ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের কিছু অংশ দেশের খরা-প্রবণ অঞ্চল। এই সকল অঞ্চলে কৃষকদের পরিস্থিতি এবং আবহাওয়ার অবস্থা বিবেচনা করে চাষ করতে হয়।
এই বর্ষার সময়ে খরাপ্রবণ অঞ্চলে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে কৃষকবন্ধুরা কৃষিকাজ করতে পারেন। কীভাবে করবেন, নিম্নে তার পদ্ধতি বর্ণনা করা হল।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং কৃষিকাজে ব্যবহার (Rainwater Harvesting Projects) -
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা প্রয়োজনের সময় কৃষিকাজে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ পদ্ধতিটি কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব বলা যায় না৷ এতে অসময়ে অনেক সময় কৃষকদের সেচের কাজে সুবিধা হতে পারেষ বিশেষ করে শুষ্ক অঞ্চলের জন্য এটি লাভজনকও হতে পারে৷ তাই বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের চেষ্টা করা যেতে পারে৷
পর্যাপ্ত গাছের অভাবে বৃষ্টি কম হয় আর সেই কারণে জলের অভাব হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের দেশের কৃষকরা। রুক্ষ এলাকায় অপর্যাপ্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও হঠাৎ মুশলধারে বৃষ্টিপাতে হঢ়কা বাণে ভূমিক্ষয় হয় আর এর দরুণ প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। তাই রুক্ষ জমির জলধারণ ক্ষমতা বাড়াতে, টপ সয়েল বা মাটির উপরিভাগকে সুরক্ষিত করার কিছু পদ্ধতি আলোচনায় রইলো।
দীর্ঘমেয়াদি উপায় (The long-term way) –
জল সংরক্ষণের কয়েকটা দীর্ঘমেয়াদি উপায় আছে, যেমন গাছ লাগানো। একটা-দুটো নয়, এক লক্ষ কোটি গাছ। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে যেমন শিল্প এলাকাগুলিতে এবং নতুন তৈরি পাকাবাড়ীগুলিতে বৃষ্টির জল সংগ্রহের পরিকাঠামো বাধ্যতামূলক করতে হবে। পুকুর, হৃদ ও অন্যান্য জলাশয়ে জলসঞ্চয়ের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। জনগনকে সচেতন করাতে হবে ভুগর্ভস্থ জল সমস্যার আসন্ন বিপদগুলি সম্বন্ধে। প্রতিটি এলাকার জলস্তরের কথা চিন্তা করে নলকূপ বসানো বা কূপ খোঁড়ার অনুমতি সরকারকে দিতে হবে। পৃথিবীতে নোনাজলই বেশি। মিষ্টি জল মাত্র দুই শতাংশ, তারও বেশি খানিকটা দুই মেরুতে বরফ হয়ে আছে। স্রেফ ০.৫ শতাংশ ব্যবহারের যোগ্য। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জল বাড়ছে, মিষ্টি জলের অনুপাত কমছে। তাই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের জল নুনমুক্ত করে মিষ্টি জল বানাতে পারলে অভাব অনেকটা মেটে। ভারত সহ বেশ কিছু দেশে এই প্রযুক্তি আরম্ভ হয়েছে যেমন ইজরায়েল সৌরশক্তিতে জলের কারখানা চালায় এবং তা থেকে কৃষিকাজ সম্পন্ন হয়। জল সমস্যা সমাধানের প্রকল্পগুলি সবই ব্যয়সাপেক্ষ এবং পানীয় জলের জোগান বজায় রেখে যাওয়ার আর্থিক চাপ বহন করতে হবে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল নগরবাসীদের, যাতে গরিবরাও জল পান।
অন্যান্য পদ্ধতি -
মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখার পদ্ধতি - রুক্ষ জমিতে কৃষকরা যখন বৃষ্টি নির্ভর চাষ আবাদ করেন তখন তাদের বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাকে সংরক্ষণ করা উচিত। এর জন্য জমির আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। অল্প জল ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করার দক্ষতা অর্জন করতে হলে মিশ্র চাষের ব্যবস্থা, গাছ লাগানো ও তাকে বাড়তে দেওয়া, পশুপালন সব কিছু এক সাথে করতে হবে যাতে একটি বিভাগের ‘বাই প্রোডাক্ট’ অন্য বিভাগে ব্যবহার করা যায়। কৃষিকাজের উদ্বৃত্ত অংশ যেমন পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে তেমনই পশুরপালনের উদ্বৃত্ত পদার্থগুলি কম্পোস্ট সার তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে বা সরাসরি সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই ভাবে উৎপাদন খরচ কমানোর সাথে সাথে জল সম্পদের সংরক্ষণও সম্ভব হবে।
সঠিক পরিকল্পনা –
রুক্ষ জমিতে প্রথমিকভাবে কৃষক খরা প্রতিরোধী দেশীয় জাতগুলি লাগাতে পারেন যাতে কম জল লাগে। সাথে জমির একটা অংশে ছোট ছোট পুকুর বানিয়ে রাখলে বৃষ্টির জল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। পুকুরের জল বেড়ে গেলে সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি কাটাপোনা মাছ চাষ করা যাবে। পুকুরের জল চাষের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
অ্যাজোলা চাষ –
এই সমস্ত ছোট পুকুরে অ্যাজোলা চাষ করা যেতে পারে যা গরু, পোলট্রি এমনকি মাছেরও উৎকৃষ্ট পুষ্টিকর আহার যা গরুর দুধ উৎপাদন ও পোলট্রির ডিম উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যাজোলা পুকুরের জলের বাস্পীভবন কমিয়ে জলকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
গোবর সার -
জমিতে গোবর সার মেশানো হলে ৩-৫ বছর পর সেই জমির উৎপাদনশীলতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। জমির চারিধারে বড় বড় গাছ থাকলে সেই সমস্ত গাছের পাতা জমিতে বিছিয়ে রাখলে তা প্রাকৃতিক মাল্চিং এর কাজ করে জমির জল ধরে রাখতে সাহায্য করবে ও বন্ধুপোকাদের ও কেঁচোর সংখ্যা বাড়িয়ে জমিকে অনেক বেশী ফলনশীল করবে। ধৈর্য্যের সাথে ৩-৫ বছর সঠিক নির্দেশনার সাথে এই ভাবে জমির দেখাশোনা করলে জমির উৎপাদনশীলতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন - Organic Manure – সহজ পদ্ধতিতে কীভাবে বানাবেন জৈব সার, রইল খুঁটিনাটি
ভারতবর্ষে কৃষিকাজের জন্য যে পরিমাণ জলের প্রয়োজন তার ৬১.৬ শতাংশ জল আসে ভূ-গর্ভ থেকে, ২৪.৬ শতাংশ আসে খাল (Canal) থেকে এবং ১৩.৮ শতাংশ আসে অন্যান্য উৎস থেকে। কৃষিতে ভূ-গর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশে ভূ-গর্ভস্থ জলের প্রথম স্তর আগামী পনেরো বছরে ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর কারন যে সব অঞ্চলে চিরকাল গম, ভুট্টা, বাজরা জাতীয় কম পিপাসু ফসলের চাষ হত, সেখানে এখন ধান ও আখের চাষ হচ্ছে। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি অবলম্বনের মাধ্যমে আশা করা যায়, জলের সমস্যা রয়েছে যে সকল অঞ্চলে সেখানে ফসল চাষে কৃষকদের কিছুটা সুরাহা হবে।
আরও পড়ুন - Onion Disease – বর্ষাকালীন পেঁয়াজের রোগ নিয়ন্ত্রণ করুন বৈজ্ঞানিক উপায়ে