বায়ুশ্বাসী সমপ্রজাতির দুটি দেশীয় মাছ – মাগুর ও শিঙি অতি পরিচিত এবং কিছুদিন আগে পর্যন্তও বিভিন্ন খাল, বিল, পতিত জলাশয়, জলাধান জমিতে যথেষ্ঠ সংখ্যায় পাওয়া যেত। হয়ত বা সেই কারনেই এদের চাষ পদ্ধতি খুব একটা প্রচলিত হয়নি। মাছ দুটিই বেশ সুস্বাদু ও উচ্চ খাদ্য়গুন- সম্পন্ন যা শৈশব থেকে বার্ধক্য যে কোন বয়েসের মানুষের পক্ষে সহজ পাচ্য আর ওষধি গুন সম্পন্ন খাদ্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে এই প্রাপ্তির চিত্রটি কিন্তু পাল্টে গিয়েছে ও দুটো মাছই আজ বিপন্ন – প্রায় ।
দুএকটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ছাড়া মাগুর-শিঙ্গি চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন এমন চাষীর সংখ্যা হাতে গোনা যায়। অথচ এদের প্রনোদিত প্রজনন ও ধানী উৎপাদন পদ্ধতি বেশ কিছুদিন আগেই জানা গিয়েছে। যথেষ্ঠ সম্ভাবনা থাকা সত্বেও এখনও যেটুকু পাওয়া যায় তার সবকটাই প্রকৃতি জাত চাষ থেকে । বহুমূল্য এই মাছদুটির সংরক্ষনের সঙ্গে সুষ্ঠ প্রজনন ও চাষ পদ্ধতির সরলীকরন বিশেষ প্রযোজন । প্রজননের সরলীকরন দরকার এই কারনে যে প্রতিবারই প্রজননের সময়ে পুরুষ মাছটিকে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয় শুধুমাত্র তার শুক্রানু সংগ্রহের জন্য যা দিয়ে স্ত্রীমাছের ডিম নিষিক্ত করা হবে।
এমনিতেই পুরুষ মাগুর স্ত্রী মাগুরের সমান সমান সংখ্যায় পাওয়া যায় না । ( যদিও বিজ্ঞানের নিয়মে সম সংখ্যায় হওয়ার কথা ) আর প্রতিবার পরিপক্ক পুরুষ মাছ থেকে শুক্রাশয় কেটে বার করে জীবিত শুক্রানু সংগ্রহ করতে হলেত সমস্য়ার জটিলতা শুধু বাড়বে আর চাষ পদ্ধতির সরলীকরন করা না গেলে উন্নয়ন বাধা প্রাপ্ত হবেই ও সর্বোপরি জিয়ল মাছ দুটির আস্বাদন ও পুষ্টির যুগলবন্দীকে জিইয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে ।
মাগুর ( দেশী মাগুর নামে বেশি পরিচিতি হচ্ছে ) Clarias batrachus পালনের দু-একটি অন্তরায় নিয়ে একটু উল্লেখ করতে চাই কেবল । দেশী মাগুরের ঘীটতি পূরনে দুটি প্রজাতির বিদেশী মাগুর আমাদের দেশে চলে এসেছে । একটি হল আফ্রিকান মাগুর অন্যটি থাই মাগুর । দুটির মধ্যে প্রথমটি মারাত্মক রকমের মাংসাশী ও শিকারী মাছ,দ্বিতীয়টিও উগ্রতার দিক থেকে একটু কম হলেও প্রায় একই স্বভাবের । ছোট অবস্থায় তিন ধরনের মাগুরই দেখতে একরকম । অনেকে গায়ের রং-এর কিঞ্চিত তারতম্য দিয়ে তফাৎ বোঝার বা বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু বেশী ক্ষেত্রেই তা ঠিক হয় না আর তাই চারা যোগাড় করতে গিয়ে এই নিষিদ্ধ মাছের চারা এনে পুকুরে ফেলেন আর দ্রুত বর্ধনশীল এই মাগুর অনতিবিলম্বে পুকুরের অন্য মাছ উদরস্থ করে চাষীর ক্ষতি করে চলে । চাষ করতে গেলে তাই ঠিকমত দেশী ও বিদেশী মাগুরের পার্থক্য জানা ও চেনা খুব জরুরী । এই প্রসঙ্গে জানাই –এদের মাথার খুলির আকার লক্ষ্য় করলে সহজেই তফাৎ বোঝা যাবে।
আরও পড়ুনঃ মাছ চাষের জন্য় ঋণ নেওয়া টাকায় তৈরি হয়েছে তেলেগু ফিল্ম,মামলা দায়ের ইডির
খুব ছোট অবস্থাতেও আতস কাঁচ এর সাহায্য় নিলে বা ক্যামেরাতে ছবি নিয়েও দেখা যেতে পারে । এই জায়গাটিতে ঘাটতি রয়ে গেছে- চাষীদের মধ্যে অর্থাৎ চাষীর প্রয়োজনের তুলনায় চারা যোগানের অপ্রতুলতা থেকে যায়। বিশেষ হ্যচারী যার সন্ধান প্রত্যেক ব্লকের এফ ই ও বা জেলায় এ ডি এফ ও / জেলার কে ভি কে-এর ফিসারী বস্তু বিশেষজ্ঞ যিনি আছেন তাঁর বা তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই অল্প সংখ্যায় হলেও সঠিক মানের চারা পাওয়া সম্ভব। এর পরের কাজগুলি অপেক্ষাকৃত সহজ ও সরল । দুটি মাছই বায়ুশ্বাসী হওযার কারনে জলের অক্সিজেনের ঘাটতিতেও অসুবিধা হয় না অর্থাৎ অগভীর ছোট পুকুর / ডোবা যেখানে ছমাস দুই থেকে তিন ফুট জল থাকে পতিত চাষ মহা পুকুর হলেও সম্ভব । যেখানে সাধারন ভাবে পোনা মাছের চাষ সম্ভব নয় বা পোনা মাছের আঁতুড় পুকুরের ভালভাবে চাষ সম্ভব এই মাছ দুটির । অনেক সময় পাট পচানো হয় এমন অগভীর নোংরা পুকুরেও এই মাছ চাষ করা যায়। কার্বন ডাই অক্সাইড / অ্যামোনিয়া বেশী থাকলেও চলবে। পরীক্ষামূলক ভাবে এই ধরনের জলাশয়ে সাধারন বাঁশের খাঁচা স্থাপন করে তাতেও খুব সুচারুভাবে মাগুর-শিঙ্গির চাষ সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ চিংড়ি মাছে মোড়োক চিন্তায় দিন কাটছে মাছ চাষিদের
প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৫০ টি দু থেকে তিন মাস বয়সের চারা ছাড়া যেতে পারে । চারা মজুতের আগে যা ১০ সেমি ওজনে ৮ গ্রামে মত হয় সাধারনত । এক লিটার জলে ১০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট দেওয়া দ্রবনে এক মিনিট করে এক মিনিটের আশঙ্কা কমে যায় । যেখানেই চারা ছাড়া হোক না কেন – দুএকটি পিভিসি পাইপের টুকরো তাদের জিরিয়ে নেবার মত আশ্রয় হিসাবে রাখা গেলে ভালো হয় । দৈর্ঘ্য মাপার জন্য চাষী উদ্ভাবিত চেরা বাঁশের মধ্যে স্কেল বসানো জায়গাটি বেশ সহজ ও সরল ।