গলদা চিংড়ি বিশ্বে Giant Fresh water Prawn নামে পরিচিত । গলদা চিংড়ির বৈজ্ঞানিক নাম: Macrobrachium Rosenberg. | সাধারণত, গলদা চিংড়ি স্বাদু জল ও হালকা লবণযুক্ত জলে ভালোভাবে চাষ করা যায়।গলদা চিংড়ি অত্যন্ত লোভনীয় এক খাবার। মাছ-বাজারে এই মাছের চাহিদা খুব | ক্রেতাদের লাইন পরে যায় চিংড়ি কিনতে | তাই, কৃষকদের চিংড়ি চাষে আর্থিক উন্নতিও ঘটে |
প্রাকৃতিক পরিবেশে গলদা চিংড়ি স্বাদু জল এবং ঈষৎ লবণাক্ত জলে পাওয়া যায়। তবে নদীর উঁচু অংশে যেখানে জোয়ার-ভাটার তারতম্য বেশি সেখানে এরা অবস্থান করতে বেশি পছন্দ করে। আমাদের দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ির উৎপাদন প্রতি একরে ১২০০ থেকে ২৫০০ কেজি হয়েছে। এই নিবন্ধে আধুনিক উপায়ে চিংড়ি চাষের (lobster Cultivation) বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
পুকুর প্রস্তুতি(Pond preparation):
অন্যান্য মাছের মতো গলদা চিংড়ি চাষের পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। কোন অবস্থাতেই পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা জমতে দেওয়া যাবেনা। পুকুর প্রস্তুতির সময়ে শতকে ১-২ কেজি চুন দিয়ে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের জন্য পুকুরের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পুকুর প্রস্তুতির শুরুতে অল্প জল থাকা অবস্থায় রেটেনন দিয়ে রাক্ষুসে মাছ সহ যাবতীয় মাছ নিধন করতে হবে। মজুদ পুকুরে ৪-৫ ফিট জল রাখা প্রয়োজনীয়। জলের গভীরতা বেশি হলে অক্সিজেন স্বল্পতায় দেখা দেবে। অন্যদিকে জলের গভীরতা কম হলে জল গরম হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন - Malabar spinach farming: সহজ উপায়ে পুঁই শাক চাষে অধিক উপার্জন করুন
চিংড়ি চাষ পদ্ধতি(Farming process):
গলদা চিংড়ির সাধারণত ২টি পদ্ধতিতে কৃষকরা চাষ করে থাকেন:
১। একক চাষ পদ্ধতি: ২। মিশ্রিত চাষ পদ্ধতি:
একক চাষ পদ্ধতি:
শুধুমাত্র গলদা চিংড়ির একক চাষ। একক চাষ পদ্ধতিতে স্বাভাবিক ভাবে প্রতি শতকে ১০০-১১০ টি গলদা পোনা মজুদ করা যায় | শতকে ২০০-৩০০ পোনা মজুদ করা যেতে পারে। একক চাষ পদ্ধতিতে প্রতি একরে উৎপাদন ৪০০-৫০০ কেজি হয়ে থাকে।
মিশ্রিত চাষ পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ির সাথে রুই, কাতলা, সিলভার কাপ জাতীয় মাছের চাষ করা হয়। মিশ্রিত চাষ পদ্ধতিতে প্রতি শতকে ৭০-৮০ টি গলদা চিংড়ি এবং ৩-৪ টি কার্প জাতীয় মাছের পোনা মজুদ করা হয়। যেহেতু চিংড়ি অনেক দামি মাছ এবং এদের খাদ্য অনেক দামী তাই এর সাথে এমন মাছ মিশ্র হিসাবে চাষ করা হয় যেগুলির বাজার মূল্য বেশি। এক্ষেত্রে ৪০০-৫০০ গ্রাম আকারে রুই ও কাতলা মাছ দেওয়া ভালো। এগুলো চিংড়ি সংগ্রহ কালীন সময় প্রায় ৩-৩.৫ কেজি আকারে হবে। মিশ্রিত চাষে এমন কোন মাছ চিংড়ির সাথে দেওয়া যাবে না যেগুলি চিংড়ি মাছকে খেয়ে ফেলবে এবং যেগুলির বাজার মূল্য কম। উৎপাদন প্রতি একরে চিংড়ি ২০০-৩০০ কেজি এবং কার্প জাতীয় মাছ ২০০০-২৫০০ কেজি হয়ে থাকে।
পোনা প্রস্তুতি:
প্রাকৃতিক উৎস হিসাবে নদী এবং সাগরের মোহনা থেকে গলদার পোনা সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া, হ্যাচারিতে উৎপাদিত গলদার রেনু ও পাওয়া যায়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রথম রেনু পাওয়া যায় এবং বছরের শেষ দিক সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত গলদা রেনু পাওয়া যায়।
খাদ্য(Food):
সপ্তাহে প্রতিদিন ভোরে রেডি ফিড এবং সন্ধ্যায় ২ দিন সয়াবিন, ৩ দিন ডাবরি ডাল,ও ২ দিন ভুট্টা/গম সকালে ভিজিয়ে সন্ধ্যায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে রেডি ফিড ভিন্ন অন্য খাবার ব্যবহার না করাই ভালো। বাণিজ্যিকভাবে ও বড় আয়তনের গলদা চাষের ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত ভালো কোম্পানির রেডি চিংড়ির ফিড ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
ছটকা চিংড়ি পুকুরে মজুদ করার পর চিংড়ির ওজনের ৩-৫% খাদ্য সন্ধ্যায় ও ভোর রাতে প্রয়োগ করতে হবে। মোট খাবারকে ৪ ভাগ করে, এর ৩ ভাগ সন্ধ্যায় ও ১ ভাগ ভোর রাতে প্রয়োগ করতে হবে। শতকে ২০০ গ্রাম ডিএপি স্যার গুলে ছিটিয়ে দিলে খোলস বদলানোর জন্য সুবিধা হয়। খাবার খেলো কি-না তা পরীক্ষার জন্য সপ্তাহে ১ দিন ট্রেতে খাবার দিতে হবে। ৩-৪ ঘণ্টা পর ট্রে তুলে দেখতে হবে ট্রে-তে খাবার অবশিষ্ট আছে কিনা।
পরিচর্যা:
প্রতি ১৫ দিন পর চিংড়ির পুকুরে জাল টেনে চিংড়ি তুলে পা ভেঙে দিতে হয়। পা ভেঙে দেয়ার ফলে অন্য চিংড়ি আক্রমণ বা খাওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং চিংড়ির বৃদ্ধি বেশি হয় | চিংড়ির পুকুরে দ্রবীভূত অক্সিজেন এর মাত্রা কমপক্ষে ৫ মি.গ্রা./লিটার রাখতে হবে। জলে অক্সিজেন এর মাত্রা কম হলে বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে এবং পুকুর পাড় নিচু হলে চিংড়ি হেঁটে পুকুরের বাইরে চলে যেতে পারে।প্রতি ১৫ দিন পর পর চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খাবারের পরিমাণ পুন:নির্ধারণ করতে হবে। পুকুরে নেট দিয়ে ঘিরে রাখতে হবে যাতে সাপ, ব্যাঙ কিছু প্রবেশ করতে না পারে |
আরও পড়ুন - Pangas Fish Farming: জেনে নিন পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা