অকাল বৃষ্টি কিংবা একটানা চড়া রৌদ্র, ঋতুর সময়কাল বর্তমানে অনিয়মিত পরিবেশের খামখেয়ালিপনায় আর পরিবেশদূষনে মাছের প্রজননে গভীর প্রভাব পড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কম বৃষ্টিপাতের ফলে হ্যাচারিতে মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।আর তাই এবার রাজ্যে প্রথম মাছের টিকা বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তাক লাগিয়ে দিল রাজ্যের মৎস্য দফতর। তার জেরে এগরা–১ নম্বর ব্লকের তিনটি মাছের হ্যাচারিতে উৎপাদিত হবে নিরোগ স্বাস্থ্যকর মাছ। মাছ চাষের ক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করল এগরা–১ নম্বর ব্লক মৎস্য বিভাগ। যদিও এই টিকা তৈরি হয়েছে ভুবনেশ্বরে।
কেন এই ভ্যাকসিনের প্রয়োজন? প্রজননের অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া ও তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে হ্যাচারিতে মাছ কৃত্রিম প্রজননে সাড়া দিচ্ছে না। পেটে ডিম এলেও ডিম ছাড়ছে না। মাছ সহজে রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে ও চাষিদের আয় কমে যাচ্ছে। মাছ চাষিরা যেমন সমস্যায় পড়েছেন তেমনি চিন্তিত দেশের বিজ্ঞানী মহল।আর এই সমস্যার সমাধানে আমাদের দেশের মৎস্য বিজ্ঞানী তৈরি করেছেন অভিনব “মাছের-টীকা” বা ভ্যাকসিন। নাম দেওয়া হয়েছে “সিফা-ব্রুড-ভ্যাক”।।
আরও পড়ুনঃ আজই শুরু করুন দুধের ব্যবসা, লাভ জানলে চমকে যাবেন!
কারা তৈরি করল মাছের টিকা?
স্বাস্থ্যকর মাছ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মাছের চারাপোনা (স্পন ও ফ্রাই) তৈরির মাধ্যমে, মাছের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রীয় মিঠাজল মৎস্য গবেষনা কেন্দ্র এই টিকা আবিষ্কার করেছে। এই গবেষণাকেন্দ্রটি ভুবনেশ্বরে। আর এই টিকার নাম ‘সিফা–ব্রুড–ভ্যাক’। এই টিকার প্রথম প্রয়োগ শুরু হল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা–১ নম্বর ব্লকের তিনটি মাছের হ্যাচারিতে। এই টিকা প্রয়োগ করলে মাছের ডিমের থেকে যে ডিমপোনা ও ধানীপোনা হয় তার বাঁচার হার বেশি। ব্রড স্পেকট্রামে রোগ হয় না। ফলে স্বাস্থ্যকর মাছের ফলন বেশি হয়।
মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহুর তত্ত্বাবধানে এগরার সাতখণ্ড গ্রামের উত্তম মিদ্যার বাটা, সরপুঁটি মাছ হ্যাচারিতে, বাগমারী গ্রামের কান্তু গিরির মাগুর শিঙি মাছের হ্যাচারিতে এবং অরুয়া গ্রামের জগন্নাথ আইচের রুই, কাতলা মাছের হ্যাচারিতে প্রজননক্ষম মাছের টিকাকরণ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ ধনী হতে চাইলে এই জাতের গরু পালন করুন, প্রতিদিন ৬০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেওয়ার ক্ষমতা
কী জানাচ্ছেন মৎস্য বিজ্ঞানী? গত ১০ অগষ্ট এগরা–১ নম্বর ব্লকে মাছের টিকা প্রয়োগ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এগরা–১ নম্বর ব্লকের মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু বলেন, ‘আধুনিক এই মৎস্য প্রযুক্তির সঙ্গে সরকারি সুফল মাছ চাষিদের মধ্যে যেমন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তেমনি নিরোগ মাছের উৎপাদনের মাধ্যমে বাজারে মাছের জোগান বাড়াবে।’ মাছের টিকাকরণ কর্মকাণ্ডকে ঘিরে এলাকায় মাছ চাষিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা হয়েছে। এখানে নৈহাটি, বাঁকুড়া–সহ অন্যান্য জেলার উৎসাহী মাছের হ্যাচারি মালিকরাও উপস্থিত ছিলেন।