মিষ্টি জলের মাছ পেংবা। বৈজ্ঞানিক নাম অস্টিওব্রাম বেলঞ্জারী। দেশের মধ্যে কেবল মণিপুর রাজ্যে এই মাছের দেখা মেলে। মণিপুরবাসীর অতি প্রিয় এই মাছ। অতুলনীয় স্বাদের জন্য খুবই চাহিদা রয়েছে। নিজস্ব স্বাদের জন্য পেংবা খুব সহজেই বাঙালির মন জয় করে নেবে বলে মৎস্যবিজ্ঞানীদের আশা। মণিপুরের বাজারে প্রায় ১ হাজার টাকা কেজি দরে এই মাছ বিক্রি হয়। এমনকি, ওই রাজ্যের স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পেংবা। তাই প্রতি বছর মণিপুরে ‘পেংবা দিবস” পালন করা হয়।
রাজ্যে হলদিয়া ব্লকে পেংবা মাছের চাষ সফল হয়েছে। বর্তমানে হলদিয়া থেকে এই মাছের ডিম পোনা অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন হ্যাচারি মালিকরা। আগামী বছর এই সব হ্যাচারি থেকে অতি সহজেই পেংবা মিলবে। তাছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক সিএডিসি মৎস্য খামারে পেংবার চারা মেলে। রাজ্যে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে সহজেই পেংবার মিশ্র চাষ করা যায়। পেংবা রাক্ষুসে নয়, শাকাশি জাতীয় মাছ। ছয় জাতীয় মাছের মিশ্রচাষে গ্রাস কার্পের জায়গায় পেংবা মাছ ছাড়তে হবে। অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, কমন কার্প ও পেংবা।
পেংবা চাষ পদ্ধতি(Farming process):
বড় পুকুরে চাষের জন্য হেক্টর প্রতি সাত থেকে আট হাজারটি পেংবা মাছের চারাপোনা মজুত করা যায়। এগুলি বছরে চার থেকে পাঁচশো গ্রাম ওজন হলেই বিক্রি করা যেতে পারে। পেংবার বৃদ্ধি এমনিতে সাধারণ মাছের তুলনায় কিছুটা কম হলেও যেহেতু বাজারমূল্য অনেক বেশি, তাই সাথী ফসল হিসেবে পেংবার মিশ্র চাষ অধিক লাভজনক।
আরও পড়ুন -Shing Fish Farming: পুকুরে লাভজনক শিং মাছ চাষ করে দ্বিগুন উপার্জন করুন
আতুঁড় পুকুরে চাষের জন্য প্রতি হেক্টর জলাশয়ে তিন থেকে দশ মিলিয়ন ডিমপোনা ছাড়তে হবে। তবে পুকুরে বায়ুসঞ্চালনের ব্যবস্থা থাকলে প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন ডিমপোনা ছাড়া যাবে। কৃত্রিম খাবার হিসেবে চালের কুঁড়ো ও বাদামখোল এর গুঁড়ো সমান অনুপাতে মিশিয়ে দিতে হবে। পালন পুকুরে চারাপোনার চাষের জন্য কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে মিশ্রচাষ করা যাবে। এক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। উপযুক্ত, সুষম খাবার পেলে বেঁচে থাকা হার ৯৪.৫ শতাংশ। আর তিন মাসে ওজন হতে পারে এক কেজির কাছাকাছি। ‘অ্যাজোলা’ খাওয়ালে পেংবা বৃদ্ধি আরও ভাল হয় এবং বেঁচে থাকার হারও বেশ ভালই হয়।
সাধারণ পুকুরে চাষের জন্য যদি মে মাস নাগাদ ডেসিম্যাল পিছু ৩০০ গ্রাম ওজনের তিনটি কাতলা, ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের তিনটি সিলভার কার্প, ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছ ৩০টি, ১০০ -১৫০ গ্রাম ওজনের ২০ টি মৃগেলের সঙ্গে দুই থেকে সাত গ্রাম ওজনের পেংবা মাছ ১৫টি মজুত করা যেতে পারে। তিন মাস পরে ৬০০ গ্রাম ওজনের রুই ও এক কেজি ওজনের সিলভার কার্প হবে। সেগুলো বিক্রি করে ফের ১০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছ ৪০ টি ও ২০০ গ্রাম ওজনের সিলভার কার্প দু টি মজুত করতে হবে। এরপর মাছ ছাড়ার ৪-৫ মাস পর, এক কেজি দু’শো গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের কাতলা, ৪০০ গ্রাম ওজনের পেংবা মাছ ধরে বিক্রি করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে বাজার অনুযায়ী বাকি মাছ বিক্রি করে দিলে ভালই লাভ হবে।
জৈব জুস প্রয়োগ করলে মাছের উৎপাদন আরও ভাল পাওয়া সম্ভব। জৈব জুসে উপস্থিত কার্বন জলের অ্যামোনিয়া-সহ ক্ষতিকারক গ্যাস দূর করে দেয়। উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বা বন্ধু জীবাণু জলের তলার জৈব পদার্থকে মাছের খাবারে পরিণত করে। এই জুস তৈরি সম্পর্কে মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলেন, “২৫ ডেসিমেল পুকুরের জন্য আড়াই কেজি বাদাম খোল, তিন কেজি চালের গুঁড়ো, ৬০০ গ্রাম ঈস্ট পাউডার, তিন কেজি চিটে গুড়, দেড় কিলোগ্রাম আটা, তিনশো গ্রাম কলা ও দেড় কিলোগ্রাম যে কোনও পোনা মাছের খাবার একসঙ্গে তিন গুণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ৩ দিন পচিয়ে পুকুরে দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Star Fruit Cultivation: জেনে নিন ছাদে কামরাঙার চাষ পদ্ধতি