কম্পোজিট ফিশ ফার্মিং (Fish Farming) -এর সাথে কিছু সাথী ফসল হিসেবে মাছের মিশ্রচাষ করলে মাছ চাষিরা বাড়তি লাভ পেতে পারেন। বৈচিত্র্য ময় মিশ্রচাষে একদিকে যেমন মাছের উৎপাদন বাড়ানো যায়, তেমনি নিত্য নতুন মাছের স্বাদ পাওয়া যায়।
জলাশয়ের সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে এই মাছ গুলি কার্প জাতীয় মাছ গুলির পাশাপাশি মিশ্র চাষে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বেশ কিছু প্রগতিশীল মাছ চাষি হাতে কলমে এই সব মাছের চাষ করেছেন। আর্থিকলাভে মাছ চাষিরা হাতে নাতে তার প্রমানও পেয়েছেন। সাথী ফসল হিসেবে লাভজনক কয়েকটি মাছের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হল।
মাছের নামঃ জয়ন্তী রুই
জয়ন্তী রুই প্রথম উৎপাদন করে ভুবনেশ্বরের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার অ্যাকোয়াকালচার (আইসিএআর)। নরওয়ের গবেষণা সংস্থার কারিগরি সহায়তায় ভুবনেশ্বরের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার অ্যাকোয়াকালচার (আইসিএআর) -এর বিজ্ঞানীরা ওই জয়ন্তী রুই-এর জন্ম দিয়েছে। জয়ন্তী রুইয়ের বৃদ্ধির হারও অনেক বেশি। সাধারণ রুই-এর থেকে জয়ন্তী রুই-এর পচনশীলতাও অনেকটা কম। জয়ন্তী রুই-এর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশী এই প্রজাতির রুই দেখতেও বেশ ভাল। দেশি রুই-এর গায়ের রং কালচে লাল। অন্যদিকে জয়ন্তী রুই হালকা লালচে সাদা রঙের। চকচক করে। জয়ন্তী রুই মাছের ডিমপোনার চাষে বাঁচার হার বেশী। সাধারণত সাধারণ রুই-এর ১০০টি ডিমপোনার মধ্যে ৪০% বাঁচে। জয়ন্তী রুই-এর ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ৬০-৬৫%। জয়ন্তী রুই-এর চাষ লাভজনক ও খাদ্য হিসেবে সুস্বাদু।
মাছের নামঃ গিফট তেলাপিয়া
তেলাপিয়া চাষের বড় সমস্যা হলো এর অনিয়ন্ত্রিত বংশ বিস্তার। এই ধরণের অনিয়ন্ত্রিত বংশবিস্তারের কারণে পুকুরে বিভিন্ন আকারের তেলাপিয়া মাছ দেখা যায়। এতে করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষ তেলাপিয়া মাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার বেশি। এই ধারণাকেই কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র পুরুষ তেলাপিয়া চাষকেই মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ বলা হয়।
এই প্রজাতি সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্থ্, প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকে, অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায় এবং প্রজননের জন্য পুকুরের পাড়ে গর্ত করে না বিধায় বর্তমানে শুধুমাত্র পুরুষ তেলাপিয়া বা মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে খামারীদের আগ্রহ বাড়ছে। আর এই পুরুষ জাতীয় তেলাপিয়া মাছ বিশেষ নির্বাচিত প্রজননের মাধ্যমে উৎপন্ন করা হয় যার নাম “গিফট তেলাপিয়া”। পুরো নাম জেনেটিক্যালি ইম্প্রুভড ফার্ম তেলাপিয়া”।
গিফট মাছের চাষে মাছ চাষিরা লাভবান হবেন দ্রুত। এই গিফট জাতীয় তেলাপিয়া রপ্তানিযোগ্য মাছ হওয়ায় কলকাতার বেশ কিছু বাণিজ্যিক রপ্তানী সংস্থা “গিফট” তেলাপিয়া মাছের রপ্তানীতে উৎসাহিত।
চুক্তিভিত্তিক মাছের চাষের মাধ্যমে বৈদেশিক বাজারে রপ্তানিতে আরো বেশি করে জনপ্রিয় হতে চলেছে। অতি সম্প্রতি তেলাপিয়া বিশ্বজনীন মাছ বা গ্লোবাল ফিশ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। সারা বিশ্বে চাষ করা মাছের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই মাছ।