এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 18 July, 2020 8:56 PM IST
Turkey Bird Farming

২০১৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনে শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সহায়তায় প্রথম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে টার্কি পাখি চাষের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু। তারপর থেকেই রাজ্য জুড়ে টার্কি পাখি চাষের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের এক বিশেষজ্ঞের কথায়, “ছয়টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে শহরতলিতে টার্কি পাখির চাষ শুরু হয়। ধার হিসেবে ২৫০টি টার্কি পাখির বাচ্চা দেওয়া হয়েছিল। তারপরে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় টার্কি পাখি প্রতিপালন নিয়ে। পাখির খাদ্যের যোগানের জন্য পুকুরে পানার (অ্যাজোলা) চাষ ছাড়াও কোনও রকম রোগ হলে পাখিকে কীভাবে বাঁচাতে হবে তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ফলে, বিভিন্ন জায়গায় টার্কি চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।”

টার্কি দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। এরা পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। পালনের জন্য উন্নত পরিকাঠামো দরকার হয় না। মাংস উৎপাদনের দিক থেকে খুবই ভালো (৬ মাস বয়সে ৫-৬ কেজি)। পাখির মাংস হিসেবে এটা মজাদার এবং কম চর্বিযুক্ত। তাই অন্যান্য মাংসের বিকল্প হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকের ব্রয়লার মুরগির মাংসের ওপর অনীহা আছে। তাদের জন্য টার্কি হতে পারে সেরা পছন্দ।

টার্কি পাখি পরিচিতি : 

আমাদের দেশের অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে পশুপাখি পালন অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। আবার কিছু প্রাণী আছে যারা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আর টার্কি পাখি সে রকম একটি সহনশীল জাত, যে কোনো পরিবেশ দ্রুত এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এরা বেশ নিরীহ ধরনের পাখি, মুক্ত অথবা খাঁচা উভয় পদ্ধতিতে পালন করা যায়। ৬-৭ মাস বয়স থেকে ডিম দেয়া শুরু করে এবং বছরে ২-৩ বার ১০-১২টি করে ডিম দেয়। একটি মেয়ে টার্কির ৫-৬ কেজি এবং পুরুষ টার্কি ৮-১০ কেজি ওজন হয়। এদের মাংস উৎকৃষ্ট স্বাদের। ঘাস, পোকামাকড়, সাধারণ খাবার খেতে এরা অভ্যস্ত, তবে উন্নত খাবার দিলে ডিম ও মাংসের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। ৪-৫ মাস বয়সের টার্কি ক্রয় করা ভালো, এতে ঝুঁকি কম থাকে এবং লিঙ্গ নির্ধারণ সহজ হয়। প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে শুরু না করে ৮-১০ জোড়া দিয়ে শুরু করা ভালো, কারণ তাতে সুবিধা অসুবিধাগুলো নির্ণয় করা সহজ হয়।

রোগবালাই : 

টার্কি পাখির তেমন বড় কোনো রোগবালাই নেই। চিকেন পক্সের টিকা নিয়মিত দিলে এ রোগ এড়ানো সম্ভব। অতি বৃষ্টি বা বেশি শীতের সময় মাঝে মাঝে ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা যায়, রেনামাইসিন জাতীয় ওষুধ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে নিয়োমিত টিকা দিলে এসব রোগ থেকে সহজেই টার্কিকে রক্ষা করা যায়।

Turkey Bird

টার্কি পালনের সুবিধা -

  • এদের মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক, টার্কি ব্রয়লার মুরগির থেকে দ্রুত বাড়ে
  • ঝামেলাহীনভাবে দেশি মুরগির মতো পালন করা যায়; অল্প পুঁজিতে একটি আদর্শ টার্কির খামার করা যায়
  • টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ কম, দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস, লতা-পাতা খেতেও পছন্দ করে
  • টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির শোভাবর্ধন করে
  • টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, চর্বি কম। তাই গরু কিংবা খাসির মাংসের বিকল্প হতে পারে
  • টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই ও ফসফরাস থাকে। এ উপাদানগুলো মানব শরীরের জন্য উপকারী এবং নিয়মিত এ মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়
  • টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • অন্যান্য পাখির তুলনায় রোগবালাই কম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে খামারে ঝুঁকি অনেক কমে যায়
  • উচ্চমূল্য থাকায় খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশি

পালন পদ্ধতি -

দুইভাবে টার্কি পালন করা যায়- ০১. মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি ও ০২. নিবিড় পালন পদ্ধতি

মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি -

মুক্ত চারণ পদ্ধতিতে এক একর ঘেরা জমিতে ২০০-২৫০টি পূর্ণ বয়স্ক টার্কি পালন করা যায়। রাতে পাখিপ্রতি ৩-৪ বর্গফুট হারে জায়গা লাগে। চরে খাওয়ার সময় তাদের শিকারি জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ছায়া ও শীতল পরিবেশ জোগানর জন্য খামারে গাছ রোপণ করতে হবে। চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে এতে পরজীবীর সংক্রমণ কম হয়। সুবিধা : খাবারের খরচ ৫০ শতাংশ কম হয়; স্বল্প বিনিয়োগ : খরচের তুলনায় লাভের হার বেশি।

মুক্ত চারণ ব্যবস্থায় খাবার -

টার্কি খুব ভালোভাবে আবর্জনা খুঁটে খায় বলে এরা কেঁচো, ছোট পোকামাকড়, শামুক, রান্নাঘরের বর্জ্য ও উঁইপোকা খেতে পারে, যাতে প্রচুর প্রোটিন আছে ও যা খাবারের খরচকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়।  এছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য যেমন লুসার্ন, ডেসম্যান্থাস, স্টাইলো এসব খাওয়ানো যায়। চরে বেড়ানো পাখিদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হওয়া আটকাতে খাবারে ঝিনুকের খোলা মিশিয়ে সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম হিসাবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। খাবারের খরচ কম করার জন্য শাকসবজির বর্জ্য অংশ দিয়ে খাবারের ১০ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্য রক্ষা -

মুক্তচারণ ব্যবস্থায় পালিত টার্কির অভ্যন্তরীণ (গোল কৃমি) ও বাহ্য (ফাউল মাইট) পরজীবী সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে। তাই পাখিদের ভালো বিকাশের জন্য মাসে একবার ডিওয়ার্মিং ও ডিপিং করা আবশ্যক।

নিবিড় পালন পদ্ধতি -

বাসস্থান টার্কিদের রোদ, বৃষ্টি, হাওয়া, শিকারি জীবজন্তু থেকে বাঁচায় ও আরাম জোগায়। অপেক্ষাকৃত গরম অঞ্চলগুলোতে খামার করলে ঘরগুলো লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে। খোলা ঘরের প্রস্থ ৯ মিটারের বেশি হওয়া চলবে না। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা ২.৬ থেকে ৩.৩ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে। বৃষ্টির ছাঁট আটকাতে ঘরের চালা এক মিটার বাড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরের মেঝে সস্তা, টেকসই, নিরাপদ ও আর্দ্রতারোধক বস্তু যেমন কংক্রিটের হওয়া বাঞ্ছনীয়। কম বয়সি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির ঘরের মধ্যে অন্তত ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পাশাপাশি দুটি ঘরের মধ্যে অন্তত ২০ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে টার্কি পালনের সাধারণ পরিচালনা ব্যবস্থা মুরগি পালনেরই মতো, তবে বড় আকারের পাখিটির জন্য যথাযথ বসবাস, ওয়াটারার ও ফিডারের জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সুবিধা -

উন্নত উৎপাদন দক্ষতা; উন্নততর পরিচালন ও ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ।

নিবিড় পালন ব্যবস্থায় খাদ্য -

নিবিড় পালন ব্যবস্থায় টার্কি মুরগিকে ম্যাশ ও পেলেট (ট্যাবলেট) দুইভাবেই খাবার দিতে হবে। মুরগির তুলনায় টার্কির শক্তি, প্রোটিন ও খনিজের প্রয়োজন বেশি। সেজন্য টার্কির খাবারে এগুলোর আধিক্য থাকতে হবে। খাবার মাটিতে না দিয়ে ফিডারে দিতে হবে। যেহেতু পুরুষ ও মাদির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তির (এনার্জি) পরিমাণ আলাদা, তাই ভালো ফল পাওয়ার জন্য তাদের পৃথকভাবে পালন করতে হবে। টার্কিদের সব সময় অবিরাম পরিষ্কার পানির প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে ওয়াটারারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে এবং আপেক্ষতৃক ঠাণ্ডা সময়ে খাবার দিতে হবে। পায়ের দুর্বলতা এড়াতে দিনে ৩০-৪০ গ্রাম হারে ঝিনুকের খোসার গুঁড়া দিতে হবে এবং খাবারে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে তা আস্তে আস্তে করতে হবে।
সবুজ খাদ্য -

নিবিড় পদ্ধতিতে ড্রাই ম্যাশ হিসাবে মোট খাদ্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সবুজ খাবার দেয়া যায়। সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুসার্ন প্রথম শ্রেণীর সবুজ খাদ্য। এছাড়া খাবারের খরচ কম করার জন্য ডেসম্যান্থাস ও স্টাইলো কুচি করে টার্কিদের খাওয়ান যেতে পারে।
বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি মুরগি পালন দিনে দিনে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। টার্কি বাণিজ্যিক মাংস উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়। তারা দেখতে খুব সুন্দর হয় এবং আপনার বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে করতে সাহায্য করে। টার্কি মুরগি দ্রুত বড় হয়ে যায় এবং ব্রয়লার মুরগির মতো খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অন্যান্য পরিস্থিতিতে টার্কি মুরগি পালনের জন্য খুবই উপযুক্ত। এগুলোর পালন মুরগির মতো খুব সহজ। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি পালন-ব্যবসা করে ভালো মুনাফা অর্জনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। একটুখানি সচেতনতা, সরকারি গবেষণা এবং ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক অংশগ্রহণে এ টার্কিই হয়ে উঠতে পারে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যম এমনকি ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উপায়।

সুব্রত সরকার

Image Source - Google

Related Link - (SBI Gold Loan) স্বল্প সুদে কৃষি স্বর্ণ লোণ নিতে চান? কৃষকবন্ধুরা আবেদন করুন এই পদ্ধতিতে

হিরো নিয়ে এল অভিনব অ্যাম্বুলেন্স বাইক (Hero ambulance bikes), বাইকেই পাওয়া যাবে এবার অ্যাম্বুলেন্সের পরিষেবা

(WB Job Vacancy) ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপাল সার্ভিস কমিশন সার্জেন্ট পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল রাজ্য সরকার

English Summary: Turkey rearing is a means of self-employment
Published on: 18 July 2020, 12:13 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)