অর্জুন (Terminalia arjuna) এক অতি জনপ্রিয় ভেষজ উদ্ভিদ | এর ঔষধি গুনের জুড়ি মেলা ভার | এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Terminalia arjuna এবং পরিবারঃ Combretaceae | বৃহদাকার পত্রঝরা বৃক্ষ এবং উচ্চতা ২৫ মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছটির মাথা ছড়ানো, ডালগুলি নিচের দিকে ঝুলানো থাকে, বাকল মসৃণ। অগ্রাহায়ন-ফাল্গুন মাসে পাতা ঝরে এবং বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন পাতা গজায়। ছাল খুব মোটা এবং ধূসর বর্ণের। ফল দেখতে কামরাঙ্গার মত তবে আকারে ছোট।
অর্জুনের ঔষধি-গুন্(Medicinal properties):
১)অর্জুন ছাল ভাল ভাবে প্রেষণ করে চিনি ও গরুর দুধের সাথে প্রত্যহ সকালে খেলে হৃদরোগ এবং বুক ধরফর কমে যায়।
২) রক্তে নিম্ন চাপ থাকলে অর্জুনের ছালের রস সেবনে উপকার হয়।
৩) রক্ত ক্ষরণে ৫-৬ গ্রাম ছাল রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেকে পানি খেলে আরোগ্য হয়।
৪) শ্বেত বা রক্ত প্রদাহে ছাল ভিজানো পানি আধ চামচ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে রোগের উপশম হয়।
৫) ক্ষয়কাশে অর্জুনের ছালের গুড়া বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে ঘি, মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৬) কাঁচা পাতার রস সেবনে আমাশয় রোগ ভাল হয়। রক্ত আমাশয়ে অর্জুন ছালের চূর্ণ ছাগলের দুধ মিশিয়ে খেলে সেরে যায়।
৭) হাঁপানিতে অর্জুন ফল টুকরো করে তামাকের মত ধোঁয়া টানলে উপকার পাওয়া যায়।
৮) হার্নিয়াতে অর্জুনের ফল কোমরে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন -Monsoon Mixed Crop: বর্ষায় মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করে হোন লাভবান
মাটি ও জলবায়ু(Soil and climate):
স্যাঁতস্যাঁতে উর্বর দো-আঁশ মাটি এ গাছ চাষের জন্য উপযুক্ত। এছাড়া, লাল ল্যাটেরাইট মাটিতেও অর্জুন চাষ হয় ভালোভাবে | চাষের জন্য নির্বাচিত জমিতে যেন জলাবদ্ধতা না থাকে | এটি মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উপজাতি, এই গাছ চাষে সর্বাধিক তাপমাত্রা প্রয়োজন ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড |
জমি তৈরী(Land preparation):
জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। বীজ বপণ বা চারা রোপণের পূর্বে বীজতলার মাটি বা গর্তের মাটির সাথে জৈব সার ৩ঃ১ অনুপাতে মিশাতে হবে।
বীজ বপন(Seed):
১ ফুট ২ ইঞ্চির ব্যাবধানে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে | বীজ বপনের পর প্রতিদিন জল সেচ দিতে হবে | বীজের অঙ্কুরোদ্গম (Germination) হতে প্রায় ৭ দিন সময় লাগে কখনো কখনো ৬০ দিনও লেগে যায় |
বীজ শোধন:
বীজ বপণের পূর্বে কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজতলায় বপণ করতে হবে। বীজতলায় মাটি এবং জৈব সার (৩ঃ১) মিশিয়ে আগেই প্রস্তুত করতে হবে। অংকুরিত চারার বয়স ৮-৯ মাস হলে তা রোপণ করা উত্তম।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
বীজ বপনের সময় প্রায় ৫ কেজি খামার সার ব্যবহার করতে হবে | এই গাছের জন্য উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের প্ৰয়োজন হয়না | জৈব সার দেওয়াই বাঞ্চনীয় |
সেচ:
অর্জুন গাছ চাষ, বীজতলায় বীজ বপন এবং গাছের বৃদ্ধির জন্য সেচ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় | গরমকালে প্রতিদিন সেচ দেওয়া জরুরি | বর্ষাকালে প্রয়োজন অনুযায়ী গাছে সেচ দিতে হবে | অত্যন্ত গরমে সকাল ও সন্ধ্যায় জল সেচ দেওয়া উত্তম |
আগাছা দমন:
প্রায় মাঝে মাঝেই আগাছা দমন করতে হবে তবে, গাছের বৃদ্ধি ঘটবে | কৃষকরা নিজেরাই আগাছা দমন করতে পারেন হাতের সাহায্যে বা বাজারজাত কোনো পেস্টিসাইড ব্যবহার করতে পারেন |
মালচিং(Mulching):
আগাছা দমন ও মাটির আর্দ্রতা কে ধরে রাখতে চাষের জমিতে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে |
ফসল সংগ্রহ:
গাছের মোটা পুরু ছাল কাটতে হবে | ছালের বাইরের আস্তরণ ব্যবহার করা হয় এবং মাঝের ও ভিতরের আস্তরণকে পুনর্জন্মের জন্য রেখে দেওয়া হয় | হেক্টর প্রতি প্রায় ৪৫ কেজি ছাল পাওয়া যায় |
আরও পড়ুন - Potato Farming: অর্থকরী ফসল আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি