খারিফ মরসুম (Kharif Season) মানেই বর্ষার প্রবেশ, আর বৃষ্টির স্নিগ্ধ জলে কৃষকদের আমন ধানের চাষ। তবে এই সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্র বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই কৃষকদের খারিফ মরসুমে ধান চাষে যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বৈজ্ঞানিকরা।
কীভাবে শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ করবেন, এর সুবিধাই বা কি? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে অনেকগুলি সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন - ফলন প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়,ডুবিয়ে সেচ না দেওয়ার কারনে ৩৫-৫০ শতাংশ কম জল লাগে, গুছিতে একটা করে লাগানোর দরুন প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ কম বীজ লাগে, এই চাষ পদ্ধতিতে বড় দানা ও বেশী খড় পাওয়া যায় সর্বোপরি এই পদ্ধতিতে সব জাতের ধান চাষ করা যায়। স্বল্প কথায় শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে আলোচনা করা হল।
শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ (Sri technique aman paddy cultivation)-
এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বিঘা প্রতি ৭৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি বীজ লাগে, যা কিনা প্রচলিত চাষ পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম। প্রচলিত চারা তৈরীর পদ্ধতি থেকে এক্ষেত্রে সামান্য কিছু পার্থক্য আছে। বীজতলা সাধারনত ১০-১৫ মিটার লম্বা ও ১ মিটার চওড়া ও সুবিধামত উঁচু ও সমান হয়। দুটি বীজতলার মধ্যে অবশ্যই ১ ফুট চওড়া নালা রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে অল্প দিনের চারা মূল জমিতে লাগানো হয় তাই খেয়াল রাখতে হবে যাতে চারা তোলার সময় চারার শিকড়ে কোনো আঘাত না লাগে। সে কারণে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার বীজতলার বীজধান ফেলার আগে ও পরে দিতে হবে। সাধারনত ১ শতক বা ৪০ বর্গমিটার বীজতলার জন্য ৪ কুন্টাল জৈব সার ও শতকে ১ কেজি সর্ষে খোল ও ১কেজি নিম খোল ব্যবহার করতে হবে। বীজতলা তৈরীর সময় যদি সম্ভব উপরের ৪ ইঞ্চি মাটি সরিয়ে ফেলা যেতে পারে। পরবর্তীকালে তাতে ভালো করে গোবর সার মিশিয়ে বীজধান ফেলার পরে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে ।
বীজ ধান ফেলার সময় অনেক ফাঁকা ফাঁকা বীজ ফেলতে হবে। তাহলে চারা তোলার সময় সুবিধা হবে। বীজতলা মুল জমির কাছাকাছি রাখা বিশেষ প্রয়োজন, যাতে চারা তোলার অল্প সময়ের মধ্যে তা যেন মূল জমিতে রোপন করা যায়। বীজতলাতে প্রতি শতকে প্রয়োজন ভিত্তিক এ ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭৫০ গ্রাম এস.এস.পি. ও ২৫০ গ্রাম এম.ও.পি. সার দিতে হবে।
অধিক ফলন (High yield) –
“শ্রী” পদ্ধতিতে ভালো ফলনের জন্য অন্তবর্তী পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে মূলত সেচ প্রয়োগ ও আগাছা নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রচলিত চাষের ন্যায় এখানে সেচ ডুবিয়ে দেওয়া হয় না। এখানে পর্যায়ক্রমে জমি শুকনো ও ভেজা রাখা হয়। তাই আমন মরসুমে মূলতঃ উঁচু জমি যেখানে জল বার করা সম্ভব, সেখানে এই পদ্ধতি ভালো ভাবে করা যেতে পারে। বেশী দূরত্বে চারা লাগানোর দরুন প্রথম দিকে আগাছা উপদ্রব পরিলক্ষিত হয়।
মোট ৩-৪ বার ১০-১২ দিন পর নিড়ান যন্ত্র-এর মাধ্যমে আগাছা তুলে তা আবার মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। নিড়ান যন্ত্র চালানোর আগের দিন একটু জল দিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন। অনেকাংশে প্রাথমিক অবস্থায় আগাছা দমনের জন্য উইডার যন্ত্রের চালানোর সমস্যা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে রাসায়নিক আগাছানাশক ঔষধ প্রোটিলাক্লোর ৩০.৭ ই.সি ১৩৫ মিলি প্রতি বিঘা রোয়ার ১-৩ দিন পর ব্যবহার করলে প্রথম দিকে কার্যকরী ভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আরও পড়ুন - Endangered Fish – হারিয়ে যাওয়া মাছের চাষ করে আয় করুন দ্বিগুণ অর্থ
বেশী দূরত্বে লাগানোর জন্য “শ্রী” পদ্ধতিতে রোগ পোকার উপদ্রবও কম হয়। “শ্রী” পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় সামান্য কম সময় লাগে। লক্ষ্য করা গেছে, এই চাষে গাছের পাশকাঠির সংখ্যা বেশী, শীষ লম্বা লম্বা এবং দানা বড় বড় হয়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রচলিত চাষের তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ ফলন বেশী হয়।
ড.কিরনময় বাড়ৈ (বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও প্রধান, হাওড়া কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া)
আরও পড়ুন - Wetland Farming: জলাভূমিতে কৃষিকাজ ও তার গুরুত্ব