মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতির নিয়ম ও পদ্ধতিঃ

বৈজ্ঞানিকভাবে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করেও মাছচাষ করা হচ্ছে, যেখানে প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্রের মত সমস্ত রকমের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে, যেমনটা নদি, পুকুর বা সাগরে থাকে

KJ Staff
KJ Staff
পুকুর তৈরী করছে

মাছ সর্বাহারি মানুষের কাছে অতিশয় পছন্দের খাদ্যবস্তুর মধ্যে একটি। এই বস্তুটি এমনই একটি খাদ্যবস্তু যার চাহিদা সবসময়ই অনেক বেশি থাকে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্যসরকার এই বিশেষ খাদ্যটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকী দিয়ে থাকে। আগেকার সময় মাছচাষের ব্যাপারটি জেলেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো, কিন্তু আজ এটি ক্ষুদ্রশিল্পের আকারে পরিচালিত হচ্ছে। আধুনিকতা এই ক্ষেত্রটির ভোল পালটে দিয়েছে। এখন মতস্যচাষ খাদ্যবস্তু উৎপাদনের সাথে সাথে রোজগারের ব্যাপারেও একটা মহত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এখন ভারত একটি মৎস্য উৎপাদক দেশ হিসাবে সারা বিশ্বের মানচিত্রে বিশেষভাবে জায়গা বানিয়ে নিয়েছে। একটা সময় ছিলো যখন মাছ চাষ দেশের পুকুর নদী ও সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল ছিলো, কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিকভাবে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করেও মাছচাষ করা হচ্ছে, যেখানে প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্রের মত সমস্ত রকমের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে, যেমনটা নদি, পুকুর বা সাগরে থাকে।

ব্যাপারটা হল সারা বিশ্বে মাছের তৈরি বিভিন্ন রকম পদের সমাহার রয়েছে। এই মাছের উপযোগিতা সর্বত্র রয়েছে। সারা পৃথিবীতে খাদ্যপোযোগী প্রায় ২০০০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে, যার মধ্যে শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই পাওয়া যায় ২২০০ রকমের মৎস্য প্রজাতি। গঙ্গা নদীর অববাহিকা যা কিনা ভারতে সবচেয়ে বড় নদি অববাহিকা, সেখানেই পাওয়া যায় ৩৭৫ টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বৈজ্ঞানিকদের মতে শুধু উত্তরপ্রদেশ ও বিহারেই পাওয়া গেছে ১১১ টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন অথবা নির্মান

চাষের জন্য যেমন জমি দরকার তেমনি মাছের পালনের জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন পুকুরের। গ্রামে অনেক পুকুর বা ছোট ছোট জলাশয় হামেশাই দেখা যায়, যার কিছু কিছু নিজের হয়, কিছু আবার গোষ্ঠী মালিকানায় রয়েছে, আবার কিছু কিছু পুকুর গ্রামসভার মালিকানায় থাকে। এই সব পুকুরগুলির বেশিরভাগ পুকুরই জল সংশোধন ও সংরক্ষণের জন্য, অথবা পশুদের অবগাহন ও জল খাওয়ার জন্য, আশেপাশের জমির ক্ষেতে জল সেচ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মৎস্য পালনের জন্য ০.২ হেক্টর থেকে ০.৫ হেক্টর বর্গফুটের পুকুর দরকার এবং এই ধরণের জমি নির্বাচন করা দরকার। পুকুরের জল অবশ্যই পরিশুদ্ধ রাখতে হবে, এবং সারা বৎসর এক থেকে দু মিটার জল থাকতে হবে। পুকুর এমন জায়গাতে নির্বাচন করতে হবে যেখানে বন্যার প্রকোপ নেই, এবং সবসময় যাতে পুকুরে পৌঁছানো যেতে পারে। পুকুরে ময়লা ও আবর্জনা থাকলে তা এপ্রিল অথবা মে মাসের মধ্যে পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়, এতে মাছ পালনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া সম্ভব।

উপযুক্ত জায়গার নির্বাচন

যদি নতুনভাবে পুকুর নির্মাণের ব্যাপার থাকে তাহলে প্রথম কাজই হলো সঠিক স্থান নির্বাচন করা। পুকুরের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাটির জলধারণ ক্ষমতা এবং এর উর্বরতার ব্যাপারটি খুব ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। উষর ও বালি মাটিতে পুকুর তৈরি করা একেবারেই উচিত নয়। মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব বেশি থাকলে সেখানেও পুকুর নির্মাণ করা উচিত নয়। সবসময় দোয়াশ মাটিতে পুকুর বানানো উচিত কারণ এর জলধারণ ও অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। মাটির পি এইচ ক্ষমতা পুকুর নির্মাণের ক্ষেত্রে সবসময় ৬.৮ থেকে ৮ পর্যন্ত থাকা উচিত, অর্গানিক কার্বনের পরিমাণ থাকতে হবে ১ শতাংশ, মাটিতে বালির ভাগ থাকতে হবে ৪০ শতাংশ, কাদার ভাগ থাকতে হবে ৩০ শতাংশ, ও মাটির ভাগ থকবে ৩০ শতাংশ, পুকুর তৈরির আগে অবশ্যই মাটির পরীক্ষা করে উপাদানগুলি ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে, এর জন্য মৎস্য বিভাগ বা কৃষিবিভাগের মৃত্তিকা পরিক্ষাকেন্দ্রের সাহায্য নেওয়া উচিত।নতুন পুকুর তৈরির কাজ অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং এই ব্যাপারে মৎস্য বিভাগের অফিসারদের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত।

ক্ষতিকারক মাছেদের সরানো উচিত

পুরানো পুকুরে অনেক ধরণের অনাবশ্যক খাদক প্রাণী যেমন-কচ্ছপ, ব্যাং, কাঁকড়া এবং মাছেদের মধ্যে সিন্ধ্রি, পুঁটি, টাঙ্গন, শোল, শিঙ্গি, মাগুর ইত্যাদি সরিয়ে ফেলা উচিৎ কারণ এইসব মাছেরা পুকুরে প্রাপ্ত সমস্তরকম প্ল্যাঙ্কটন জাতিয় খাদ্য খেয়ে ফেলে। মাংসাশী মাছের কার্প মাছের চারাগুলির খুব ক্ষতি করে ফলে মৎস্যপালনের ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

উৎপাদন কার্যে চুনের প্রয়োগ

হাল্কা ক্ষারীয় জল মাছের পালনের ক্ষেত্রে খুব ভালো। জলাশয়ের জল অধিক আম্লিক বা ক্ষারীয় হওয়া একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। চুন প্রয়োগের ফলে জলে ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পায় এবং অতি অম্লত্ব ও ক্ষারত্বকে প্রশমিত করে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত চুন মাছেদের বিভিন্ন পরজীবি প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করে, ও পুকুরের জল অত্যন্ত পরিষ্কার রাখে। এক হেক্টর ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট পুকুরে ২৫০ কেজি চুন লাগে। চুনের প্রয়োগ মাছের চারা ছারার একমাস আগে করতে হবে।

- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)

Published On: 18 January 2019, 05:25 PM English Summary: Pond creation for fish farming

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters