আমলকী বা আমলা একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। গাছের পাতা পালকের মতো লম্বা, দেখতে অনেকটা তেঁতুল পাতার মতো। ফুল ছোট এবং সবুজাভ-হলুদ রঙের। পরিণত ফল গোলাকার, অম্ল স্বাদ যুক্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম টাটকা আমলকীতে গড়ে ৭০০-১৬০০ মি.গ্রা. ভিটামিন-সি রয়েছে।
মাটি(Soil):
আমলকি চাষের জন্য দরকার বেলে দোআঁশ মাটি। বেলে দোআঁশ মাটি না পাওয়া গেলে বাগানের মাটির সাথে বালি মিশিয়ে নিয়ে ও মাটি তৈরি করা যায়। আমলকি চাষের জন্য প্রায় ১ মাস আগে থেকে মাটি তৈরি করে রাখতে হবে। বেলে দোআঁশ মাটির সাথে গোবর সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করে রাখতে হবে।
জলবায়ু(Climate):
বৃষ্টিপাত বেশি হলে আমলকি চাষ ভালো হয় তবে এই গাছ অনেক গরম ও সহ্য করতে পারে। তাই প্রায় সর্বত্রই এর চাষ করা যায়। তবে জমিতে যেন জলাবদ্ধতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে তাই জমি উচু হতে হবে।
বংশ বিস্তার:
বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন কলমের মাধ্যমে যেমন চোখ কলম ও শিকড়ের মাধ্যমেও বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে।
রোপনের সময়:
বর্ষাকালের শুরুতে অর্থাৎ বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ্ মাসের দিকে চারা রোপন করার উপযুক্ত সময়।তবে বর্ষাকালের শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র বা আশ্বিন মাসে ও চারা রোপন করা যায়। বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে রোপন না করা ভালো।
আরও পড়ুন -Bell Fruit Farming: জেনে নিন জামরুল চাষের দূর্দান্ত পদ্ধতি
চারা তৈরি:
বীজ থেকে তৈরি করা চারা খুব ভালো হয় কিন্তু বীজ থেকে তৈরি চারা গাছে ফল আসতে দেরি হয়। বীজতলা ভালো ভাবে তৈরি করতে হয় এবং সাধারনত গ্রীষ্মকালে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার আগে ঠান্ডা জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর বীজ বুনতে হবে | বীজ মাটিতে বোনার ১৫ দিন পর বীজ গজাতে শুরু করে। বীজতলা যদি আগাছা মুক্ত থাকে তাহলে তিন মাসের মধ্যেই চারা উপযুক্ত হয়ে যাবে এবং মূল জমিতে রোপন করা যাবে। তবে বর্ষার প্রথম দিকে চারা তৈরি করে তা বীজতলায় রেখে বড় করে নিতে হবে তারপর পরের বর্ষাকালে তা রোপন করা ভালো। এছাড়া পলিথিন ব্যাগে জৈব সার যুক্ত মাটি দিয়ে তাতে ও চারা তৈরি করা যায়। আবার চোখ কলম থেকে অনেক সময় চারা তৈরি করা যায়। গাছের শিকড় থেকে অনেক সময় চারা গাছ বের হয়। সেই চারা গাছ কে প্রধান শিকড় থেকে আলাদা করে সরাসরি মূল জমিতে লাগানো যায়।
গর্ত তৈরি:
চারা রোপন করার ১৫-২০ দিন আগে ৭×৭ মিটার দূরে ১×১×১ মিটার আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের মাটির সাথে ভালো করে সার মিশিয়ে দিতে হবে। গোবর সার বা জৈব সার ১০-১৫ কেজি, টিএসপি সার ৫০০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম ও জিপসাম সার ২০০ গ্রাম ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি:
জমি সমতল করে নিতে হবে। সমতল জমিতে বর্গাকারে বা আয়তাকার বা ত্রিভুজাকার পদ্ধতিতে চারা রোপন করতে হবে। জমি যদি উচু নিচু হয় বা পাহাড়ি জমি হয় তাহলে কন্টুর পদ্ধতিতে চারা রোপন করতে হবে। গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে চারা রোপন করতে হবে। বাছাই কৃত চারাটি সোজাভাবে গর্তে দিয়ে চারদিকে থেকে গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে। চারার গোড়া যেন সোজা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে চারার সাথে বাশের খুটি, ও বেড়া দিতে হবে। এবং জল সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ:
১-২ বছর বয়সী গাছের জন্য জৈব সার দিতে হবে ৫-১০ কেজি, ইউরিয়া দিতে হবে ২০০ গ্রাম, টিএসপি দিতে হবে ১০০ গ্রাম, এমওপি দিতে হবে ১০০ গ্রাম, জিপসাম দিতে হবে ৫০ গ্রাম। ৩-৫ বছর বয়সী গাছের জন্য জৈব সার দিতে হবে ১০-১৫ কেজি,ইউরিয়া দিতে হবে ৩০০-৫০০ গ্রাম, টিএসপি দিতে হবে ২০০-৩০০ গ্রাম, এমওপি দিতে হবে ২০০-৩০০ গ্রাম, জিপসাম দিতে হবে ১০০ গ্রাম।
আগাছা দমন:
আমলকি চাষে জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় বা আশে পাশে যেন আগাছা জন্মাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে বর্ষাকালের শুরু ও শেষ দিকে জমি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ:
ফল পরিপক্ক হলে তা সংগ্রহ করতে হবে। ফল পাড়ার সময় ঝাকুনি দিয়ে পাড়া যাবে না তাতে ফল মাটিতে পড়ে নষ্ট হবার আশঙ্কা থাকে। তবে গাছের নিচে জাল ধরে তারপর তা পাড়া যেতে পারে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে প্রায় ৫০-৬০ কেজি ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - Budgerigar birds rearing: বদ্রী পাখি পালনে আপনিও হয়ে উঠুন লাভবান