বাড়ির ছাদে অনেকেই সবজি বা ফলমূলের চাষ করেন। কিন্তু শুধু সবজি বা ফলমূল নয় তার পাশাপাশি মাছ চাষ করতে পারেন। এতে বাড়তি তেমন খরচ নেই। অন্যদিকে আমিষের জোগানও হবে। আবার আর্থিক দিক থেকেও উন্নতি ঘটে | এই নিবন্ধে অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
অ্যাকোয়াপনিক্স হলো হাইড্রোপনিক্স ও একোয়াকালচারের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি, যেখানে মাছ ও সবজির (Fish and vegetable farming) সমন্বিত চাষ করা সম্ভব। এতে কোনো মাটির দরকার হয় না, শুধু জল ব্যবহার করেই সম্ভব মাছ ও সবজির চাষ।
এ পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে বা আঙিনায় আয়তনের ওপর নির্ভর করে যে কোনো আকারের প্লাস্টিক ট্যাঙ্ক বা ড্রামের মধ্যে জল দিয়ে সেখানে তেলাপিয়া, মাগুর, কই, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ করা যাবে। আর সবজি চাষের জন্য একটি কাঠের আলনা তৈরি করে তাতে ৩ সারিতে উল্টো করে একটির নিচে আরেকটি দুইপাশে কাটা প্লাস্টিকের বোতল বসিয়ে তাতে নুড়ি পাথর দিয়ে সবজির চারা লাগাতে হবে। বিশেষ করে মাছের ট্যাঙ্কের অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ভেঙে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিণত করে পানিকে দূষণমুক্ত করে এবং ওই পানিকে আবার মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। এ পদ্ধতিতে দেশি-বিদেশি শাকসবজি চাষ করা যায়। তবে টমেটো, শসা, করলা, শিম, ব্রকলি, পুদিনা, বেগুন, দেশি লেটুসসহ আমেরিকান লেটুস ফলন বেশ ভালো হয়।
আরও পড়ুন -Seed Germination Process: বীজ অঙ্কুরোদগম পদ্ধতিগুলি কি কি?
এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য বাড়তি কোনো ধরনের সার বা মাটির প্রয়োজন না পড়লেও মাছের আলাদা খাদ্য বাইরে থেকে সরবরাহ করতে হবে।
অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতির সুবিধা(Benefits of aquaponics farming):
১. প্রযুক্তিটি অতি সহজ, যে কেউ এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করতে পারে |
২. অ্যাকোয়াপনিক্স একটি জৈব খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সুলভ উপাদান ব্যবহার করে উপাদেয় তথা পুষ্টিকর খাদ্য উৎপন্ন করা যেতে পারে।
৩. কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সবজি উৎপাদন সম্ভব।
৪. সবজি উৎপাদনে স্বল্প পরিমাণ জল দরকার হয়। এতে শুধু বাষ্পীভূত জলটুকুই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫. পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরি করে তাতে সারা বছরই মাছ ও সবজি চাষ করা যায়।
৬. এ পদ্ধতির জন্য তেলাপিয়া মাছই সর্বাধিক উপযোগী। কেননা, এ মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া, সারাবছর টমেটো, লেটুস, কচু ও পুদিনা চাষ করা সম্ভব |
অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতি (Aquaponics methods):
পুকুরে মাচা পদ্ধতি:
এ পদ্ধতিতে বাঁশের চটি দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। মাচাটি প্রতিটি আধা লিটার জল ভর্তি ৪০ টি বোতল দিয়ে ভাসিয়ে রাখতে হয়। অতঃপর বোতলের তলায় অনেক ছিদ্র করে তার মধ্যে নারিকেলের ছোবড়া ও নুড়ি পাথর স্তরে স্তরে সাজিয়ে তাতে সবজির চারা লাগিয়ে মাছের পুকুরে স্থাপন করতে হয়। প্রতিটি মাচায় চারটি করে কচু, পুদিনা, কলমিশাক, ঢেঁড়স ও টমেটোর মোট ২০টি চারা ব্যবহার করা যায়।
প্লাস্টিকের ড্রাম পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ড্রাম লম্বালম্বিভাবে কেটে অর্ধেক করে নুড়ি পাথর ও মাটি স্তরে স্তরে সাজিয়ে কচু, পেঁপে ও বেগুনের চারা রোপণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে মাছের ট্যাংকের ময়লা জল পাম্প করে প্রতিদিন ২ বার ড্রামের নুড়ি পাথরের মাঝে সরবরাহ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় গাছের শেকড় প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে এবং পরিষ্কার জল পুনরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। এ পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন অন্য যে কোনো পদ্ধতির চেয়ে বেশি ভালো উৎপাদন হয় | এতে সারের প্রয়োজনও হয় কম |
গ্যালভানাইজড পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজড পাত দ্বারা ৫”x২”.৫”x১০” আকারের ট্রে তৈরি করে সেখানে জল নির্গমনের জন্য একটি ৪ ইঞ্চি লম্বা পাইপ স্থাপন করা হয়। অতঃপর জল ভর্তি একটি ট্রের সাহায্যে ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে এবং অপর একটিতে নুড়ি পাথর সাজিয়ে সবজি চাষ করা হয়। ট্রেগুলোকে একটি ভাসমান বাঁশের মাচার ওপর রাখা হয়। ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে ৪ টি করে টমেটো, লেটুস ও পুদিনার চারা একটি শোলার পাতের মাঝে রোপণ করা হয়। অপর পক্ষে, নুড়ি পাথরের ট্রেতে কচু, টমাটো, লেটুস ও কলমিশাক রোপণ করে যথানিয়মে মাছের ট্যাংকের জল সরবরাহ করা হয়।
আরও পড়ুন -Biofloc Fish Farming: বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কিভাবে মাছ চাষ করবেন? জেনে নিন পদ্ধতি