প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা “ (PM Fasal Bima Yojana) নামে কৃষকদের কল্যাণের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি অনুমোদিত করেছিলেন | এই বীমা কৃষকদের জন্য খুবই সহায়ক | তবে, অনেক কৃষকবন্ধু হয়তো এই বীমা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জেনে উঠতে পারেননি | এটি উল্লেখ্য জরুরী যে, ফসল বীমা স্বেচ্ছাসেবী এবং তার ফসল বীমাকরণ করা বা না করা কৃষকদের সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত।
প্রতিবছর বন্যা, ঝড়, শিলাবৃষ্টি, ভারী বৃষ্টিপাত বা খরার কারণে কৃষকের ফসল বিনষ্ট হয়। ফসলকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রীর ফসল বীমা যোজনা (PMFBY) প্রচলন করে। এই স্কিমটি ১৩ ই জানুয়ারী ২০১৬ এ চালু হয়েছিল। এই নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো;
এই কর্মসূচির মূল বিষয় (Purpose of PMFBY):
এই বিমার জন্য কৃষকদের খরিফ শস্যের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে মাত্র ২ শতাংশ এবং রবিশস্যের ক্ষেত্রে ১.৫ শতাংশ হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। বার্ষিক বাণিজ্যিক এবং উদ্যানজাত ফসলের ক্ষেত্রে কৃষকদের মাত্র ৫ শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হবে। অত্যন্ত অল্প প্রিমিয়ামযুক্ত এই বিমা প্রকল্পের প্রিমিয়ামের অবশিষ্ট অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফসল নষ্ট হলে কৃষকরা বিমাকৃত অর্থের পুরোটাই ফেরৎ পাবেন। এই প্রকল্পে সরকারি ভর্তুকির কোনও সর্বোচ্চ সীমা থাকবে না। এমনকি, এই বিমা প্রিমিয়ামের অবশিষ্টাংশ ৯০ শতাংশ হলেও সরকারই তা বহন করবে। এর আগে শস্য বিমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ভর্তুকি হারের সর্বোচ্চ সীমা থাকায় কৃষকরা কম পরিমাণে বিমাকৃত অর্থ পেতেন। বিমার ক্ষেত্রে ভর্তুকিবাবদ সরকারের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নতুন বিমা প্রকল্পে প্রিমিয়ামের ভর্তুকির সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়ার ফলে কৃষকরা বিমাকৃত ফসলের পুরো অর্থই পাবেন। এই বিমার প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হবে। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে ফসল তোলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং আপলোড করা হবে। ফলে, কৃষকদের শস্য বিমার অর্থ পেতে আর বিলম্ব হবে না। এছাড়া, ফসল সংগ্রহে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দূরসংবেদী ব্যবস্থা কাজে লাগানো হবে |
কিভাবে আবেদন করবেন (How to apply)?
যে কৃষকরা তাদের ফসলের বীমা করতে চান, তারা প্রধানমন্ত্রীর ফসল বীমা যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন – https://pmfby.gov.in/। হোমপেজের ফার্মার্স কর্নার-এ ক্লিক করুন | এখন আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে লগইন করুন এবং আপনার যদি অ্যাকাউন্ট না থাকে তবে Guest Farmer হিসাবে লগইন করুন | নাম, ঠিকানা, বয়স, রাজ্যের মতো প্রয়োজনীয় সমস্ত বিবরণ লিখুন। শেষে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। আবার, কৃষকরা তাদের নিকটস্থ ব্যাঙ্কে গিয়েও এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র (Documents):
এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে হলে কৃষকদের কিছু প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা করতে হবে,
প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, আধার কার্ডের মতো কৃষকের পরিচয় প্রমাণ পত্র। ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট বা আধার কার্ডের মতো ঠিকানার প্রমাণ পত্র। জমির খসড়া নম্বর/ অ্যাকাউন্ট নম্বরটির ফটো কপি প্রয়োজন। আপনাকে জমিতে ফসলের বপনের প্রমাণ সরবরাহ করতে হবে। সকল নথি সহ একটি বাতিল চেক প্রয়োজন।
আরওপড়ুন - আপনি কি পিএম কিষাণের কিস্তি পাননি? জানুন কোথায় যোগাযোগ করলে পাবেন এই অর্থ
কৃষকদের ফসলের নিরাপত্তা বাড়াতে এবং ফসল বীমার সর্বাধিক সুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে ভারত সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এটি ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটে ৩০৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা দেশে কৃষি ক্ষেত্রের অগ্রগতির প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ