সাধারণত বোয়াল (Wallago Attu fish) একটি রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ | তবে, বাণিজ্যিকভাবে এ মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া যেতে পারে এবং পুকুরে এই মাছ চাষ করা হয় সহজেই | তবে, এ মাছ চাষের জন্য প্রজনন পদ্ধতি ও পোনা পালন পদ্ধতি জানতে হবে সঠিকভাবে |
বোয়ালের প্রজনন সময়(Breeding time):
বোয়াল মাছ মধ্য এপ্রিল থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। প্রজননের সময় খুব সহজেই পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে শনাক্ত করা যায়।
প্রজননের জন্য স্ত্রী ও পুরুষ মাছ নির্বাচন:
প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেট ভর্তি ডিম থাকে আর পুরুষ মাছের পেট সাধারণ মাছের মত থাকে। তাছাড়া পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিলে সাদা মিল্ট বেরিয়ে আসে। এ থেকে সহজেই বোয়ালের পুরুষ ও স্ত্রী মাছ শনাক্ত করা যায়।
প্রজনন পদ্ধতি(Breeding process):
বোয়াল মাছকে পি.জি. (পিটইটারী গ্ল্যান্ট) হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করলেই ডিম দিয়ে থাকে। প্রথম ডোজের সময় শুধুমাত্র স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। ডোজের মাত্রা ২ মি:গ্রা: কেজি। ৬ ঘন্টা পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ৪ মি: গ্রা:/ কেজি।
আরও পড়ুন -Orchid Farming: এই ফুল চাষে আপনিও হবে লাভবান, জেনে নিন অর্কিডের চাষপদ্ধতি
বোয়াল মাছকে পি.জি হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে আলাদা আলাদা হাউজে রাখতে হবে। দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘন্টা পর সাধারণত বোয়াল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। মাছের ডিম পাড়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যখনই ২/১টি ডিম বের হতে দেখা যাবে তখনই মাছগুলোকে একে একে হাউজ থেকে তুলে আনতে হবে।
এবার স্ত্রী মাছের পেটে আস্তে করে চাপ দিলেই ডিম বের হতে থাকবে। স্ত্রী মাছের ডিম বের করার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিয়ে মিল্ট বের করে ডিমের উপর পাখির পালক দিয়ে ভালভাবে মিশাতে হবে। এরপর ডিমগুলোকে ২/৩ বার বিশুদ্ধ জলে পরিষ্কার করে ৩/৪ ইঞ্চি উচ্চতার জলের হাউজে রাখতে হবে। এভাবে ২০/২২ ঘন্টার মধ্যেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে।
বোয়াল মাছের চাষ পদ্ধতি(Farming process):
সাধারণত বোয়াল মাছ এককভাবে চাষ করা যায় না। একটা আরেকটাকে খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত আর বাকি থাকে না। তা ছাড়া কৃত্রিম খাবার না খাওয়ায় মাছগুলো খুব একটা বড়ও হয় না। তাই এদেরকে বিভিন্ন মাছের সাথে মিশ্র চাষ করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। মজুদ ঘনত্ব মিশ্রচাষে প্রতি ৫ শতাংশে ১টি মাছ। মাছ ছাড়ার সময় একটা দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যে, বোয়ালের পোনা যেন কোন অবস্থাতেই পুকুরের অন্যান্য মাছের আকারের সমান না হয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের ওজন যখন ১৫০/২০০ গ্রাম ওজন হবে সেখানে ২ ইঞ্চি সাইজের বোয়ালের পোনা ছাড়তে হবে। আর তা না হলে বোয়াল দ্রুত বড় হয়ে অন্যান্য মাছ খেয়ে ফেলতে পারে।
পোনা লালন-পালন পদ্ধতি:
বোয়াল মাছের পোনা খুবই রাক্ষুসে স্বভাবের। ডিম থেকে ফুটার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই একটি আরেকটিকে খেতে শুরু করে। দেখা গেছে যে, অন্যান্য মাছের রেনু পোনা ডিমের কুসুম বা ক্ষুদ্র আকৃতির প্ল্যাংকটন খেলেও বোয়ালের পোনা ডিমের কুসুম বা কোন ধরনের প্ল্যাংকটন খায় না। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে জীবিত অবস্থায় মাছের রেনু বা পোনাকে খেতে দিতে হয়। এভাবে ৮/১০ দিনেই ২ ইঞ্চি সাইজের পোনায় পরিণত হয়।
আরও পড়ুন - Jersey Cow Farming: কিভাবে পালন করবেন জার্সি জাতের গরু? জেনে নিন উপায়