পাবদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। এই মাছে কাঁটার পরিমান কম থাকে বলে, ছোট থেকে বড় সকলেই এই মাছ খেতে খুব ভালোবাসে | পাবদা মাছের একক ও মিশ্র চাষও করা যায় | তবে, আধুনিক উপায়ে একক পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষ খুবই লাভজনক | এই মাছ মূলত নিশাচর, তাই এই মাছ চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পুকুরে রাতে খাবার দেওয়া |
এই মাছের চাহিদা বাজারে ব্যাপক | এর পুষ্টিগুণ ও স্বাদ দারুন থাকায়, এর বাজারমূল্য অনেক | তাই পাবদা মাছ চাষে (Pabda cultivation) কৃষকরা লাভবান হতে পারেন | তবে, জেনে নিন এই মাছ চাষ পদ্ধতির বিবরণ;
পুকুর নির্বাচন (Pond selection):
প্ৰথমটো পুকুর নির্বাচন করে অবাঞ্চিত আগাছা ও রাক্ষুসে মাছ দূর করতে হবে | এ মাছ চাষের জন্য ৭-৮ মাস জল থাকে এ রকম ১৫-২০ শতাংশের পুকুর/জলাশয় নির্বাচন করা যায়। পুকুরটি বন্যামুক্ত এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পুকুর প্রস্তুতি (Pond preparation):
প্রথম পর্যায়ে পুকুরের পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলতে হবে | পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ১৮-২৫ গ্রাম রোটেনন পাউডার দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করা যায়। পুকুরের তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, জল পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভাল থাকবে। রোটেনন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্যে বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর শতকে ৮০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়।পুকুরে কোনো প্রকার জৈব সার দেওয়া যাবে না।
পোনা ছাড়ার পদ্ধতি:
পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে পরিবহনকৃত পোনা পুকুরের জলের তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এর জন্য ১০ লিটার জল ও ১ চামচ পটাসিয়াম পারম্যাংগানেট অথবা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর তাতে ১-২ মিনিট স্নান করিয়ে পোনা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
সার প্রয়োগের ৪ দিন পর জলের রং সবুজ বা বাদামি হলেই পুকুরে পোনা মজুদ করতে হবে। যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ৫-৬ ঘন্টা পুকুরে হালকা জলের প্রবাহ রাখতে হবে। একক চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৩-৪ গ্রাম ওজনের সুস্থ্য-সবল ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা, ১০০টি শিং এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা , ১০টি রুই , ১০টি মৃগেল, ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে।
খাদ্য (Feed):
৩০% ফিস মিল, ৩০% সর্ষের খোল, ৩০% অটোকুড়া, ১০% ভূষি ও ভিটামিন প্রিমিক্স সহকারে সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায় অথবা বাজারের কৈ মাছের ফিড খাওয়ালেও চলবে। এরা সাধারণত রাতে খেতে পছন্দ করে। তাই এই খাবারটি রাতে ২ বার প্রয়োগ করা যেতে পারে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে খাবার দিতে হবে। পোনা মজুদের পরের দিন থেকে মাছকে তার দেহ ওজনের ১২ ভাগ থেকে আরম্ভ করে দৈনিক খাবার দিয়ে যেতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর খাদ্য প্রয়োগের হার ১% করে কমাতে হবে। পাবদা মাছের ওজন ৩০ গ্রামের উর্ধ্বে উঠলে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ হবে তার দেহ ওজনের শতকরা ৫ ভাগ।
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
পেট ফোলা রোগ:
পুকুরের তলদেশে অতিরিতক্ত জৈব পদার্থ জমলে, জলের পরিবেশ নষ্ট হলে মাছের মজুদ ঘনত্ব বেশি হলে এই রোগ হয় | এই রোগ হলে মাছের পেট ফুলে যায়, ফোলা অংশে চাপ দিলে জল জাতীয় তরল বের হয় | এই রোগে মাছের মৃত্যু ঘটে |
প্রতিকার:
প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫ গ্রাম টেট্রাভেট, ১ গ্রাম ভিটামিন সি, ২ গ্রাম লেসিফস মিশিয়ে ৩ থেকে ৫ দিন খাওয়াতে হবে |
ক্ষত রোগ:
পাবদা মাছের ক্ষত রোগ হলে গায়ে লাল দাগ দেখা যায় | ক্ষত স্থানে চাপ দিলে পুঁজ বের হয় |
প্রতিকার:
মাছ রোগাক্রান্ত হলে তৎক্ষণাৎ পুকুর থেকে বার করতে হবে | ১০ লিটার জলে ১০০ গ্রাম লবন মিলিয়ে সেই জলে ৫ থেকে ১০ মিনিট মাছকে ডুবিয়ে তারপর পুকুরে ছাড়তে হবে |
আরও পড়ুন - Poultry farming - গ্রামীণ যুবকরা/মহিলারা কালো মুরগি চাষে আয় করুন প্রচুর অর্থ
মাছ আহরণ:
৭-৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হলে মাছ আহরণ করা যাবে। প্রায় ১৪-১৫ কেজি মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Prawn Farming: আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষের সহজ উপায়