Onion Disease – বর্ষাকালীন পেঁয়াজের রোগ নিয়ন্ত্রণ করুন বৈজ্ঞানিক উপায়ে

পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদীয়া প্রভৃতি জেলায় ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ চাষ হয়। চাষে লাভ করতে হলে রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজ আমরা এই প্রবন্ধে পেঁয়াজের রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে চলেছি।

KJ Staff
KJ Staff
Onion Disease Management
Disease (Image Credit - Google)

পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব ‌ও পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদীয়া প্রভৃতি জেলায় ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ চাষ হয়। চাষে লাভ করতে হলে রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজ আমরা এই প্রবন্ধে পেঁয়াজের রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে চলেছি।

) বেগুনী ঝলসা রোগ (Blast Disease)

বিজ্ঞানসম্মত নাম - অল্টারনেরিয়া পারি

সংক্ষিপ্ত বিবরণ - এটি একটি ছত্রাকঘটিত রোগ।

ক্ষতির লক্ষণ -

পাতার উপরে ছোটো ছোটো লম্বাটে বা ডিম্বাকৃতি ঝলসানো দাগ দেখা যায়। দাগগুলি বাদামী হয় ও দাগের মাঝে সাদাটে রঙ দেখা যায়। পরে দাগগুলি একসঙ্গে মিশে গিয়ে বড় হয়ে বেগুনী রঙ ধারন করে। আর্দ্র আবহাওয়ায় দাগগুলির উপরে বাদামী-কালো রঙের ছত্রাকের রেণু জন্মায় ও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত পাতা গুলি ডগা থেকে শুকিয়ে যায়। ঝলসা দাগ ফুলের ডাটি বা কলিতেও দেখা যায়। পেঁয়াজের ফলন কমে যায়।

নিয়ন্ত্রণ (Management) -

  • ৫ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি দিয়ে প্রতি কেজি বীজ অথবা থাইরাম ৭৫ ডব্লু.পি. ২ গ্রাম/লিটার জলে গুলে ভালোভাবে বীজ শোধন করুন।

  • জমিতে ভাল জলনিকাশী ব্যবস্থা করতে হবে ও গাছ বেশী ঘন হয়ে গেলে তা তুলে ফেলতে হবে।

  • মেটালাক্সিল+ম্যাঙ্কোজেব ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।

  • রোগের প্রকোপ বেশী হলে নিচের যে কোনো ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন-

  • হেক্সাকোনাজোল ৫ইসি ১.৫ মিলি; প্রোপিকোনাজোল ১ মিলি; ম্যাঙ্কোজেব ৭৫ডব্লু.পি. ২.৫ গ্রাম; ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম, ডাইফেনকোনাজোল ১ মিলি।

) পেঁয়াজের গোঁড়া কন্দ পচা -

বিজ্ঞানসম্মত নাম - ফুসারিয়াম অক্সিস্পোরাম

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি পেঁয়াজের একটি ছত্রাকঘটিত মাটিবাহিত রোগ।

ক্ষতির লক্ষণ -

গাছ বড় হলে কন্দ তৈরি হবার পরপরই গোড়ায় পচন ধরে। গাছের পাতা শুকিয়ে ঝুলে পড়ে। শিকড় গোলাপি রঙের হয় ও পচে যায়। গাছের গোড়া খুড়লে রস দেখা যায়। কন্দ নরম হয়ে ধীরে ধীরে পচে যায়।

নিয়ন্ত্রণ -

  • শস্য পর্যায় মেনে চাষ করতে হবে।

  • জমি তৈরির সময় ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ও নিমখোল জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

  • কারবেন্ডাজিম ১ গ্রাম বা ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

  • কপার অক্সি-ক্লোরাইড ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

) পেঁয়াজের তুলো (ডাউনি মিলডিউ) রোগ -

বিজ্ঞানসম্মত নাম - পেরোনোস্পোরা ডেসট্রাক্টর

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি বীজবাহিত ছত্রাকঘটিত রোগ। রোগাক্রান্ত কন্দ থেকে উৎপন্ন গাছ বেঁটে, বিকৃত ও ধূসর সবুজ রঙের হয়।

ক্ষতির লক্ষণ -

শুষ্ক আবহাওয়াতে পাতার উপর একটি শুকনো দাগ দেখা যায়। বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ বিস্তার লাভ করে। ধীরে ধীরে দাগগুলি বাড়তে বাড়তে সমগ্র পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। পুরোনো পাতা গুলিই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, পরে পাতার গোড়ায় পেঁয়াজের শল্কপত্রেও এই রোগের প্রভাব দেখা যায়। স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো কন্দ গঠিত হয়।

নিয়ন্ত্রণ -

  • জমিতে ভাল জলনিকাশী ব্যবস্থা করতে হবে।

  • মেটালাক্সিল+ম্যাঙ্কোজেব ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।

) গুদামজাত পেঁয়াজ পচা রোগ -

বিজ্ঞানসম্মত নাম- অ্যাস্পারজিলাস নাইজার

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি ছত্রাকঘটিত রোগ। আক্রান্ত পাতায় জলে ভেজা দাগ দেখা যায়। সল্কপত্রের মধ্যবর্তী স্থানে সাদা ছত্রাক জন্মায় এবং পরে কালো পাউডারের মতো আকার ধারণ করে।

ক্ষতির লক্ষণ-

পেঁয়াজ গুদামে তোলার পর থেকে পেঁয়াজের পচার লক্ষণ শুরু হয়। পেঁয়াজের খোসার স্তরে এই ছত্রাকটি বড়ো হয় এবং সময়ের সাথে সাথে পরিমাণে বাড়ে। শল্কপত্রের উপরের স্তর বিবর্ন হয়ে যায় ও পেঁয়াজের স্বাদ বিস্বাদ হয়। তখন সেটি বাজারে বিক্রির অযোগ্য হয়ে ওঠে।

নিয়ন্ত্রণ-

  • ফসল তোলার ১৫-২০ দিন আগে সাধারণ লবন ১০০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।

  • পেঁয়াজ তোলা, পরিবহন ও গুদামজাত করার সময় পরিচ্ছন্নতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ক্ষত সৃষ্টি হওয়া চলবে না।

  • গুদামজাত করার আগে যথাযথ প্যাকিং দরকার। ০-১° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ও ৭০-৭৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় গুদামে সংরক্ষণ করতে হবে।

) হলদে কুটে রোগ -

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- ইয়েলো মোজাইক ভাইরাসের কারণে এই রোগ হয়। এই রোগ জাবপোকার সাহায্যে ছড়ায়।

ক্ষতির লক্ষণ- পেঁয়াজের পাতা এবড়ো-খেবড়ো হয়ে যায়। হলুদ সবুজ লম্বাটে দাগ দেখা যায়। পরে গোটা পাতা হলদে হয়ে যায়।

নিয়ন্ত্রণ-

  • কুটে রোগে আক্রান্ত কন্দ কখনই ব্যবহার করা চলবে না। রোগ মুক্ত কন্দ লাগাতে হবে।

  • জাবপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটনাশক ইমিডাক্লোপ্রিড ১মিলি/৫ লিটার বা ডাইমিথোয়েট ৩০% ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।

আরও পড়ুন - Onion Pest Management – বর্ষাকালীন পেঁয়াজের উন্নত জাত ও কীট নিয়ন্ত্রণের উপায়

) চারার ধসা রোগ -

সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।

ক্ষতির লক্ষণ- বীজতলায় কচি চারার ডগা অংশ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়। চারা কমজোরি হয় ও পরবর্তীতে চারা মারা যায়।

নিয়ন্ত্রণ-

  • এই রোগ দেখা মাত্র স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন দ্রবন ১ গ্রাম ১০ লিটার জলে গুলে আঠার সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন - Organic Manure – সহজ পদ্ধতিতে কীভাবে বানাবেন জৈব সার, রইল খুঁটিনাটি

Published On: 27 June 2021, 05:48 PM English Summary: Control the disease of monsoon onion in a scientific way

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters