কৃষিজাগরন ডেস্কঃ শণ একটি অর্থকারি ফসল যা শিম্বগোত্রৌয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত এবং প্রাকৃতিক তন্তুর উৎস৷ এই গাছের ইংরেজী নাম ‘সানহেম্প’ (sunnhemp), ‘ইন্ডিয়ান হেম্প’ (Indian-hemp), ‘মাদ্রাজ হেম্প’ (madras-hemp) এবং ‘ব্রাউন হেম্প’(brown hemp)৷ শণের তন্তু তথা বাস্ট ফাইবার হলুদ, মোটা, শক্তিশালী এবং টেকসই যা দড়ি, সুতো, মাছ ধরার জাল, বিশেষ প্রকারের কাপড় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ৷
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ ও ব্রাজিল এই ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে৷ ভারতের মধ্যে মহারাষ্ট্র, ওডিশা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ এই ফসল উৎপাদনে অগ্রগণ্য৷ পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদা ও নদীয়া জেলায় এই ফসল চাষ করা হয়ে থাকে৷ অনান্য শিম্বগোত্রৌয় ফসলের তুলনায় শণের নাইট্রোজেন আবদ্ধ করার ক্ষমতা সবথেকে বেশি (প্রতি হেক্টরে ৫০ থেকে ৬০ কেজি), তাই এটি একটি উৎকৃষ্ট সবুজ সার জাতীয় ফসল হিসাবেও ব্যবহৃত হয়৷
আরও পড়ুনঃ এবার রাজ্যেও লাম্পি ভাইরাসের হাতছানি, আক্রান্ত ২
শণ চাষে প্রয়োজনিয় জলবায়ু ও মাটি
এটি একটি ছোট দিনে ফুল দানকারী ফসল, তবে বড় দিন উদ্ভিদের বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল৷ গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে ফসলটি ভাল জন্মাতে পারে৷ এটি ২৩-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সীমার মধ্যে এবং ৪০ থেকে ৫০ সেমি বৃষ্টিপাতের তারতম্যের মধ্যে ভালভাবে বিকাশ লাভ করে৷ ভারতের উত্তরের রাজ্যগুলিতে বর্ষাকালে (খারিফ) এবং দক্ষিণাঞ্চলে, যেখানে শীতের প্রভাব কম, সেখানে শীতকালেও (রবি) ফসলটি উৎপাদন করা যায়৷
জমি তৈরি করবে কিভাবে
জমিতে ২ থেকে ৩টি লাঙল দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে মই দিতে হবে৷ বীজের উপযুক্ত অঙ্কুরোদগমের জন্য বীজ বপনের সময় মাটির আর্দ্রতা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ থাকা আবশ্যক৷
বীজবপনের পদ্ধতি
ফসল সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ সেমি × ৫ থেকে ১০ সেমি ব্যবধানে চাষ করা যায়, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ উৎপাদনের জন্য ৩০ × ১০ সেমি দুরত্ব বজায় রেখে ২ থেকে ৩ সেমি গভীরতায় বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়৷
আরও পড়ুনঃ শণপাট তন্তু উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি
সারের ব্যবহার বা সার প্রয়োগ
বীজের ফলন বাড়ানোর জন্য নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং পটাশ (N:P2O5:K2O) হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ২০, ৪০ এবং ৪০ কেজি হারে প্রয়োগ করা অপরিহার্য৷ সম্পুর্ণ পরিমাণ নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ বীজ বপনের সময় প্রয়োগ করা উচিৎ৷
সেচ পদ্ধতি
শণ সাধারণত প্রচন্ড খরা সহ্য করতে পারে না, এই শস্য বেশিরভাগই বৃষ্টিনির্ভর ফসল হিসাবে চাষ করা হয়৷ তাই বপনের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন, তবে ফসলের প্রাথমিক বৃদ্ধির পর্যায়ে কোনো সেচের প্রয়োজন হয় না৷ শণচাষের জন্য ৪০ থেকে ৫০ সেমি. জলের প্রয়োজন৷ কিন্তু বীজ স্থাপন এবং শুঁটি পরিপক্কতার পর্যায়ে দুই থেকে তিনটি হালকা সেচের ব্যবস্থা করা হলে বীজের ফলন বেশি পাওয়া যায়৷