ত্বকে প্রতিদিন মধু লাগালে নানারকমের উপকারিতা পাওয়া যায়। মধু দিয়ে নানারকমের প্যাক তৈরী করা যায় যা ত্বকের কালো দাগ, ছোপ বা বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের বিভিন্ন সমস্যা তেও মধুর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আসুন বিস্তারিতভাবে ত্বক ও চুলের জন্যে মধুর উপকারিতা দেখে নেওয়া যাক:
ত্বকের জন্য মধুর উপকারিতা (Health Benefits) -
১. ব্রণর জন্যে মধু:
মধু ত্বকের ধুলো, ময়লা বা যেকোনো বিষাক্ত পদার্থগুলোকে শুষে নিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। মধু ত্বকের জন্যে এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে ও ত্বককে নতুন করে পরিচর্যা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক চামচ করে মধু ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণর সমস্যা কমে যায়। তবে যদি আপনার মধুতে এলার্জি থাকে, তাহলে এটি লাগানোর প্রয়োজন নেই।
২. ত্বকের ফর্সাভাব ফিরিয়ে আনে:
ত্বক পরিষ্কার করে তার ফর্সাভাব ফুটিয়ে তুলতে মধু অসাধারণ কাজ করে। সব থেকে ভালো ফল পাওয়ার জন্যে এক চামচ মধু, এক বাটি দই, এক চামচ ব্যাসন ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এক মাসের মধ্যে সুফল দেখতে পাবেন।
৩. বলিরেখা দূর করে:
মধু হল একটি প্রাকৃতিক হিউমেকটেন্ট অর্থাৎ এমন একটি পদার্থ যা ত্বকের ওপরের অংশগুলিকে সর্বদা আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বকের শুস্কতা দূর হয় ও শুষ্কতার ফলে যেই চুলকুনি ও বলিরেখা হয় সেগুলি দূর করে। মধুতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ভাল ফল পাওয়ার জন্যে এক চামচ মধু এক টুকরো পেঁপের রস, দুধ বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে রোজ মেখে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় ও বলিরেখা দূর হয়।
৪. ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে মধু:
১ চামচ মধু এবং ২ চামচ দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট ধরে রেখে মুখ ধুয়ে নিন। এতে ত্বকের শুষ্কভাব ও আঁশ-ওঠা ভাব অনায়াসে সেরে যায়। মধুতে রয়েছে এন্টিব্যাটিরিয়াল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের মধ্যে থেকে গভীরভাবে কাজ করে ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
৫. ঠোঁট ফাটা দূর করতে মধু:
ঠোঁটে শুধুমাত্র মধু লাগালেই ঠোঁট ফেটে যাওয়া বন্ধ করা যায়। রাতে ঘুমোনোর আগে ঠোঁটে মধু লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে সেটি ধুয়ে নিন। এতে ঠোঁটের কোমলভাব ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে। এমনকি ঠোঁট না ফাটলেও আপনি এটি লাগাতে পারেন, তাতে ঠোঁটের গোলাপিভাবেও ফুটে ওঠে।
৬. ত্বক পরিষ্কার করে:
মধু ত্বকের ময়লা ও ধুলো পরিষ্কার করে তার প্রাকৃতিক তৈলাক্তভাব ফুটিয়ে ওঠে। হাফ চামচ মধু আঙুলে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি দারুণ প্রাকৃতিক টোনার ও ক্লিন্সারের কাজ করে।
চুলের জন্য মধুর উপকারিতা –
মধুতে থাকা নানারকমের পুষ্টিকর উপাদান স্বাস্থ্য ও ত্বকের পাশাপাশি চুল ও মাথার স্ক্যাল্পের নানারকমের সমস্যা দূর করতেও দারুণ কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে থাকে। আসুন বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক:
১. চুল বাড়াতে মধু:
চুল বাড়ানোর জন্যে মধু দারুণ কাজ দেয়। ভাল ফল পেতে হলে এক চামচ মধুর সাথে এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটু গরম করে স্ক্যাল্পে ভাল করে মালিশ করুন। প্রয়োজনে আপনি এতে ডিমের সাদা অংশও দিতে পারেন। এরপর ১৫ মিনিট রেখে একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ বার করে করলে খুব কম দিনের মধ্যেই চুলের লম্বাভাবে অনুভব করতে পারবেন।
২. ড্যানড্রাফ দূর করতে মধু:
ড্যানড্রাফ দূর করতে মধু ওষুধের মত কাজ করে। সপ্তাহে ৩ দিন করে ১ চামচ মধু নিয়ে একটুখানি জলের সাথে মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে ভালো করে মালিশ করে ৩ ঘন্টা মত রেখে দিন। তারপর হালকা একটি শ্যাম্পু ব্যবহার করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দু মাস এটি করার ফলে ফলাফল অবশ্যই বুঝতে পারবেন।
আরও পড়ুন - Flower Tea – জানেন কি কোন ফুল থেকে তৈরি চা আমাদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে
৩. স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে:
মাথার ত্বক অর্থাৎ স্ক্যাল্পের ধুলো ময়লা পরিষ্কার করতেও মধুর জুড়ি নেই। ১ চামচ মধুর সাথে ২ চামচ জল মিশিয়ে সেটি ভালো করে স্ক্যাল্পে রোজ মালিশ করে উষ্ণ গরম জল বা শেম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে, শুধু লাগালেই হবেনা, পাশাপাশি আপনাকে মধু খাওয়ারও অভ্যেস করতে হবে।
আরও পড়ুন - Insect Attack - মশা, মাছির উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য হাতের কাছেই সমাধান