‘৩ জি’ কাটিং প্রধানত কুমড়োগোত্রীয় ফসলের ফলন বৃদ্ধির সহজতম পন্থা। ‘৩ জি’ কাটিং নামটি শুনেই হয়তো মনে হতেই পারে যে, এটি অভিনব একটি কৌশল। আদতে ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না। এটি মূলত যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে, তা হল শাখার অগ্রস্থিত বা শীর্ষস্থ অংশের ছাঁটাই (Pinching of apical portion of branches), যা বহুদিন ধরেই কৃষকবন্ধুরা বিভিন্ন ফসলে চর্চা করে আসছেন। কিন্তু সকল জিনিসেরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। ঠিক তেমনই এরও উপকারিতা থাকলেও সাথে রয়েছে বেশ কিছু অসুবিধা। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত -
‘৩ জি’ কাটিং –এর উপকারিতা (Advantages) –
ক) এই গোত্রীয় ফসলের প্রাথমিক শাখার ৭০-৮০ শতাংশ পুরুষ ফুল ও ২০ শতাংশ স্ত্রী ফুল জন্মায়। দ্বিতীয় বর্গের শাখায় হয় ৫০ শতাংশ পুরুষ ফুল। কিন্তু তৃতীয় বর্গীয় শাখায় পুরুষ ফুল কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১০-১৫ শতাংশে ও স্ত্রী ফুলের সংখ্যা হয় ৮০-৮৫ শতাংশ। তৃতীয় প্রজন্মের প্রশাখাগুলিতে স্ত্রী ফুলের বহুল আধিক্যের কারণে গাছ প্রতি ফলন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
খ) ফলের আকার ও আকৃতি (Size & Shape) অনেক বেশী ভালো হয়।
গ) যেগেতু ‘১ জি’ ও ‘২ জি’ শাখা প্রশাখাগুলিতে পুরুষ ফুলের আধিক্য থাকে, তাই তৃতীয় বর্গীয় প্রশাখাগুলিতে স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন সুনিশ্চিত হয়।
ঘ) ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কৃষকবন্ধুরা অনেক বেশী লাভবান হন।
ঙ) একটি গাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ফলন (Prolonged fruiting) পাওয়া যায়।
৩ জি কাটিং: কুমড়ো গোত্রীয় সবজী ফসলের ফলন বৃদ্ধির সহজতম উপায়
অসুবিধা (Disadvantages) –
অনেক সুবিধার পাশাপাশি এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন –
ক) গাছের বৃদ্ধির কোন দশায় ও কীভাবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়ে কৃষকবন্ধুদের সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
খ) অনেক ক্ষেত্রে ফলন পেতে অনেকটা দেরী হয় (Delayed fruiting)।
গ) অনেক সময় ছাঁটাই করার পর শাখা প্রশাখার কাটা অংশ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। এরকম ধরণের আক্রমণ পরিলক্ষিত হলে সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় জৈব বা অজৈব ছত্রাকনাশক বা ব্যাকটেরিয়ানাশক প্রয়োগ করা উচিৎ।
অনেক ক্ষেত্রে কৃষকবন্ধুরা একটি ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে থাকেন যে, যে কোন শস্য জাতীয় ফসল (Agronomic crop) চাষের তুলনায় সবজীর চাষ অনেক বেশী কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, বিভিন্ন ছোটখাট ও সহজ কিন্তু লাভজনক কৌশল ব্যবহার করে চাষবাস করতে পারলে সবজী ফসল থেকে মুনাফা কিন্তু শস্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশী। ঠিক তেমনই একটি কৌশল হল কুমড়োগোত্রীয় ফসলের ক্ষেত্রে ‘৩ জি’ কাটিং। তাই যে সমস্ত কৃষক বন্ধুরা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এই সব সবজীর চাষ করে থাকেন বা যারা আগামী তে করবেন বলে চিন্তাভাবনা করছেন, তাদের অতি অবশ্যই এই পদ্ধতির অবলম্বন করা উচিৎ। এতে করে অনেক বেশী লাভবান হওয়া সম্ভব।
নিবন্ধ - শুভ্রজ্যোতি চ্যাটার্জ্জী এবং দেবমালা মুখার্জি (গবেষক, সবজী বিজ্ঞান বিভাগ, উদ্যান পালন অনুষদ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর, নদীয়া)
Image source - Google
Related link - (3G cutting in plant) ফসলের ফলন বৃদ্ধি করতে কিভাবে করব ‘৩ জি’ কাটিং