কৃষিজাগরন ডেস্কঃ আমাদের রাজ্যে বহু চাষী নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ।আর্থ-সামাজিক দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকা মৎস্যজীবিগনও এই শ্রেনীরই অর্ন্তভুক্ত।তাঁদের বাড়ীর সংলগ্ন ছোট বা মাঝারি মাপের একাধিক জলাশয় থাকলেও দুঃখজনক ভাবে অনাবাদী পড়ে থাকে ও অনেকেই সেগুলিকে ঠিক সম্পদ বলে মনে করেন না।পকুরগুলির জল-ধারনের সামঞ্জস্য বিষয়ে কিছুটা অবগত হয়ে তাদের পরিপূর্ন সদব্যবহার করতে পারলে স্বল্পবিনিয়োগে মাছের ফলন সম্ভব ও সেই সাথে সালোক সংলেষনের হেতু আপনা-আপনি জন্মানো প্রাকৃতিক খাদ্যকনার গতিও হয় ফলে জলজ পরিবেশ সুন্দর থাকে। মাছ চাষের মাধ্যমে স্ব-নির্ভর হয়ে ওঠার যে বিপুল সুযোগ রয়েছে-কেবলমাত্র কম সচেতনতার কারনে সঠিক অনীহা উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারছে না।তাই মাছ-চাষ মানেই যে সকলকে বড় মাছ ফলাতে হবে তা কিন্তু নয়।
ছোট অথবা মাঝারি মাছের চাষ করে একটি ছোট পুকুর থেকেও এক বছরের মধ্যেই একাধিকবার মাছের ফলন হতে পারে-এতে উৎপাদনশীলতা বরং বেশীই হয়, চাষীর ঝুঁকি কমে, বিনিয়োগের অর্থ তাড়াতাড়ি ফিরে পাওয়া যায় লাভ সমেত এবং সর্বোপরি প্রান্তিক চাষীও কিছুটা নিরাপত্তা পেতে পারেন এই মাছ চাষ থেকে। শুধু জানতে হবে আয়ের জন্য কোন সম্পদটি বাছবো,কেমন হবে কলা-কৌশল,উৎপাদন খরচ কমানো যাবে কিভাবে পরিবেশ কলুষিত হবে না ইত্যাদি। আমাদের প্রত্যেক ব্লকে এখন মৎস্য সম্প্রসারন আধিকারিক রয়েছেন ।তাঁদের পরামর্শ কার্য্যকরী ও প্রাসঙ্গিক।রাজ্যে প্রাকৃতিক সম্পাদের প্রাচুর্য্য, পর্যাপ্ত মিষ্টি জলের সমাহার ,অতি উর্বর আমাদের মাটি, প্রকৃতির দান-অকৃপন সূর্য্যকিরন, অনুকুল তাপমাত্রা,চমৎকার বৃষ্টিপাতের ব্যাপ্তি ও উল্লেখযোগ্যভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মাছ পরিপালনের পরম্পরাগত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ-বান্ধব মাছের ফলনের মাধ্যমে আয়ের উৎসকে কাজে লাগালে ফলে গ্রামীন বিকাশ ও কর্মসংস্থান-দুই সম্ভব। প্রশিক্ষন ও সচেতনতা শিবিরের ব্যবস্থা প্রায়শই হয়ে থাকে পঙ্চায়েত দপ্তর,জেলা কৃষি-বিজ্ঞান কেন্দ্র ,রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মৎস্য সংস্থাগুলিতে।হায়দ্রাবাদে অবস্থিত NFDB-র আর্থিক সহযোগিতাও অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় ও এমনকি মাছ চাষের উপকরন দিয়েও সহায়তার কথা আমরা জেনে থাকি ।
আরও পড়ুনঃ এখন পশু কেনা-বেচা হবে আরও সহজ,ঘরে বসেই এভাবে কেনা যাবে গবাদি পশু
কয়েকটি চাষের উল্লেখ মাত্র করা হলো এখানে-যেমন একটি ছোট পুকুরে কতগুলি মাছ বা সঙ্গে অপ্ল রুই ,কাতলা-র পোনা ছাড়া যেতে পারে ও সেই সঙ্গে একই পুকুরের মধ্যে বাঁশের তৈরি খাঁচা বসিয়ে তার মধ্যে ট্যাংরা কিংবা শিঙিঁ/মাগুর মজুত করা যেতেই পারে।
আরও পড়ুনঃ রঙীন মাছ চাষে তাক লাগাচ্ছে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ষাটোর্ধ বয়সী মহিলা
এদের খাবার হিসাবে বাইরে থেকে যোগান দেওয়া যেতে পারে। টিউবিফেক্স কেঁচো,পিঁপড়ের ডিম অল্প পরিমানে প্রতিদিন একবার দিলেও চলবে,এছাড়া পুকুরের বাটা,রুই ইত্যাদির জন্য গরম জলে ভেজানো বাদাম,তিল খোল ও সঙ্গে চালের পালিশ কুঁড়ো কিংবা মুড়ি ,চিড়ের গুঁড়ো ,স্থানীয় বেকারী থেকে সংগ্রহ করে আনা বিস্কুট ,কেক ,রুটির গুঁড়ো মিশিয়ে চাউমিন আকারে কিংবা ছোট বল তৈরী করে দিতে পারলে (সেও দিনে একবার মাত্র )মাছ সব ভালোই বেড়ে উঠবে । কাকদ্বীপে অবস্থিত CIBA গবেষনা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে দুই কাঠা একটি পুকুরে চাষ করে প্রায় ৪০ কেজি তেলাপিয়া ও সেই সঙ্গে ৬ কেজি ট্যাংরা উৎপাদন করা গিয়েছে মাত্র ছয় মাসের একটি প্রকল্পে। অর্থাৎ দুই-কাঠার একটি পুকুর থাকলেও সেখান থেকে দ্বি-স্তরীয় চাষের মাধ্যমে ছয় মাসেই ১৫০০০ টাকা আয় মিশ্চিত করা সম্ভব ।