আমরা কম বেশি সকলেই ‘মিনিকেট ‘ নামের সাথে পরিচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন বাজারে মিনিকেট বলে যে চাল বিক্রি হয় সেগুলি আসল মিনিকেট চাল নয়। কারণ এ নামে কোনো ধান নেই। তাহলে প্রশ্ন হল যদি মিনকেট নামে কোন ধান না থাকে তাহলে মিনিকেট চাল উৎপাদন হয় কি করে ? । আসলে বিজ্ঞানীরা এই নামে কোনো ধান আবিষ্কারই করেনি। ভিন্ন ভিন্ন ধানের সরু চালকে বাজারে ‘মিনিকেট’ নাম দিয়ে বিক্রি করেন দোকনদাররা । কেননা ‘মিনিকেট’ শব্দটি ক্রেতাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
সাধারন মানুষের ধারনা হল,মিনিকেট চাল একটি বিশেষ জাতের ধান থেকে পাওয়া যায়। এই চাল দেখতে শরু,চকচকে হয় ফলে ক্রেতারা সহজেই এই চালের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু বাস্তবে মিনিকেট নামে কোন ধান বিশ্বের কোথাও চাষ করা হয় না । দেশেও মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্তিত্ব নেই। বাজারে মিনিকেট নামে যে চাল বিক্রি হচ্ছে তা আদতে মিনিকেট নয়।
মূলত বিআর-২৬, বিআর-২৮, বিআর-৩৩, ব্রি-৪৩, ৪৮ থেকে ৯৮ পর্যন্ত উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান এবং কল্যাণী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, আইআর-৫০, জাম্বু ও কাজললতা ধানের চালকে মিনিকেট চাল হিসেবে চালানো হচ্ছে। এসব ধানের চালকে মিল পর্যায়ে গ্রেডিং ও মিক্সড গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে পলিশ করে চকচকে করা হয়।
আসলে মিনিকেট কোনো ধানের জাত নয় । মিনিকেট আসলে একটি ব্রন্ড। রাইসমিলের মালিকরা সম্পূর্ন বানিজ্যিক লাভের উদ্দ্যেশে মিনিকেট নামে বিভিন্ন চালকে বাজারজাত করে। মধ্যবিত্ত বাঙালির মধ্যে এই চালের জনপ্রীয়তা শীর্ষে। মোটা চালের পরিবর্তে মানুষ শরু চাল খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই চালকে প্রসেস করে মিনিকেট করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ শুরু ১৫-১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণ! রাজ্যে স্কুল বন্ধ হলেও স্কুলেই চলবে টিকাকরণ প্রক্রিয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, মিনিকেট চাল নিয়ে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে সেটা ক্রেতারা বুঝতেও পারছেন না । এতে ক্রেতারা মিনিকেট চাল কিনতে বাড়তি দাম দিচ্ছে কিন্তু ভোক্তাদের এতে কোনো লাভ হচ্ছে না বরং এই সব পলিশ করা চাল ক্ষতির কারন হয়ে দারাচ্ছে ।
যেহেতু মিনিকেট চাল অস্তিত্বহীন, তাই এই নামে চাল বাজারজাতকরণও অবৈধ। এ ধরনের ব্র্যান্ডিং দেশে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করতে হবে। ১৯৯৫ সালের দিকে ভারতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ওই সময় দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষকদের নতুন উদ্ভাবিত ‘শতাব্দী’ জাতের ধানবীজ ছোট ছোট প্যাকেটে করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ শুরু করে। ওই কর্মসূচিতে ধানবীজের সঙ্গে বালাইনাশকসহ আরও কিছু কৃষি উপকরণ (কিট) দেয়া হতো। এ কারণে প্যাকেটটির নাম রাখা হয় ‘মিনি কিটস’।
আরও পড়ুনঃ ফের লকডাউনের সম্মুখীন রাজ্য,দেখে নিন করোনার নয়া বিধিনিষেধ
‘মিনিকেট’ শব্দটা এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘মিনি’ ও ‘কিট’ থেকে। মিনিকেট আদতে কোনো ধানের ভ্যারাইটি নয়। এটি হচ্ছে এক ধরনের কর্মসূচি, যেখানে ভারত সরকার মিনি প্যাকেট অর্থাৎ দুই কেজি ধানের বীজের প্যাকেট কৃষকদের উপহার হিসেবে দিত।সেই থেকে উৎপত্তি হয় মিনিকেট নামের চাল।