চা পান করেন না, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই নগণ্য। কিন্তু এই চা-এর যে কতরকম তারতম্য আছে, তা হয়ত অনেকেরই অজানা। কেউ পছন্দ করেন গ্রীন টি, কেউ আবার খুশি হন ফ্লেবার্ড টি পেলে। কি এই ফ্লেবার্ড টি? সাধারণ চা ছাড়াও বিভিন্ন ফুল থেকে তৈরি করা হয় সুপেয় চা, যা পান করলে আমাদের মনে আসে এক প্রশান্তি। ক্যামোমাইল-এর নির্যাস থেকে তৈরি চা-ও এরকমই এক পানীয়।
সারাদিন আমরা সকলেই কাজের অবসরে হোক বা গল্পের মাঝখানে বা কর্মব্যস্ত জীবনের পরে সঙ্গী হিসেবে চা-কেই বেছে নিই। চা আমরা প্রায় সকলেই পান করি। আর সেই যা যদি হয় জনপ্রিয় ক্যামোমেইল ফুল থেকে তৈরি তাহলে তো আর কথার অবকাশই নেই। নিঃসন্দেহে তা আমাদের স্ট্রেস কমাতে এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু কেন এত জনপ্রিয় ক্যামোমাইল টি?
চলুন জেনে নেওয়া যাক এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
স্ট্রেস রিলিফ (Stress Relief) -
সবচেয়ে পরিচিত একটি জনপ্রিয় ভেষজ ক্যামোমাইল, যা সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়। এটি অনিদ্রার মতো সমস্যা কমায়। এর থেকে তৈরি পানীয় দিনের শেষে আপনার মনকে চাপমুক্ত (Stress Relief) এবং উদ্বেগ উপশম করতে পারে। ক্যামোমাইলে রয়েছে এমন কিছু যৌগ, যা আমাদের শরীরে সেরোটোনিন এবং মেলাটনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে শরীরে শান্তি অনুভূত হয়।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (Anti Inflammatory) -
ক্যামোমাইল-এর নির্যাসে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য, যা স্নায়বিক এবং পেশী শিথিল করতে অ্যামিনো অ্যাসিডের উত্পাদন বাড়িয়ে তোলে। ফলে এই চা নিয়মিত পান করলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের দরুন পেশীর ব্যাথা এবং শরীরের প্রদাহ দ্রুত নিরাময় হয়।
এক চা চামচ ক্যামোমাইল তেল এবং দু চামচ নারকেল তেল একত্রে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ দিয়ে আপনার ব্যথা স্থানে ম্যাসেজ করলে উপকার পাবেন।
চুলের জন্য ভাল -
এতে থাকা ফেনোলিক যৌগগুলি আপনার চুল গোড়া থেকে মজবুত করে তোলে। চুলকে নরম ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ -
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যামোমাইল থেকে তৈরি চা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে উপকারী। শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে এবং রক্তে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ইনসুলিন মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যামোমাইল চা কার্যকরী। তবে ডায়াবেটিসের জন্য ক্যামোমিল চা পান করার আগে, ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিৎ।
অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ -
বিশেষত মহিলাদের মেনোপজাল পিরিয়ডে হাড়ের ক্ষয় বেশি দেখা যায়। ক্যামোমাইল চা-এ অ্যান্টি-অ্যাস্ট্রোজেনিক বৈশিষ্ট্য থাকায় তা হাড়ের দৃঢ়তা বজায় রাখতে এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অ্যালার্জি প্রশমন -
ক্যামোমাইল চা দেহে অ্যালার্জেন প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি অ্যান্টিহিস্টামাইন হিসাবে কাজ করে, ফলে শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া প্রশমিত হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি -
ক্যামোমাইল –এর নির্যাস দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়তা করে। বিশেষত শীতকালে এটি পান করা উপকারী বলে মনে হয়। কারণ অনেকে মনে করেন শীতকালে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বেশী হয়। তাই এই ফুলের চা পান করলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং রোগের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
সতর্কতা –
অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
এই চা খেলে তন্দ্রাচ্ছন্নতা হয় বলে, চা পানের পড়ে আরাম করাই শ্রেয়।
এটা গর্ভবতী মহিলা ও হাঁপানিতে আক্রান্তদের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ।
কোনরকম অ্যালার্জি থাকলে তা পরীক্ষা করে এই চা পান করাই উপযুক্ত কাজ।
আরও পড়ুন - জানুন বিশেষ ঔষধি গুন সম্পন্ন 'করমচা'এর উপকারী দিক গুলি কি কি