বর্তমান আধুনিক যুগে এক চিলতে সবুজের দেখা মেলা বেশ কষ্টসাধ্য | বিশেষত শহরাঞ্চলে, চারিদিকে যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, শুধু কংক্রিটের জঙ্গল। আধুনিক, নান্দনিক ও সুচারু নক্সায় তৈরী বড় বড় ফ্ল্যাটবাড়ি ও তার রঙের চাকচিক্য অনেক ক্ষেত্রে আমাদের আকৃষ্ট করলেও ‘সবুজ’, তা যেন এখন দুর্লভতম বস্তুগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবুজ মনোরম বাগানে সময় কাটালে শুধু আমাদের মন ভালো থাকে তাই না বরং একটানা কম্পিউটারের সামনে থেকে ওঠার পর চোখেরও সাময়িক শান্তি | এই বড় বড় বিল্ডিং-র মাঝে আপনি হয়তো ভাবছেন কিভাবে এক সুন্দর বাগান তৈরী করা যায়? এটার একমাত্র উপায় হলো উল্লম্ব বাগান (Vertical gardening) |
উল্লম্ব বাগান কি(What is Vertical Garden)?
সাধারণত, এটিও প্রাথমিকভাবে বাগান তৈরীর একটি পদ্ধতি, তবে বাকি চিরাচরিত পন্থার থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানে কয়েকটি ধাপ বা তলায় একটি গাছের ওপর আরেকটি গাছ লাগিয়ে একটি লম্বালম্বি বাগান তৈরী করা হয়। কিন্তু বিষয়টি খুব সহজ। ধরা যাক, বাড়ির বারান্দায় একটি টবে একটি গাছ বড় হচ্ছে। ঠিক তার উপরেই ছোট্ট একটি পাত্রে আরকটি গাছ ঝুলিয়ে দেওয়া হল। এটিও কিন্তু ‘উল্লম্ব বাগান’-এর একটি উদাহরণ। যদি কম খরচে করতে চান তারও উপায় আছে | সেক্ষেত্রে জুতো রাখার পুরনো প্লাস্টিকের র্যাকে মাটি ভরে যদি কিছু বিরুৎ জাতীয় গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটিও একটি ‘উল্লম্ব বাগান’ হয়ে যাবে। আবার অনেকসময় কম জায়গার কারণে মেঝেতে গাছ রাখার সমস্যা হলে বারান্দার গ্রীলে একটির উপর আরেকটি টব ঝুলিয়েও ‘উল্লম্ব বাগান’ তৈরী করা যায়। টবের বদলে যদি মগের নধ্যে গাছ লাগিয়ে মগের হাতলটা গ্রীলে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে সুবিধা মতো স্থান পরিবর্তন করার ক্ষেত্রেও কোন বাঁধা থাকে না।
আরও পড়ুন - Rabbit rearing at home: জেনে নিন বাড়িতে খরগোশ পালনের পদ্ধতি
গাছ নির্বাচন(Tree selection):
উল্লম্বভাবে শাকসব্জী বাড়ান। ডাল এবং মটরশুটি প্রাকৃতিকভাবে খুব সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে এবং সুন্দর ফুল দেয়। টরশুটি বড় করুন, যা হামিংবার্ড আকর্ষণ করে এবং লাল এবং সাদা ফুল তৈরি করে।টমেটো রোপণ করুন যা সুস্থ থাকতে এবং প্রচুর পরিমাণে উত্পাদন করতে উল্লম্বভাবে বৃদ্ধি পায়। কিছু ধরণের স্কোয়াশও উল্লম্বভাবে বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিভিন্ন শাকসবজি যেমন, লেটুস, ব্রকোলি, লালশাক, পালংশাক, ফরাস বিনস, লঙ্কা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি দিয়েও ‘উল্লম্ব বাগান’ বানানো যায়। এতে যেমন পরিবারের সদস্যদের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়, তেমনি বাহারি রঙ-বেরঙের সবজি মনের মধ্যে এক অনাবিল স্ফূর্তির সঞ্চার করে। ঘরের ভিতর, লিভিং রুম বা অফিসেও চাইলে ছায়াবান্ধব পাতাবাহারি গাছ যেমন। মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোকেশিয়া, ফার্ন, স্পাইডার লিলি, অ্যান্থুরিয়াম, বোটলিলি, ড্রাসিনা, মনষ্টেরা, রিও প্রভৃতি গাছ দিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন বানিয়ে ভিতরের দেওয়ালগুলিকে সাজিয়ে তোলা যায়।
উল্লম্ব বাগান তৈরী পদ্ধতি(Vertical garden making process):
একটি উল্লম্ব উদ্যানের জন্য ভালভাবে শুকানো মাটি এবং ছায়া এবং রোদের একটি ভাল সংমিশ্রণ প্রয়োজন।সাধারণত প্রতিটি টবে কম থেকে মাঝারি পরিমাণ মাটি রাখা হয়। স্বভাবতই মাটি যতটা সম্ভব উর্বর হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই মিডিয়াটি দোঁয়াশ মাটি ও কম্পোস্ট সারের ১:১ মিশ্রণ দিয়েই বানানো যেতে পারে। তবে কোন গাছ যদি বেলে- দোআঁশ মাটিতে চাষের উপযোগী হয়, তবে তাতে সেই মাটিই ব্যবহার করা উচিৎ। আবার ‘উল্লম্ব বাগান’টি আয়তনে বড় হলে ও সেকারণে অতটা পরিমাণ মাটি জোগাড় করা অসম্ভবপর হলে সেক্ষেত্রে মাটির পরিবর্তে কোকোডাষ্ট, পার্লাইট, পিটমস, ভার্মিকুলাইট, কেঁচোসার, স্ফ্যাগনাম মস ইত্যাদির সাহায্যে অথবা অর্ধেক কম্পোষ্ট ও অর্ধেক কোকোডাষ্ট মিশিয়েও গ্রোয়িং মিডিয়া তৈরী করা যায়। তবে গ্রোয়িং মিডিয়া বানানোর সময় কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন |
জল সরবরাহ:
উল্লম্ব বাগানে ব্যবহৃত গাছ লাগানোর পাত্রগুলি আকারে ছোট হওয়ায় এগুলির জল ধারণ ক্ষমতা কম হয়। তাই প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী জল সরবরাহ করা উচিৎ। আবার খুব বড় মাপের উল্লম্ব বাগান তৈরী করতে গেলে, সেক্ষেত্রে স্স্বয়ংক্রিয় বিন্দু সেচ (Drip irrgation) পদ্ধতি চালু করে, তার সাথে টাইমার কিংবা সেন্সর সেট করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা সম্ভব। এছাড়াও বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে (Rain Water Harvesting) সেই জলও ভার্টিক্যাল গার্ডেনে সেচের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূর্যের আলো:
একটি গাছের খাবার তৈরীতে জল, মাটি থেকে আসা পুষ্টি ও সূর্যালোক এই তিনটি উপাদানই সমান ভূমিকা পালন করে। এই পদ্ধতিতে বাগান করলে যেহেতু গাছগুলি একটির উপর আরেকটি থাকে, তাই দিনের মধ্যভাগ সূর্যালোক নিচের দিকের গাছগুলিতে পৌঁছতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গাছগুলিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেন দিনের শুরুর ভাগেই সেগুলি পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায়।
বাগানের পরিচর্যা:
উল্লম্ব বাগান -এ যেহেতু পরিচিত, দেশীয় ও সহজলভ্য গাছগুলি রোপণ করা হয়, তাই এর যত্ন ও পরিচর্যা খুব একটা কঠিন নয়। পরিমিত জল ও প্রতি ১-২ মাস অন্তর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার (সার), অনুখাদ্য ও ভিটামিন সরবরাহ করলেই গাছ সবুজ ও সতেজ থাকে। নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে শুকিয়ে অথবা হলুদ হয়ে যাওয়া পাতা ছেঁটে ফেলা উচিৎ।এইভাবে উল্লম্ব বাগান তৈরী করে আপনিও আপনার ঘরের শোভাবৃদ্ধি করতে পারেন |
আরও পড়ুন - Successful farming tips: সফল কৃষিকাজের চাবিকাঠি কি? জেনে নিন কিছু টিপস