন চারা পাওয়া যাবে। তাছাড়াও এ সময়ে অল্পকিছু বৃষ্টি হয়ে থাকে যার ফলে লাগানো ডালটি সহজেই টিকে যায়। সাধারণত রোগ ও পোকামাকড়মুক্ত সতেজ ও স্বাস্থ্যবান শক্ত ২.৫-৩ ফুট (৭৫-৯০ সেমি.) লম্বা ও ৩-১৬ সেমি. ব্যাস বিশিষ্ট ডাল নির্বাচন করা প্রস্তুতকৃত কাটিং সরাসরি মূল জমিতে রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। গর্ত করে এক ঝুড়ি গোবর সার দিয়ে গাছের ডাল পুঁতে ফেলতে হবে। দেড় থেকে দু’মাসের মাথায় ডালে কচি পাতা বার হয়। তিন-চার মাসের মাথায় শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে মাথাচাড়া দেবে গাছ। পৌষ-মাঘ মাসে সজনে গাছে ফুল ফোটে। এক কেজি ফুল ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়। ফুল থেকে এক মাসের মধ্যে সরু সুতোর মতো ডাঁটা বের হয় (সজনে ডাঁটা নামে যেটা আমরা খাই, তা গাছের ফল, কুমড়ো বা লাউ ডাঁটার মতো কাণ্ড নয়)। নরম ডাঁটা কেজি প্রতি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রমাণ আকারের ডাঁটা হয়। এই ডাঁটার দামও কম নয়। গাছ থেকে ডাঁটা পাড়া হয়ে গেলে ডাল ছেঁটে ফেলতে হবে। ফের পুরনো গাছে নতুন করে পাতা, ফুল ও ফল হবে। এই সময় আর একটু জায়গা বার করে ছাঁটা ডালগুলিকে পুঁতে দিতে হবে।

কাটিং রোপণ পদ্ধতি (Cutting planting method) -

এক্ষেত্রে জমি ভালোভাবে চাষ করে ২০ ইঞ্চি-২.৫ ফুট × ২০ ইঞ্চি-২.৫ ফুট × ২০ ইঞ্চি-২.৫ ফুট আকারের গর্ত করতে হবে। ডালটি লাগানোর সময় যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হল ডালটি গাছে থাকা অবস্থায় এর আগা বা মাথা এবং গোড়া যে  দিকে ছিল রোপণ করার সময় যেন ঠিক সেই ভাবেই থাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কাটিং গর্তে লাগানোর সময় প্রতিটি কাটিং এর তিন ভাগের এক ভাগ গর্তের মাটির নিচে রাখতে হবে। কাটিং লাগানোর সময় গর্তের মাটির সাথে ৩/৪ টি নিম পাতা এবং ১০ গ্রাম সেভিন গর্তের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে কাটিং লাগালে মাটিতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। গর্তে কাটিং লাগানোর পর কাটিং এর মাথায় আলকাতরা দিয়ে দিতে হবে। এতে কাটিং এর মাথা শুকিয়ে যাবে না।

আরও পড়ুন - বহুবিধ গুণসম্পন্ন সজিনা, পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব, জেনে নিন সজিনার উপকারিতা সম্পর্কে

সার প্রয়োগ -

সারের নাম সারের পরিমাণ
পচা গোবর/কম্পোস্ট ৪০-৫০ কেজি
টিএসপি ৫০ গ্রাম
ইউরিয়া ১০০ গ্রাম
এমওপি/পটাশ ১০০ গ্রাম
জিপসাম ১০ গ্রাম
দস্তা সার ১০ গ্রাম
বোরণ ১০ গ্রাম


সজিনার কলম চারা রোপণের জন্য ২০-৩০ দিন আগে প্রতি গর্তে উপরোক্ত সার মাটির সাথে মিশিয়ে ঢেকে রেখে দিতে হবে। এছাড়া রাসায়নিক সার না দিয়ে প্রতি গর্তে ৪০-৫০ কেজি পচা গোবর সার গর্তের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তে সাথে সাথে গাছ লাগানো যেতে পারে। গাছ লাগানোর পর প্রতি গাছের জন্য ৪০-৫০ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, এস.এস.পি. ও এম.ও.পি. এবং জিপসাম, বোরাক্স ও জিঙ্ক সালফেট ৫০ গ্রাম করে সার গাছের চতুর্দিকের মাটি কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

সেচ ব্যবস্থা-

নতুন লাগানো গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে শীঘ্রই শিকড় গজাতে পারে। শুষ্ক ও রৌদ্রজ্জ্বল সময়ে প্রায় দুই মাস সেচ দিতে হবে। তবে সজিনার গাছ একবার লেগে গেলে তেমন জলের প্রয়োজন হয়না।

অন্যান্য পরিচর্যা-

সজনে গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রাখা দরকার। গাছ লাগানোর সাথে সাথে খুঁটি দিয়ে (৪) চার এর মত ‘নট’ করে বেঁধে দিতে হবে। প্রয়োজনে জৈব-অজৈব আগাছানাশক প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে গাছের ভিতর মৃত এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে প্রথম বছরে মাটি থেকে ১ মি. দুরত্ব রেখে উপরের অংশ কেটে ফেলা হয়। এই গাছ থেকে ৪-৫ মাসে নতুন কুশি বের হয় এবং নতুন কুশি থেকে ফল দেয়া শুরু করে। তবে কুশির সংখ্যা বেশি হলে ভালো আলো-বাতাস পাওয়ার জন্য কিছু ডাল কেটে বা ভেঙ্গে পাতলা করে দেয়া উচিত। সাধারণত ৩ বার ডাল কেটে দেওয়া হয়, যা ৯ মাস, ১৭ মাস ও ২৫ মাস পর্যন্ত বয়সে করা হয়।

তবে বসতবাড়িতে সজিনা গাছের ক্ষেত্রে তেমন কোন নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। এক্ষেত্রে প্রতি বছর সজিনা সংগ্রহের পর বিগত বছরে যে জায়গায় ডাল কাটা হয় তার পরে ৫০-৭৫ সেমি. রেখে ডাল কেটে দেওয়া হয়। প্রতি বছর ডাল কাটার পর কাটা অংশে আলকাতরা দেওয়া ভালো।

আরও পড়ুন - রুক্ষ জমি থেকে কিভাবে করবেন ফসল এর অধিক উৎপাদন

English Summary: Cultivation of Moringa tree - varieties, planting, fertilizer application and care methods
Published on: 28 March 2021, 06:37 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)