নাগেশ্বর (Ceylon ironwood বা Indian rose chestnut বা Cobra's saffron) এর বৈজ্ঞানিক নাম Mesua ferrea ।এটি Calophyllaceae পরিবারের অন্তর্গত এক প্রকার চিরসবুজ বৃক্ষ। এটিকে হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় নাগচম্পা বা নাগকেসর বলা হয়; যদিও 'নাগকেশর' নামে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রকার উদ্ভিদ বাংলায় পরিচিত। এছাড়া নাগলিঙ্গম নামে অন্য একটি প্রজাতি রয়েছে। অর্থাৎ, নাগেশ্বর, নাগকেশর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতি। নাগেশ্বর হলো শ্রীলঙ্কার জাতীয় ফুল। ১৯৮৬ সালে এটিকে জাতীয় ফুল বলে ঘোষণা করা হয়। শ্রীলঙ্কায় নাগেশ্বর গাছ 'না' বৃক্ষ বলে পরিচত।
গাছের বৈশিষ্ট্য:
পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণ ভারতে প্রচুর দেখা যায়। মোট কথা সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটি প্রচুর দেখা যায়। সাগর সমতলের ১০০০ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচুতেও এটি জন্মাতে পারে।
নাগেশ্বর শোভাবর্ধক চিরসবুজ গাছ, গাছে প্রচুর পাতা হয়। পাতাগুলো সরু ও বল্লমাকৃতির। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। কচি পাতা দেখে মনে হয় রঙ্গের ছোপ লেগেছে গাছের উপরে। এই গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সারা বছর নতুন নতুন পাতা গজানো। পাতার বিন্যাস ঘনবদ্ধ ফলে নাগেশ্বর গাছ বেশ ছায়া সুনিবিড় হয়।
নাগেশ্বর গাছ প্রায় ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হযতে পারে আর গাছের গুঁড়ির পরিধি প্রায় ২ মিটার হতে পারে। এদের কাণ্ড থেকে আঠা পাওয়া যায়। এই গাছের কাঠ বেশ শক্ত হয়। কাঠের রঙ লাল। বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মে ছোট চারা দেখতে হুবুহু ছোট লিচু চারার মত হয়। নাগেশ্বর গাছ খুবি ধীর গতিতে বড় হয়। ফুল আসতে বেশ কয়েকবছর সময় লাগে। বয়স্ক গাছে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ফুল ফোটে। তবে নাগেশ্বর ফুল সবচেয়ে বেশি ফোটে বসন্তকালে। কিছু কিছু গাছে বর্ষায়ও ফুল ফুটতে দেখা যায়। নাগেশ্বর ফুল সুগন্ধিযুক্ত। ফুলগুলি দুধ সাদা ও কিছু কিছু গাছে হালকা গোলাপী রঙ্গের হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি। প্রতিটি ফুলে চারটি বড়বড় কিছুটা কোঁকড়ানো পাপড়ি থাকে।পাপড়ির রং সাদা ও হালকা গোলাপী হলেও ফুলের মাঝ খানে অসংখ্য হলদে সোনালী রংঙ্গের পুংকেশর থাকে। একেবারে কেন্দ্রে থাকে গর্ভকেশর। অর্থাৎ ফুলগুলো উভয় লিঙ্গিক। পূজার উপকরণে এ ফুল কাজে লাগে। নাগেশ্বরের ফুল ভেষজগুণেও অনন্য।
নাগেশ্বর গাছে সেপ্টেম্বর মাসে ফল হয়। ফলগুলি দেখতে অনেকটা আমাদের দেশি গাবের মত। ফলের আকার ১ থেকে ১.২৫ ইঞ্চি। ১ থেকে ৪টি বীজ হয়। বীজের রঙ ধূসর।
উপকারিতা:
নাগেশ্বরের ফুল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি খুব উপকারি একটি উদ্ভিদ। নাগেশ্বরের প্রধান অঙ্গগুলো শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে থাকে। হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। দুর্বল শরীরে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে। ডায়াবেটিস, বার্ধক্যজনিত রোগ কিংবা যে কোনো কারণে শারীরিক, স্নায়বিক বা যৌনদুর্বলতা দেখা দিক না কেন, নাগেশ্বর ফুল এ ক্ষেত্রে শতভাগ কার্যকরী।
এ ছাড়া নাগেশ্বর রক্ত পরিষ্কারক, কৃমি ও অর্শরোগে নিরাময়েও বিশেষ ভূমিকা রাখে। যে কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরও এ থেকে তৈরি ওষুধের কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ওষুধ তৈরির নিয়মকানুন হলো-নাগেশ্বর, চিতামূল, শুঠ, জটামাংসী, নানখাহ্, বাদিয়ান, আনিসুন, রুমি মস্তগি, তেউরিমূল, রেওয়ান্দ চিনি, জাফরান, খুলঞ্জান, বিস্বাসা, সাযজ হিন্দি, করণফুল, এলাচ, পিপুলসহ অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে ওষুধ তৈরি করে নিয়ে সেবন করতে হবে।
রাসায়নিক উপাদানঃ
ফুলে উদ্বায়ী তেল, তিক্ত উপাদান, বিটা-এমাইরিন, বিটা-সাইটোস্টেরল; বিচিতে অনুদ্বায়ী তেল এবং ফলে একটি তেল রজন বিদ্যমান।
বিশেষ কার্যকারিতাঃ আনন্দদায়ক, যৌন উদ্দীপক, যকৃত ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক।
রোগ অনুযায়ী ব্যবহার পদ্ধতিঃ
রোগেরনামঃ যকৃত ও পাকস্থলীর
ব্যবহার্য অংশঃ ফুল (চূর্ণ)
মাত্রাঃ ৩ গ্রাম
ব্যবহার পদ্ধতিঃ
আহারের পর দিনে ২ বার সামান্য পরিমাণ জৈন চূর্ণ মিশিয়ে পানিসহ সেব্য।
রোগের নামঃ অর্শরোগে
ব্যবহার্য অংশঃ ফুল (কাঁচা)
মাত্রাঃ ৯-১০ গ্রাম
ব্যবহার পদ্ধতিঃ
রাতে গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে কচলিয়ে ছেঁকে নিয়ে পানিটুকু সামান্য মিছরি বা মধুসহ সেব্য।
আরও পড়ুন - আতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানেন কি?
সতর্কতাঃ
নির্দিষ্ট মাত্রার অধিক মাত্রায় সেবন করা সমীচীন নয়। এতে শরীরের জ্বালা পোড়া হতে পারে।
আরও পড়ুন - শরীর সুস্থ রাখতে এই গরমে আপনাকে খেতেই হবে ব্রোকোলি