বিশেষ দক্ষতা ছাড়া মৌপালন (Honey bee farming) সম্ভব নয় । ইউরোপিয়ান মৌমাছি চাষ করতে হলে তো, যেখানে নেকটার সমৃদ্ধ ফুলের ব্যাপ্তি রয়েছে, সেখানেই মৌমাছির বাক্স নিয়ে মৌপালককে জমা করে রাখতে হবে। বিপুল শ্রমসাধ্য এবং ব্যায় বহুল এই চাষ। কিন্তু এই চাষে মৌপালকের নিজস্ব জমি না থাকলেও চলে। মৌপালনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে পরাগমিলন পরিষেবাও হয়।
পেঁয়াজ চাষের জমিতে মৌপালনের জন্য কিছু তথ্য ও পরামর্শ (Mixed farming Guidelines) –
-
একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জমিতে মৌমাছির বাক্স রাখলে আড়াই গুন বেশি বীজ পাওয়া যায়। বিঘে প্রতি একটি মৌমাছির বাক্স রাখলেই ভালো কাজ দেবে।
-
পেঁয়াজে শোষক ও অন্যান্য পোকা দমনের জন্য চাষিরা যথেচ্ছ পরিমাণে রাসায়নিক বিষ তেল প্রয়োগ করেন। এটি মৌমাছির জন্য অত্যন্ত হানিকর। এর প্রতিকার হিসাবে পেঁয়াজে ফুল ফোটার আগেই সমস্ত রাসায়নিক প্রয়োগ বন্ধ করুন। বিকল্প হিসাবে নীল আঠা ফাঁদ ব্যবহার করুন।
-
জমিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়ান ও সুষম সার প্রয়োগ করুন। এতে পেঁয়াজ ফুলের মধুর স্বাদ মৌমাছিকে আকৃষ্ট করবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত পটাশ সারের প্রয়োগে পেঁয়াজ ফুলের মধুর স্বাদের হেরফের হয়। এতে মৌমাছি পেঁয়াজ ফুল এড়িয়ে যায়
পরিচর্যা (Crop care) -
-
যে সমস্ত অঞ্চলে অনুখাদ্যের ঘাটতি আছে (বিশেষত বোরনের) সেখানে মাটিতে মিশিয়ে অথবা স্প্রে করে অনুখাদ্য প্রয়োগ করুন। এতে বীজের পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়বে।
-
পেঁয়াজ জমির আশেপাশে আমবাগান, সর্ষে ক্ষেত, মৌরি ক্ষেত ইত্যাদি থাকলে মুশকিল। মধুর পরিমাণ ও গুণগত উৎকর্ষতার কারনে মৌমাছি পেঁয়াজ ক্ষেতে না এসে ঐ সব জায়গায় ভিড় জমাবে। মৌমাছিকে আকৃষ্ট করতে জমিতে মৌরি (কন্দ লাগানোর সময়ই) ও ধনে (কন্দ লাগানোর ২০-২২ দিন পর) লাগানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে, ১০ সারি পেঁয়াজ এরপর ২ সারি মৌরি বা ধনে এই হিসাবে লাগাতে হবে।
-
পেঁয়াজের পুষ্পমঞ্জরি শুকিয়ে এলে ও ফেটে কালো বীজ দেখা গেলে জমিতে ফেলে রাখবেন না। এতে বীজ ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হবে।
-
জমিতে সঠিক সময়ে কন্দ রোপণ করুন। দেরি করলে বীজ পাকার সময় কালবৈশাখীর প্রকোপে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপুল লোকসানের সম্ভবনা।
আরও পড়ুন - সরকার থেকে ভুট্টা চাষিদের জন্য জারি বিশেষ সতর্কতা, এফএডব্লিউ প্রতিরোধ
দরিদ্র মৌপালক উৎপাদিত মধুর যথাযথ দাম পান না। মৌমাছির বাক্স জমির ধারে বসাতে মৌপালককে বাধা দেওয়া হয়। মৌমাছির বাক্স নিয়ে মূলতরাত্রেই যাতায়াত করতে হয়। এই সময় তাদের নানা হয়রানির স্বীকার হতে হয়। এই সমস্যাগুলির নিয়ন্ত্রণে, মৌপালকদের সমবায় গঠন , ‘হানি হাব’ তৈরীর মাধ্যমে মৌপালকদের ঋণদান, মধু প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাত করণে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন আরো আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত প্রশিক্ষণ। যথাযথ ভাবে তা করতে পারলে মৌমাছিপালনে সাফল্য আসা সম্ভব।
আরও পড়ুন - সার্টিফায়েড সীড কি? কীভাবে চিনবেন কৃষকবন্ধুরা সার্টিফায়েড সীড, রইল বিস্তারিত