বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনার দ্বারা সৃষ্ট লকডাউনের ঘটনায় ব্যাংক ও বড় সংস্থাগুলিও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দিনের পর দিন ক্রমাগত ব্যাঙ্কগুলিতে সুদের হার কমেই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত হল পোস্ট অফিসে টার্ম ডিপোজি্ট, রেকারিং ডিপোজি্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা। অর্থাৎ ভারত সরকার সমর্থিত ছোট ছোট সঞ্চয় প্রকল্পের মধ্যে পোস্ট অফিসের স্কিমগুলি এখন অর্থ বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। উক্ত প্রকল্পটি মধ্য-মেয়াদী বিনিয়োগের বিকল্প হিসাবে কাজ করে; যার মধ্যে, বিনিয়োগকারীদের তাদের আমানত কমপক্ষে ৫ বছরের জন্য সক্রিয় রাখতে হবে। এতে আপনি প্রতি মাসে ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা দিয়ে ভাল পরিমাণ অর্থ সুদ সমেত ফেরত পাবেন এবং আপনার অর্থও এতে নিরাপদ থাকবে।
১) ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (National Savings Certificates)-
যদি আপনি পাঁচ বছরের মেয়াদে আমানত করতে চান সে ক্ষেত্রে সেরা পছন্দ হতে পারে পোস্ট অফিসের ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট। এই স্কিমে বর্তমানে ৬.৮ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যচ্ছে। যেখানে ব্যাংকে ৫ বছর মেয়াদের আমানতে সুদের হার অনেক কম। পাঁচ বছর মেয়াদের স্থায়ী আমানতে মাত্র ৫.৪ শতাংশ সুদ দেয় স্টেট ব্যাংক। এ কথা ঠিক, পরিষেবা এবং প্রযুক্তির দিক থেকে পোস্ট অফিসের তুলনায় ব্য়াংকগুলি অনেক এগিয়ে। কিন্তু NSC-র ক্ষেত্রে নিয়মিত পরিষেবার প্রয়োজন নেই বললেই চলে। সাধারণত এটি একবারই কিনতে হয় এবং একবার ভাঙাতে হয়।
২) কিষাণ বিকাশ পত্র (Kisan Vikas Patra) -
কিষাণ বিকাশ পত্র মানুষকে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করতে সহায়তা করে। KVP ভারত সরকার ২০১৪ সালে পুনরায় এটি প্রচলন করেছে। বর্তমান সুদের হার বার্ষিক ৭.৩ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হয়। এই প্রকল্পে বিনিয়োগের সর্বাধিক সীমা নেই।
৩) সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্প (Sukanya Samriddhi Yojana) -
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রকল্পটি কন্যা সন্তানদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য প্রচলন করা হয়েছিল। এই প্রকল্পটি ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রচারের অধীনে চালু করেছিলেন। দশ বছর বয়স হওয়ার আগেই তার জন্ম থেকে যে কোনও সময় কন্যা সন্তানের নামে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। এই প্রকল্পের জন্য সর্বনিম্ন বিনিয়োগের পরিমাণ প্রতি বছর ১০০০ টাকা।
৪) সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS)
আপনি যদি প্রবীণ নাগরিক হন, সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের পরিবর্তে আপনার অগ্রাধিকার হতে পারে পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (Senior Citizen Savings Scheme)। এই প্রকল্পে গচ্ছিত আমানতে ৭.৪ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে। কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কথা ছেড়েই দিন, বড় কোনও বেসরকারি ব্যাংক এই হারে সুদ দিচ্ছে না। প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে ৫ বছর মেয়াদের স্থায়ী আমানতে মাত্র ৫.৯ শতাংশ সুদ দিচ্ছে SBI। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা স্বল্প সঞ্চয়ে ভালো রিটার্ন চাইলে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম বেছে নিতে পারেন।
৫) RD Scheme -
পাঁচ বছরের পোস্ট অফিস পুনরাবৃত্তি আমানত অ্যাকাউন্ট (আরডি) এই অ্যাকাউন্টে ৬.৯ শতাংশ সুদের হার দেওয়া হয় পি.এ. (ত্রৈমাসিক যৌগিক) এই অ্যাকাউন্টে সর্বাধিক জমার সীমা নেই। পোস্ট অফিস আরডি অ্যাকাউন্টটি একজন নাবালিকের নামে খোলা যেতে পারে এবং ১০ বছর বা তার বেশি বয়সের নাবালক অ্যাকাউন্টটি খুলতে এবং পরিচালনা করতে পারে। এক বছরের পরে ভারসাম্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রত্যাহারের অনুমতি রয়েছে।
৬) পোস্ট অফিসের মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প -
এই স্কিমে আপনি সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এই প্রকল্পের পরিপূর্ণ হওয়ার সময়কাল ৫ বছর। বিশেষ বিষয় হল এই স্কিমটি সরকারের প্রকল্প হওয়ায় ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত বিনিয়োগের জন্য এবং এতে বিনিয়োগ করলে আয়কর থেকেও ছাড় পাওয়া যায়।
তবে সম্প্রতি পোস্টঅফিসের সেভিংস অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে একাধিক নিয়মে বদল আনা হয়েছে এবং এই নতুন নিয়ম না মেনে চললেই বড় সমস্যার মুখে পড়তে পারেন গ্রাহকরা।
কি সেই নিয়ম ?
১) পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্স ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
২) ন্যূনতম ৫০০ টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে না থাকলে বছরের শেষে ১০০ টাকা করে পেনাল্টি চার্জ নেওয়া হবে।
৩) অ্যাকাউন্টে যদি শূন্য ব্যালেন্স থাকে, তাহলে নিজে থেকেই এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।
বর্তমানে সেভিংস অ্যাকাউন্ট ৪ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। এর পাশাপশি পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড সংযুক্তকরণও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আধার লিঙ্ক করা থাকলে সরকারি অনুদানের লাভ এই অ্যাকাউন্টেই পেয়ে যাবেন।
Image source - Google
Related link - (POMIS) সরকারের এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে আপনিও পাবেন প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা
মাসে ৫০০০ টাকার নিশ্চিত পেনশন পাবেন সরকারের এই প্রকল্পে