সাম্প্রতিককালে তেলাপিয়া (Tilapia Fish Farming) মাছের মনোসেক্স পুরুষ জাতের পোনার চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ, তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রী জাতের চেয়ে পুরুষ জাতের উৎপাদনশীলতা তুলনামূলকভাবে ২০-৩০% বেশী। এ প্রেক্ষিতে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীরা ৯৮-১০০% মনোসেক্স পুরুষ জাতের পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে।
পুকুর প্রস্তুতি (Pond Creation) :
নার্সারী পুকুরের আয়তন ১০-২৫ শতাংশ এবং পানির গভীরতা ১ মিটার রাখা আবশ্যক
পুকুর শুকিয়ে সমস্ত রাক্ষুসে মাছ ও মৎস্যভূক প্রারী অপসারণ করতে হবে। নিষ্কাশন সম্ভব না হলে মিহি ফাঁসের জাল টেনে অথবা মৎস্য বিষ (প্রতি শতাংশে ৪০-৫০ গ্রাম রোটেনন) প্রয়োগ করে অবাঞ্চিত প্রাণী দূর করতে হবে।
হরমোন মিশ্রত খাদ্য প্রয়োগের জন্য হাপার আয়তন ৮-১০ ঘনমিটার হতে পারে। প্রতি ঘন মিটার হাপাতে ১,২০০-১,৫০০টি রেণু পোনা মজুদ করা যায়। হাপাতে রেণু পোনাগুলোকে ২১ দিন লালন-পালন করতে হবে নিম্নলিখিত হারে রেণু পোনাগুলোকে হরমোন মিশ্রিত খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুরের জলের গুণাগুন পোনা চাষের উপযোগী করার জন্য মাটির পিএইচ ৬.৫-৭.০ এর জন্য শতাংশ প্রতি ১.০ কেজি পাথরে চুন প্রয়োগ আবশ্যক
চুন প্রয়োগের ৩-৪ দিন পরে প্রতি শতাংশে ৮-১০ কেজি গোবর অথবা ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে।
পোনা মজুদের পূর্বে নার্সারী পুকুরের পাড়ে নাইলন/ফিল্টার নেটের বেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
পোনা মজুদ ও ব্যবস্থাপনা:
নার্সারী পুকুরের প্রতি শতাংশে ১,২০০-১,৫০০টি হারে পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
মজুদকৃত পোনাকে নার্সারী পুকুরে ৬ সপ্তাহ ১০-২৫% হারে ২৮-৩০% প্রোটিনসমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
মজুদকৃত পোনাকে নিম্নের ছক অনুযায়ী সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারেঃ
প্রতি সপ্তাহে অনুমান করে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
নার্সারী পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য ৭-১০ দিন অন্তর ৬-৮ কেজি পঁচা গোবর অথবা ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি পানিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
এ ব্যবস্থাপনায় ৬ সপ্তাহ লালনের পর পোনা যখন ১৫-২০ গ্রাম ওজনের হবে তখন তা বিক্রি বা চাষে জন্য পুকুরে মজুদ করা যেতে পারে।
পুকুরে মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাষ :
মনোসেক্স পুরুষ তেলাপিয়া স্ত্রী তেলাপিয়ার চেয়ে যেহেতু বেশী উৎপাদনশীল সেহেতু নিঃসন্দেহে চাষের জন্য এটি একটি উচ্চফলনশীল জাতের মাছ। ছোট ডোবা, পুকুর, খাঁদ, ঘেরসহ অন্যান্য জলাশয়ে এ মাছ ৩-৪ মাসে বিপণনযোগ্য হয়।
পুকুর প্রস্তুতি:
ছোট বড় যে কোন পুকুরে যেখানে জলের গভীরতা ৩-৫ ফুট থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। পুকুরের পাড় মেরামত ও জলজ আগাছা পরিস্কার করে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ আবশ্যক। চুন প্রয়োগের ৩ দিন পরে প্রতি শতাংশে ১০-১৫ কেজি গোবর সার প্রয়োগ করতে হয়। এ অবস্থায় পুকুরে মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা মজুদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোনা মজুদ ও চাষ ব্যবস্থাপনা:
পুকুর প্রস্তুতির পর প্রতি শতাংশে ১০-১৫ গ্রাম ওজনের সুস্থ সবল ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। পোনা মজুদের পর সম্পূরক খাদ্য হিসাবে চালের কুঁড়া, সরিষার খৈল, গমের ভূষি, ফিসমিল ইত্যাদি মিশ্রণ (২৮% প্রোটিন) প্রতিদিন পুকুরে মাছের দেহ ওজনের ৪-৮% হারে প্রয়োগ করতে হবে। প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধির জন্য ১৫ দিন অন্তর অন্তর ৪-৬ কেজি গোবর সার অথবা ২-৩ কেজি মুরগীর বিষ্টা প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর জাল টেনে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে সম্পূরক খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন - Profitable Fish Farming - আধুনিক পদ্ধতিতে পুকুরে শিং মাছ চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
মাছ আহরণ ও উৎপাদন:
পুকুরে পোনা মজুদের ৪-৫ মাসের মধ্যে ২৫০-৩০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। এ অবস্থায় পুকুর শুকিয়ে সমস্ত মাস ধরে বিক্রি করতে হবে। এ পদ্ধতিতে চাষ করে প্রতি হেক্টরে ৮-৯ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
আয়-ব্যয়:
বাণিজ্যিকভাবে চাষের ক্ষেত্রে আধা-নিবিড় ব্যবস্থাপনায় মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে প্রতি হেক্টরে ১.২৫-১.৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ২.০-২.৫ লক্ষ টাকা মুনাফা করা যায়।
আরও পড়ুন - Dragon Fruit Farming – ড্রাগন ফল চাষে অভাবনীয় সাফল্য পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দার