কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে তাদের আর্থিক সমস্যা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ‘বাংলা শস্য বীমা যোজনা’ প্রকল্প প্রচলন করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সরকার কৃষকদের ফসলের প্রিমিয়াম প্রদান করবে। কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং অন্যান্য কারণে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণের উদ্দেশ্যে এই বীমার প্রচলন করেছে সরকার। তাই সকলেরই এই বীমা গ্রহণ করা জরুরী। সরকার ও বীমা সংস্থাগুলির মধ্যে চুক্তি অনুসারে, সকল বীমা সংস্থা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লকে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করছে।
এই বছর মহামারী পরিস্থিতিতে সরকার কৃষকদের বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এই বছর ফসলের বীমা করলে প্রিমিয়ামের খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। বাংলা শস্য বীমা ২০১৯ প্রকল্পে অথবা কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত কৃষকদের বীমা সরাসরি হয়ে যাবে। অবশিষ্ট কৃষকরা ফসলের বীমার জন্য যোগাযোগ করুন এই নম্বরে – ১৮০০-৫৭২-০২৫।
নিজের নাম তালিকায় রয়েছে কি না অথবা স্থিতি পরীক্ষা করতে বাংলা শস্য বীমা পোর্টাল- https://banglashasyabima.net/- এ কৃষক নিজের ভোটার কার্ড নম্বর দিয়ে যাচাই করতে পারেন।
২০১৯-২০ বর্ষ থেকে বাংলা শস্য বীমা যোজনায় যে নতুন বিষয়গুলির সংযোজন ঘটেছে -
- কেসিসি (Kisan Credit Card) থাকলে লোণ এবং বীমা দুটির জন্য আবেদন করাই সহজ হবে। তবে নতুন নির্দেশিকা অনুসারে কেসিসি না থাকলেও এই বীমা করা যাবে।
- ২০১৯-২০ বর্ষেই বাঁকুড়া জেলার রবি মরসুমে বোরো ধান, গম, মুসুর, সরিষা, তিল, চীনাবাদাম এবং আলু- এই শস্যগুলি বীমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- রবি মরসুমে বোরো ধান, গম, মুসুর, সরিষা, তিল, চীনাবাদাম- এই শস্যগুলি বীমার প্রিমিয়ামের সম্পূর্ণ অর্থ পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিবহন করছে।
- শুধুমাত্র আলু এবং আখ এই দুটি বাণিজ্যিক ফসলের জন্য কৃষককে সর্বাধিক ৪.৮৫% প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে। অবশিষ্ট প্রিমিয়াম রাজ্য সরকার বহন করবে।
কারা আবেদনের যোগ্য (Eligibility) -
- কৃষককে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- জমির মালিক/ভাগচাষী সকলেই বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন।
- এই স্কিম অনুসারে, আবেদনকারীরা ফসলের ক্ষতির সম্মুখীন হলে কেবল বীমা কভারেজ পাবেন বলে সুবিধাভোগীকে কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতির সঠিক প্রমাণ এবং জমির দলিল সহ প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে।
কোথায় কোথায় পাওয়া যাবে এই সুবিধা –
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দার্জিলিং, কালিম্পং, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, মালদহ, হুগলী, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, বীরভূম, পুরুলিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা ইত্যাদি জেলায় এই সুবিধা উপলব্ধ।
আবেদন পদ্ধতি (Application procedure) –
অনলাইন আবেদন পদ্ধতি –
অনলাইনে এই ‘বাংলা ফসল বীমা’ যোজনার আবেদন করতে হলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট ‘মাটির কথা’ থেকে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। নিম্নে তার লিঙ্ক দেওয়া হল-
এই প্রকল্পে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কৃষক উপরোক্ত লিঙ্কে ক্লিক করে ফার্মার কর্নার-এ নিজের নাম নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় তথ্য পরস্পর পূরণ করে সাবমিট করতে পারেন।
অফলাইন আবেদন পদ্ধতি -
অফলাইনে আবেদনের জন্য এই ফর্ম কৃষকরা নিকটবর্তী গ্রাম পঞ্চায়েত, কিষাণ মান্ডি বা ব্লক অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
ফর্ম পূরণ -
কৃষকের নাম, পিতার/স্বামীর নাম, ঠিকানা- মৌজা/গ্রামের নাম ইত্যাদি তথ্য কৃষককে পূরণ করতে হবে। অধিসূচিত ফসল অর্থাৎ কোন ফসলের জন্য বীমা করছেন, জমির পরিমাণ এবং জমির দলিল, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস, কৃষকবন্ধু প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকলে তার নম্বর ইত্যাদি সকল তথ্য বিশদে পূরণ করার পর ফর্মে কৃষকের নিজস্ব স্বাক্ষর করতে হবে অথবা আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এরপর তা জমা দিন।
বিশদ তথ্যের জন্য, (ADA) অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন বা টোল ফ্রি নাম্বারে ১৮০০-১০৩-১১০০ কল করতে পারেন।
সরকারের এই উদ্যোগে বন্যা, খরায় ফসলের ক্ষতির চিন্তা থেকে কৃষক থাকবেন নিশ্চিন্ত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য - আমন ধান-এর বীমা করার শেষ তারিখ – ৩১/০৮/২০২০।
Image source - Google
Related link - (Kisan Credit Card) কেসিসি রয়েছে অথচ লোণ পাননি? যোগাযোগ করুন এই নম্বরে
(Dragon fruit cultivation) সর্বরোগহারা ফল -ড্রাগন ফল, লাভজনক ড্রাগন ফল চাষের সম্পূর্ণ তথ্য