খরগোশ তৃণভোজী শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের প্রাণি। অন্য প্রাণির তুলনায় খরগোশ সহজেই পালন করা যায়।তবে বাণিজ্যিকভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খরগোশ পালন (Rabbit farming) অনেক লাভজনক। এই নিবন্ধে খরগোশ পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
খরগোশ পালনের সুবিধা(Benefits of rabbit):
১.দ্রুত বর্ধনশীল প্রাণি।
২. একসাথে ২-৮টি বাচ্চা প্রসব করে।
৩. একমাস পরপর বাচ্চা প্রসব করে।
৪. খাদ্য দক্ষতা অপেক্ষাকৃত ভালো।
৫. মাংস উৎপাদনে পোল্ট্রির পরেই খরগোশের অবস্থান।
৬. কম জায়গায় কম খাবারে পালন করা যায়।
৭. কম খরচে বেশি উৎপাদন সম্ভব।
৮. খরগোশের মাংস বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।
৯. রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট, ঘাস ও লতা-পাতা এর খাবার।
আরও পড়ুন -Aquarium Fish Farming: সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি অ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ পদ্ধতি
১০. পারিবারিক শ্রমের সফল ব্যবহার করা সম্ভব।
১২. হোটেল, রেস্তোরাঁ বা ভোজসভায় এর মাংসের অনেক কদর।
বাসস্থান:
বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালনের জন্য বহুতল বিশিষ্ট খাঁচা এবং মেঝেতে খরগোশ পালন করা যায়। স্বাভাবিকভাবে জাত অনুযায়ী মেঝের আকার বিভিন্ন ধরণের হয়। সাধারণত, প্রতি ৮টি বয়স্ক খরগোশের জন্য ৫*২ বর্গফুট একটি খাঁচার প্রয়োজন হয় এবং প্রজননের সময় আলাদা প্রজনন ঘর ব্যবহার করা (১ বর্গফুট/১/২ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য) হয়। গ্রামাঞ্চলের খরগোশ ছেড়ে পালন করা যায়, তবে বাচ্চা দেওয়ার সময় এরা নিজেরাই গর্ত খুড়ে নিজের গায়ের লোম ছিড়ে বাসা তৈরী করে। যদি খাঁচায় পালন করা হয়, তবে বাচ্চা দেওয়ার সময় মেটার্নিটি বক্স বা নেট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে।
খাদ্য(Food):
কচি ঘাস, লতা-পাতা, গাজর, মুলা, শস্যদানা, মিষ্টি আলু, শসা, খড়কুটো, তরকারির ফেলনা অংশ, গম, ভুসি, কুড়া, খৈল, সয়াবিন, দুধ, পাউরুটি, ছোলা নিত্যদিনের খাবার। ঘাস ও শাক সবসময় শুকনা বা ঝকঝকে অবস্থায় দিতে হবে। ভেজানো গম বা ছোলা অল্প সেদ্ধ করে এর সাথে ভুসি মিশিয়ে দিলে ভালো হয়।
প্রজনন(Breeding):
খরগোশ সাধারণত ৫–৬ মাস বয়সে প্রথম প্রজননক্ষম হয়, তবে ঋতু এবং পর্যাপ্ত ওজন প্রাপ্তির উপর ইহা অনেকাংশে নির্ভরশীল। গর্ভবতী খরগোশ ২৮–৩৪ দিনের মধ্যে বাচ্চা দেয় এবং বাচ্চার ওজন খরগোশের শারিরীক ওজনের উপর নির্ভরশীল এবং ইহা সাধারণত: দৈহিক ওজনের ২% হয় অর্থাৎ ১.২৫ কেজি (সোয়া কেজি) ওজনের একটি খরগোশের বাচ্চার ওজন হয় ৩০ গ্রাম। খরগোশের দুগ্ধদান কাল সময় ৬–৮ সপ্তাহ এবং উইনিং ওজন হলো ৮০০–১২০০ গ্রাম। খরগোশ প্রতিবার ২–৮টি বাচ্চা প্রদান করে এবং একবার বাচ্চা দেয়ার ৩ মাস পরেই আবার বাচ্চা দিতে পারে, তবে গর্ভবতী খরগোশকে পৃথক করে রাখা প্রয়োজন।
বাচ্চার যত্ন:
খরগোশ ছোট প্রাণি যদিও ইহা একসঙ্গে ৬–৮টি বাচ্চা দেয়। তাই অনেক সময় প্রথম ১০ দিনে এই বাচ্চাগুলোর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়, যেমন মা খরগোশ থেকে দুধ খেতে সাহায্য করা, প্রয়োজনে ফিডারে করে দুধ খাওয়ানো, ভাতের মাড় বা দুধে বিস্কুট ভিজিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া বাচ্চার ঘরের প্রয়োজনীয় তাপের ব্যবস্থা করা, প্রিডেটর, লাল পিঁপড়া ইত্যাদির হাত থেকে বাচ্চা রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
আরও পড়ুন - Successful farming tips: সফল কৃষিকাজের চাবিকাঠি কি? জেনে নিন কিছু টিপস