অপরাজিতা ফুলটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর ইংরেজি নাম ‘বাটারফ্লাই পি’। গাঢ় নীল বলে একে ‘নীলকণ্ঠ’ নামেও ডাকা হয়। এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনীপুষ্প। ফুলের ভেতরের আকৃতির জন্যই এ নাম। কেরালায় একে বলে ‘শঙ্খপুষ্পী’।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
অপরাজিতা সাধারণত নীল ছাড়াও সাদা এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল হয়ে থাকে। ফুলের ভেতরের দিকটা সাদা বা ঈষৎ হলুদ রঙের হয়ে থাকে। লতানো এবং সবুজ পাতা বিশিষ্ট গাছে এ ফুল হয়ে থাকে। তবে ফুলে কোনো গন্ধ নেই। তবু রঙের বাহারে ফুলটি অনন্য। হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। লতা জাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এই ফুল হয়।
উপকারিতা(Benefits):
১) দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে:
এই ফুল চোখের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসায় এবং দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর সাহায্যে ঝাপসা দৃষ্টি, রেটিনার ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
২) ডায়াবেটিস বিরোধী:
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অপরাজিতার চা অবিশ্বাস্য উপকারী। খাবারের মাঝে নেওয়া এক কাপ নীল চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এবং পরবর্তী স্তর পর্যন্ত মাত্র স্থিতিশীল রাখবে |
আরও পড়ুন - Seedless Lemon Farming: বীজহীন লেবু চাষে লাখোপতি কৃষক শহীদুল
৩) চুল পড়ার চিকিৎসায় কার্যকর:
অকালে চুল পেকে যাওয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ফুলের উপাদান অ্যান্থোসায়ানিন মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে। এইভাবে চুলের ক্ষতি এবং চুল পড়ার চিকিৎসা করা যায়।
মাটি(Soil):
গাছটি খুব উর্বর মাটি না হলেও ভালোভাবে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু একটি জিনিস যেটি প্রয়োজন তা হল ভাল জল নিষ্কাশন। যদি আপনি এটি টবে লাগান তবে টবটির নিচে যেন অন্তত দুটি জল নিষ্কাশন এর গর্ত থাকে।
টবের মাটি তৈরী:
টবে ভরাট করার জন্য হালকা ও ভাল জল নিষ্কাশনকারী মাটি ব্যবহার করুন। মাটিতে জন্মানোর জন্য এমন একটি জায়গা বেছে নিন যেখানে জল না দাঁড়িয়ে থাকে। গাছটি লাগাবার আগে মাটিতে কিছু কম্পোস্ট, পচা পাতা বা অন্যান্য জৈব পদার্থ মিশিয়ে নেবেন।
রোপণ:
অপরাজিত ফুল গাছের ডাল বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে রোপণ করতে হয়। ছোট ছোট ধূসর ও কালো বর্ণের বিচি রোদে শুকিয়ে নরম মাটিতে রোপণ করতে হয়। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানেও এ গাছ লাগানো যায়। আশেপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি বেড়ে ওঠে।
সময়কাল:
এই ফুলের বয়স অন্তত ৫ কোটি বছর। নীল অপরাজিতা বারো মাস ফোটে। তবে শীতে কমে যায়। নীল ফুলের গাছ যত তাড়াতাড়ি শাখা-প্রশাখা ছড়ায় সাদা তত তাড়াতাড়ি ছড়ায় না।
পরিচর্যা:
কয়েকটি কীটপতঙ্গ এবং রোগ রয়েছে যা গাছটিকে প্রভাবিত করতে পারে যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এফিড, মাকড়সা, শুঁয়োপোকা,ঘাসফড়িং ইত্যাদি। নিম তেল ব্যবহার করে এফিড এবং মাকড়সার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করুন। হাত দিয়ে বড় পোকামাকড় তুলে নিন এবং আক্রান্ত পাতা ছিঁড়ে ফেলুন। যদি ক্ষতি গুরুতর এবং ব্যাপক না হয় ততক্ষণ গাছের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পরবে না।
তাছাড়া হলুদ পাতা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতির ইঙ্গিত দিতে পারে। গাছটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিতে একটি সুষম সার প্রয়োগ করুন। তাই জৈব সারটি একটি ভাল বিকল্প হতে পারে। অন্যান্য লতা গাছগুলির মতো, যদি গাছটি লম্বা হতে শুরু করে তবে আপনি এটিকে ছোট রাখতে ছাঁটাই করতে পারেন।
আরও পড়ুন - Brinjal Farming: জেনে নিন বর্ষায় বেগুন চাষ ও পরির্চযার সম্পূর্ণ পদ্ধতি