মধু খেতে কার না ভালো লাগে, আর যদি সেই মধু হয় টাটকা আর খাঁটি! ছেলে বুড়ো নির্বিশেষে মধুর প্রতি টান সব্বার। ভাবলেই অবাক হতে হয় হালকা সোনালী রঙের এই ঘন তরলের আমদানি কিন্তু মৌমাছির মতন পতঙ্গের থেকে। যেই মৌমাছির দংশনে একনিমেষে শরীর ফুলে উঠতে পারে, আসতে পারে জ্বরের মতন উপসর্গ! তবুও যুগের পর যুগ মানুষ এই ভয়কেই অতিক্রম করে, মধু সংগ্রহের মতন বিপজ্জনক পেশাকে অবলম্বন করেছে। সময় বদলেছে। আমদানি হয়েছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি-- নিত্যনতুন কৌশল। অন্যান্য চাষবাসের মতন মৌমাছি পালনও বর্তমানের অন্যতম পেশা। এই ব্যতিক্রমী চাষ কমিয়ে দিয়েছে, জঙ্গলে গিয়ে মধু সংগ্রহের সময় বাঘের মুখে পড়ার ঝুঁকি। শুধু মধুই কেন, মোমেরও অনেকাংশে চাহিদা মিটিয়েছে এই লাভজনক ব্যবসা।
নিজস্ব একটা ঘর বা উঠোন থাকলেই হল, শুরু করে দেওয়া যাবে মৌমাছি প্রতিপালন। অল্প বিনিয়োগ অথচ একদম নতুন ধারার এই ব্যবসা করতে গেলে প্রথমেই কাটাতে হবে মৌমাছি নিয়ে অহেতুক ভয়। কয়েকটা কৌশল মেনে চললেই এই ব্যবসা একজন চাষিকে হদিশ দিতে পারে লক্ষীর ভাঁড়ারের।
মৌমাছি চাষের পদ্ধতি: (Honey Bee farming method)
সবার আগে মৌমাছি চাষের জন্য কয়েকটা কাঠের বাক্স সংগ্রহ করতে হবে। কম করে ১০ থেকে ১১ টি বাক্স কিনলেই ভালো। কারণ মৌমাছির বংশবৃদ্ধি খুব দ্রুত গতিতে হয়। তাই প্রথমের দিকেই বেশি পরিমাণে কাঠের বাক্স কিনে রাখলে সুবিধা হবে বেশি।
মৌমাছির বংশ যেহেতু তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে, তাই মৌমাছির সর্বনিম্ন নিউক্লিয়াস কলোনী দিয়ে চাষ শুরু করা বিবেচকের কাজ। মৌমাছি প্রতিপালনে শুরুতাই ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে এগোলে, পরবর্তী কালে বাণিজ্যিক ভাবে মৌমাছি চাষ সুবিধার হবে।
মৌমাছি চাষে অনুকূল আবহাওয়া: (Weather)
আবহাওয়া সঠিক পেলে প্রত্যেক মাসে ৪ থেকে ৫ বার টান হয়, আর প্রতিবার এক একটি বাক্স থেকে এক বালতি মধু সংগ্রহ করা যায়। বাক্স যত বেশ মধুর পরিমাণও তত বেশি হবে। এক মাস পরপর বাক্স পরীক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে ট্রেতে থাকা মৌমাছিরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিনা। দুৰ্ভাগ্যবশত রোগ ধরলে যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে মৌমাছিগুলোকে সুষ্ঠ করে তোলার। মৌমাছিগুলো সুস্থ থাকলেই মধুর পরিমাণ বাড়বে সাথে সাথে মধুর গুণগত মানও ঠিক থাকবে। প্রত্যেক বছর দুই থেকে তিন বার মধু সংগ্রহ করা যায়। জুনের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি অবধি মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। মধু সংগ্রহের হার আবহাওয়ার উপর ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল। এছাড়াও রোগ-অসুখ, কীট-পতঙ্গের আক্রমণ মৌমাছির ডিম পাড়ার সময়ে বহুল অংশে প্রভাব ফেলতে পারে।
চাষিদের মৌমাছি পালনে আগ্রহ বাড়ার কারণ: (Growing interest in Honey Bee farming)
অর্থকরী লাভের দিক থেকে দেখলে মৌমাছি চাষ খুব কম সময়ে অধিক আয়ের অন্যতম পথ। গোটা বছর ধরেই মধুর বিক্রি রয়েছে। যুবক থেকে বৃদ্ধ সুস্থ সবল থাকতে মধু সেবন করেন। এছাড়াও বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বনে মধুর ভূমিকা উল্লেখ্যযোগ্য। তাই মধুর বিক্রি কমে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। হোলসেলের বাজারে সহজেই মধু বিক্রি করা যায় বলে এর তেমন কোনও ব্যবসায়িক প্রচারের দরকারও নেই। মৌমাছি ব্যবসায় কাঁচামাল কেনারও খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। এই সুবিধাগুলির দিকে লক্ষ্য রেখেই মানুষ তাই অন্যান্য চাষবাস থেকে মৌমাছি প্ৰতিপালনেই বেশি আগ্রহ পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: Piggery Farming Guide: বেকার সমস্যা দূরীকরণে পালন করুন ঘুঙরু শুয়োর
মৌমাছি চাষের অনুমতি পত্র: (Honey Bee farming permit)
মৌমাছি চাষের জন্য লিখিত অনুমতি দরকার। এরজন্য স্থানীয় জোনিং অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। প্রশাসনের অনুমতি পেলে মৌমাছি চাষে কোনও বাধা থাকবে না। মৌমাছি সম্পর্কিত পণ্য বিক্রির জন্য বিক্রয় করের লাইসেন্স সম্পর্কিত রাজ্য- রাজস্ব বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে, রাজ্য মৌমাছি পালন আইন সম্পর্কিত কৃষি অ্যাটর্নির সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
সুরক্ষা: (Precaution)
মৌমাছি প্রতিপালনে নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। মুখ ও হাত মৌমাছির দংশন থেকে বাঁচাতেবা গেলে নেটের তৈরী টুপি ও দস্তানা ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও মৌমাছির অতর্কিত আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ ঘুঁটের ধোঁয়ার ব্যবস্থা করে নেওয়া উচিত। মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি দূরীকরণ ব্লোয়ার এবং ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। জেনে রাখা ভালো, মৌমাছি সাধারণত দংশন করে না, তবুও প্রতিরক্ষার জন্য এই নিয়মগুলি মেনে চলা উচিত।
মৌমাছি চাষ এখনও অনেকের কাছে অজানা হওয়ায় এই চাষে নামলে প্রথমদিকেই লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। শুধু সুকৌশল আর বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে এই চাষ করলে বিপুল পরিমাণে অর্থলাভ সম্ভব।
আরও পড়ুন: Camel Farming: জেনে নিন উট প্রতিপালন পদ্ধতি ও পরিচর্যা