ব্ল্যাকবেঙ্গল ও বনরাজা এই দুই জাতের ছাগল ও মুরগিপালন করে লাভের মুখ দেখছে জেলায় জেলায় বহু পরিবার। রাজ্য সরকারের তরফে নিখরচায় মুরগির ছানা ও ছাগলের বাচ্চা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রসার ঘটছে গ্রামীণ অর্থনীতির। বাড়ছে কর্মসংস্থান। ন্যাশনাল ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে মুরগি ও ছাগল পালনের মাধ্যমে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের পাশাপাশি ঝাড়গ্রামের বিনপুর, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনে আদিবাসী উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাণী বিতরণ (Distribution of animals in remote areas) -
রাজ্য প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে রাজ্যের ছ’টি জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রাণী পালনের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার উন্নয়নে প্রকল্প চলছে। হাঁস-মুরগি, ছাগল ও শূকর পালনের মাধ্যমে কীভাবে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব, তা নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে কর্মশালার।
দুই ২৪ পরগনার পাশাপাশি বর্ধমান, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া জেলায় প্রাণী পালনের মাধ্যমে আর্থিক স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির প্রকল্প চলছে। প্রত্যেককে চারটি করে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, ২০টি করে বনরাজা মুরগি ও ৩টি করে ঘুঙরু প্রজাতির শূকর দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৮৩ জনকে প্রাণী দেওয়া হয়েছিল। এবার দেওয়া হয়েছে ২৪৬ জনকে। আগামী বছর আরও দু’টি নতুন জেলা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবে। শুধু ছাগল, মুরগি কিংবা শূকর দেওয়া নয়, সেগুলির খাবার, টিকা এবং সারাবছর চিকিৎসা শিবির করা হচ্ছে। ন্যাশনাল ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানিয়েছেন ছাগল ও মুরগি পালনের মাধ্যমে গ্রামের বহু পরিবার স্বনির্ভর হচ্ছে। তাদের তরফে ধারাবাহিকভাবে বিনামূল্যে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে সেসব দেওয়া হচ্ছে।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে খামারের পাশাপাশি চারণভূমি থাকলে সুবিধা বেশি। এতে খাবারের খরচ কমে। পুরুলিয়া এলাকার বহু পরিবার এই ছাগল পালন করে লাভের মুখ দেখেছে। প্রকল্পের সুফল পাওয়া পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ক্রমেই কৃষিজমির সংকোচনের ফলে ও জলের অভাবে বছরে একবার মাত্র চাষ হয়। ফলে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে পাহাড় ঘেরা জঙ্গল এলাকায় পশুপালনের ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের অনুকূল আবহাওয়া রয়েছে এ রাজ্যে। বছরে দু’বার বাচ্চা হয়। প্রতিবারে এক থেকে পাঁচটি বাচ্চা হয়ে থাকে। কৃত্রিম প্রজননে জোর দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে হিমায়িত ছাগ বীজ। শুধুমাত্র দানা খাবারের উপর ভরসা করে ছাগল পালন করলে খরচ বেড়ে যায়। সেজন্য ঘাস চাষ করা যেতে পারে। গ্রীষ্ম-বর্ষায় ভুট্টা, শীতে ওটস ছাড়াও গিনি, লুসান, হাইব্রিড নেপিয়ার ঘাস চাষ করতে পারলে ভালো।
ভাইরাস ঘটিত রোগ প্রতিরোধে বছরে একবার পিপিআর টিকা দিতে হবে ছাগলকে। সবসময় টাটকা ও পরিচ্ছন্ন খাবার দেওয়া দরকার। খাওয়াতে হবে পরিস্রুত জল। খামারে চুন ও ব্লিচিং ছড়াতে হবে। পাটাতনের উপর রাখলে ছাগল ভালো থাকে। খামার সবসময় হাল্কা ঘেরা দিতে হবে। কোনও ছাগল অসুস্থ হলে আলাদা রাখতে হবে তাদের। পুরুষ ছাগল নির্বিজকরণ করাতে হবে। এর সুবিধা হল, ছাগলের বৃদ্ধি ভালো হয়। শরীরে কটূ গন্ধ কম হয়। উন্নত হয় চামড়ার মান। মাংস আরও সুস্বাদু হয়। বনরাজা জাতের পাশাপাশি রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) প্রজাতির মুরগিও দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের তরফে। এই জাতের মুরগি মাসে অন্তত ২০টি ডিম দেয়। পাঁচ মাসের মধ্যে সাড়ে চার কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। খামারের পাশাপাশি ছেড়েও পোষা যায় এই মুরগি। অ্যাজোলা, চালের খুদ, ভুট্টার দানা, সব্জির খোসা খাবার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন - Fish Disease – মাছ চাষে রোগ দেখা দিলে কি করবেন? কেন হয় মাছের রোগ? জানুন মাছ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য
মনে রাখবেন, পালিত প্রাণীকে সবসময় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা উচিত। গরমের সময় অবশ্যই ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানীয় সরবরাহ করতে হবে। জলের সাথে অনেক সময় জীবাণুনাশক মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে এই বৃষ্টির সময়ে মেঝে যাতে ভিজে না যায় বা ঘর যাতে স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আরও পড়ুন - Profitable Goat Rearing - এই প্রজাতির ছাগল পালন আপনাকে দেবে সবচেয়ে বেশী মুনাফা