রঙিন মাছকে দেখতে কার না ভালো লাগে। সৌখিনতার খাতিরে বহু মানুষ এই জাতীয় মাছগুলি নিজস্ব একোরিয়ামে পোষেন। অফিস-কাছারি, চিড়িয়াখানা, স্টেশন সরকারি বহু জায়গায় শোভাবর্ধন করার খাতিরে রঙিন মাছ জলাশয় অথবা একোরিয়ামে পোষা হয়। রঙিন মাছ মূলত দুই শ্রেণীর দেখতে পাওয়া যায়। গাপ্পি, প্লটি, মলি, সোর্ডটেল ইত্যাদি মাছের সরাসরি বাচ্চা দেয়। আবার বার্ব, গোরামি, গোল্ড ফিশ প্রভৃতি রঙিন মাছেরা ডিম দেয়। সরাসরি বাচ্চা যেইসব মাছেরা দেয় তাদের বাজারমূল্য তুলনামূলক ভাবে কম। যেইসব মাছের ডিম ফেটে বাচ্চা বের হয় তাদের বাজার মূল্য বেশ ভালো। গোল্ড ফিশের ডিম ফেটে বাচ্চা বের হয়। ফলে গোল্ড ফিশের বাজারে দাম ভালোই পাওয়া যায়। গোল্ডফিশের বাচ্চাও মার্কেটে সহজলভ্য হওয়ায় সাথে সাথে এর চাষ করতে বেশি বিনিয়োগ করতে হয় না বলে, বর্তমানে অনেকেই গোল্ডফিশের চাষ করতে শুরু করেছেন। বাড়িতে সঠিক আকারের চৌবাচ্চা থাকলেই হলো। সহজেই করা যাবে রঙিন মাছের চাষ
চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষ (Colured fish cultivation)
৮ ফুট, ৬ ফুট, ২.৫ ফুট আয়তনের সিমেন্টের চৌবাচ্চা বাড়িতে থাকলেই হলো, নাহলে এই আয়তনের চৌবাচ্চা বানিয়ে নিতে হবে। আংশিক জল নির্গমনের জন্য ১ইঞ্চি সাইজের টুলু পাম্পের পাইপ এই চাষে দরকার পড়বে। চৌবাচ্চায় ১ ইঞ্চি সাইজের গোল্ডফিশের বাচ্চা ৪০০ থেকে ৫০০ এর মতন ছেড়ে দিতে হবে। ডিমপোনা সাইজের হলে ৯০০-১০০০টি সহজে ছাড়া যাবে।
রঙিন মাছের খাদ্য (Food for Coloured fish)
রঙিন মাছের চাষে মাছকে নিয়মিত খাবার দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় মেনে মাছকে খাবার দেওয়া উচিত। অতিরিক্ত খাবার রঙিন মাছকে কখনোই দেওয়া যায় না। কারণ এরা খাবার দেওয়ার ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে খাবার খেয়ে ফেলে। বেশি পরিমানে খাবার দিলে সেই খাবার নষ্ট হয়। জলে পচতে থাকে সেই অতিরিক্ত খাদ্য। যার ফলে জল দূষিত হয়ে পড়ে সাথে সাথে জলের থাকা রঙিন মাছও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই রঙিন মাছকে পরিমিত মাত্রায়, যতটুকুনি দরকার ততটাই দেওয়া উচিত। উদ্ভিদ জাতীয় প্লাঙ্কটন এবং জুপ্লাঙ্কটন জাতীয় খাদ্য মাছকে খাওয়ানো উচিত। অথবা হাতে গড়ে তৈরি করা নকল খাদ্য মাছকে খাওয়ানো যায়। চাল, গমের গুঁড়ো, ছাতু, মাংসের টুকরো, ইস্ট প্রভৃতি সহযোগে মন্ড বানিয়ে নিয়ে পরে তা গুঁড়ো করে দানা খাদ্যে পরিণত করা যায়।
আরও পড়ুন: Hilsa Fish Farming: ইলিশ মাছ চাষ পদ্ধতির কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
এই মাছ চাষ করে সহজে লাভ করা যায়। এই মাছ চাষে তেমন পরিশ্রমেরও কিছু নেই, শুধু বাস্তব বুদ্ধি প্রয়োগ করে চাষ করলেই হল। শুধু এই মাছ চাষে খেয়াল রাখতে হবে, জল যেন পরিষ্কার থাকে, আর মাছের যেন রোগ না হয়. যদি মাছের অসুখ ধরা পড়ে, তবে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
দেশ তথা রাজ্যে রঙিন মাছের চাষ দিনকে দিন বাড়ছে। কম বিনিয়োগে দ্বিগুন লাভের আশায় বহু মানুষ এই চাষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। বহু বেকার তরুণ তরুণী, এই রঙিন মাছ চাষে উন্নতি করে ঘরে লক্ষ্মী এনেছেন। স্বনির্ভরতা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। গ্রাম বাংলা ও শহরাঞ্চলে এই রঙিন মাছ চাষ নতুন রোজগারে এক দিশা দেখাতে পারে। রঙিন মাছ চাষ যে মৎস্য বাণিজ্যে অধিক অর্থের আমদানি করছে তা অস্বীকারের কোনও উপায়ই নেই।
আরও পড়ুন: Fish Preservation - চাষে অতিরিক্ত লাভের জন্য মাছ দীর্ঘক্ষণ কি করে ভালো রাখবেন, জেনে নিন সহজ উপায়