কৃষিজাগরন ডেস্কঃ মাছের ডিম পোনা নিষিক্ত হওয়ার তিন দিন পর থেকে বাইরের খাবার খেতে শুরু করে, এই খাবার হল উদ্ভিদ কণা ও প্রানী কণা। পুকুরে স্বাভাবিক ভাবে এরা জন্মায় এবং উদ্ভিদকণার বেড়ে ওঠা নির্ভর করে মূলত সাংলোক সংশ্লেষণের উপর। উদ্ভিদকণা কিছু মাছের খাদ্য হিসাবে সরাসরি ব্যবহৃত হয় যেমন সিলভার কার্প, গ্রাস কাপ ইত্যাদি। এছাড়া পুকুরে প্রানীকণা বেচে থাকে উদ্ভিদকণা খেয়ে, আবার এই প্রানীকণাই হল প্রায় সমস্ত মাছেরই খুব পছন্দের প্রাকৃতিক খাবার। পুকুরে এদের পাওয়া গেলেও হ্যাচারীতে যেখানে মাছের ডিম ফুটিয়ে ডিম পোনা উৎপন্ন হয় সেখানে কিন্তু এরা প্রায় থাকে না বললেই চলে।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ১০০ মাইক্রন মেস সাইজের প্ল্যাঙ্কটন নেটের সাহয্যে প্রাণীকণা সংগ্রহ করে ডিম পোনাকে খাওয়ানোর প্রথা ছিল। পরে দেখা যায় এই পদ্ধতিতে সংগৃহীত খাদ্যকণার সাথে ক্ষতিকারক পরজীবি যেমন লার্নিয়া, আরগুলাস ইত্যাদি চলে এসে ডিম পোনার ক্ষতি করে। এ ছাড়া এই পদ্ধতিতে সংগৃহীত খাদ্যকণা সব সময়ে যে পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা থাকে না। সেই কারনে আজকাল ঘেরাপের মধ্যে সাবধানতা অবলম্বন করে ছোট জায়গার মধ্যেই প্রাণীকণা যেমন রোটিফারের ব্রাকিওনাস) চাষ সহজেই করা যায়। রোটিফারের খাবার হিসাবে পাশেই অন্য একটি ঘেরাটোপের মধ্যে ক্রোরেলা (আনুবিক্ষনীক এই শৈবালের পরিমাপ ৫-২৫ মাইক্রন হয়) চাষ করে নিলে হ্যাচারীতে শুধু নয় নারসারি বা আঁতুড় পুকুরেও সমস্ত মাছের পোনাকে খাওয়ানো সম্ভব। যাঁরা রঙিন মাছ চাষ করছেন তাদের কাছে তো এই ধরনের প্রাণীকণার গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও পড়ুনঃ মাছ চাষের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের কয়েকটি পন্থা
বিভিন্ন উদ্ভিদকণা যে সূর্যকিরনের সহায়তায় সালোক সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে শুধু যে নিজের খাদ্যই শুধু উৎপন্ন করে তাই নয় সেই সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেনও উৎপন্ন হয় যা মাছ সহ সমস্ত জলজ প্রাণীকে বেচে থাকতে সহায়তা করে। উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার ভারসাম্য পুকুরের সুস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত দেয়। এদের ভারসাম্যের কারনে একটি মৃদু আচ্ছাদন সৃষ্টি হয় যা পুকুরে অনেক অবাঞ্ছিত শৈবালকে জন্মাতে দেয় না, কারন অবাঞ্ছিত শৈবালের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে পুকুরের পরিবেশ মাছ চাষের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে।
কিছু শৈবাল আছে যেমন মাইক্রোসিসটিস, অ্যানাবিনা, নষ্টক ইত্যাদি মাছের পক্ষে একবারেই ভালো না। তাদের আধিক্যের একটি কারণ জলে কোনো কারনে ফসফরাস ও কিছু জৈব পদার্থের আধিক্য হয়ে যাওয়া। খুব সাধারণ ভাবে পুকুরের জলে প্ল্যাঙ্কটনের উপস্থিতির পরিমাপ করা হয় প্ল্যাঙ্কটন নেটের সাহায্যে ৫০ লিটার জল ছেকে নিয়ে দেখা হয় যে তাতে ১-১৫ মিলি প্ল্যাঙ্কটন পাওয়া যায় কিনা। এছাড়াও সেকচি ডিস্ক নামক এক গোলাকার ধাতব প্লেট যুক্ত স্কেল ব্যবহার করে (যাতে পর্যায় ক্রমে সাদা এবং কালো রঙ করা থাকে এবং প্লেটের সঙ্গে ১৫ মিটার লম্বা কাঠের স্কেল লাগানো থাকে)। পুকুরের জলে সেকচি ডিস্কের দৃশ্যতা ৩০-৪০ সেমি হলে ধরে নেওয়া হয় পুকুরে প্ল্যাঙ্কটনের উপস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এই দৃশ্যতা যদি ৬০ সেমির বেশি হয় তখন বোঝা যাবে জলে খাদ্যকণার ঘাটতি আছে এবং পর্যায়ক্রমে জৈব সার প্রয়োগে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে হবে। যদি কোনো ভাবে এই দৃশ্যতা আরো কমে তাহলে ধরে নেওয়া যায় পুকুরে এই প্রাকৃতিক খাদ্যকণা আধিক্য হয়েছে যা ভবিষ্যতে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কৃষকরা গ্রামে এই ৩টি ব্যবসা শুরু করতে পারেন, বাম্পার আয় করতে পারবেন
এই প্রাকৃতিক খাদ্যকণা শিশু মায়ের ক্ষেত্রে অনেকটা মাতৃ দুদ্ধের মতো। হয়তো তা পুরোপুরি মায়ের পুষ্টি যোগাতে নাও পারে কখনো সে ক্ষেত্রে মাছ চাষী সাধারনত বাদাম খোলের গুঁড়ো ও চালের মিহি কুঁড়ো মিশিয়ে হাতে করে ছড়িয়ে দেন। ডিম পোনা থেকে ধানী পোনা পালন (১৫ দিনের চাষ) এবং ধানী পোনা থেকে চারা পোনা পালনের (তিন মাসের চাষ) সময়েও এই পাকৃতিক খাদ্যকণা নিয়মিত সরবরাহ করা গেলে মাছের বাড় বৃদ্ধি খুব ভাল হয়। সে জন্যেই এই জীবন্ত খাদ্যকণা পুকুর পাড়ে তৈরী করা বিশেষ প্রয়োজন। ছবিতে দেখানো হল কীভাবে ক্রোরেলা এবং রোটিফার চাষ করা যেতে পারে। এতো গেল আমাদের কার্প জাতীয় পোনা গুলির চাষের শুরুর কথা। যাঁরা শিঙি, মাগুর, পাবদা, ট্যাংরা এই সব মাছের ধানীপোন। চারাপোনা এবং আঙুলেপোনা উৎপাদনে অগ্রগ্রহী তারা অবশাই ছোট লাল কেচো যা টিউবিফেক্স নামে পরিচিত তার ছোট করে চাষ ও পাশাপাশি অবাহ্যত রাখবেন যেমন ছবিতে দেখানো হল। এতে এই ক্যাটফিস গুলি খেতে পারবে এবং শক্ত পোক্ত হয়ে বেড়ে উঠবে। এই সময়ে যদি লাল পিঁপড়ের ডিম এনের প্রাথমিক খাদ্য হিসেবে জোগান দেওয়া হয় এবং তারও পরে মাছের গুঁড়ো মেশানো ফরমুলা খাবার আনফলো অবদ্যুয়ে সরবরাহ করা গেলে এদের চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ হতে পারে এবং এদের বাঁচার হারও অনেক বেশি থাকবে।
Share your comments