পৃথিবীর অন্যতম পুষ্টিকর ফল হলো "অ্যাভোকাডো"(Avocado) | এই ফল উৎপাদনে আমেরিকা প্রথম স্থানে থাকলেও, ভারতের বাজারে এর চাহিদা বেশ পরিলক্ষিত | বর্তমানে এই ফলের বাজারমূল্য উর্ধমুখী হওয়ায়, এই ফল চাষে আপনিও হতে পারেন লাভবান |
ভারতের প্রায় সর্বত্র তামিলনাড়ু, কেরালা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, সিকিম ইত্যাদি জায়গায় এই ফলের চাষ হয় | এই ফলের পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার অধিক | কাঁচা অ্যাভোকাডো ফল মাংসে সবজি হিসাবে , সালাডে ব্যবহৃত হয় | ডায়েবেটিস রোগীদের জন্য এই ফল খুবই উপাদেয়, কারণ এতে চিনির পরিমান কম |প্রধানত, শিশুদের জন্য এটি পুষ্টিকর খাবার, যা শিশুদের যকৃতকে সুরক্ষা করে এবং এটি অনেকাংশে দুধের বিকল্প হিসাবেও কাজ করে | অ্যাভোকাডো ফল চাষ অন্যান্য ফসল চাষের মতোই সহজ। তবে, জেনে নিন অ্যাভোকাডোর সহজ চাষ পদ্ধতি,
মাটি ও জলবায়ু(Soil and climate):
প্রধানত উঁচু জায়গায় এবং দোআঁশ, উর্বর ও বেলে দোআঁশ মাটিতে অ্যাভোকাডো চাষ ভালো হয়। এই ফলের চাষের জমি রোদযুক্ত ও সুনিষ্কাশিত হওয়া উচিত । কারণ, এই গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা | লবণাক্ত মাটিতে এই চাষ ভালো হয়না, এই চাষের উপযুক্ত PH ৫-৭। উষ্ম ও অবউষ্ম মণ্ডলীয় আবহয়ায় অ্যাভোকাডো ভালো জন্মায় | এই চাষের জন্য গড় তাপমাত্রা ১৩ – ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হওয়া প্রয়োজন |
রোপণ (Planting):
অঙ্কুরোদগমের জন্য সময় লাগে ৫০ – ১০০ দিন। জুলাই মাসে বীজ সংগ্রহ করা হয় | একটি বীজকে ৪-৬ ভাগ করে কেটে লাগালে প্রত্যেক ভাগ থেকে চারা গজায় | উষ্ণ আবহাওয়ায় সময় লাগে ৬ মাস, এবং আবহাওয়া শীতল হলে সময় লাগে ১২ – ১৮ মাস। বীজ থেকে এই উদ্ভিদটির চারা তৈরি করলে তা ফল দেবার জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে ৫ – ৬ বছরে।
আরও পড়ুন -Basil Farming: স্বল্প পুঁজিতে তুলসী চাষে অধিক উপার্জন
চারা রোপণের গর্ত:
প্রতিটি গাছের মধ্যে দূরত্ব হবে ৮-১০ মিটার। চারা রোপণের জন্য ১ x ১x ১ মিটার গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের মধ্যে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০ কেজি গোবর এবং ৩০০ গ্রাম টিএসপি সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন রেখে দিতে হবে। ১২-১৫ দিন পরে ওই গর্তে চারা বা গাছ রোপণ করতে হবে। গাছ প্রতি বছরে ৩ বার সার প্রয়োগ করতে হবে | ফল ধরার পর ১ বার, বর্ষার আগে ১ বার এবং বর্ষার শেষে ১ বার সার দিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ করতে হবে |
রোগ ও প্রতিকার(Disease management system):
পোকামাকড়:
মাকড়: মাকড়ের আক্রমণে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় ও কুঁকড়ে যায় | এহেন অবস্থায়, সানমেকটিন/ ভেরটিমেক/রনভিট ২ মিলি/লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে |
মিলি বাগ:
পোকার আক্রমণে ডালে ও পাতায় সাদা সাদা তুলোর মতো দেখা যায় | এক্ষেত্রে , টাফগর/ সানগর/মিপসিন ২ গ্রাম/লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে |
শিকড়ের পচন রোগ:
এই রোগের আক্রমণে শিকড় ও ফলে পচন দেখা যায়। এক্ষেত্রে, কম্প্যানিয়ন/অটোস্টিন/ ডাইথেন এম-৪৫ /রিডোমেল গোল্ড ২ গ্রাম/ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
শীতের শেষে অ্যাভোকাডো গাছে ফুল আসে এবং বর্ষা শেষে অর্থাৎ আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ফল পাকে। পাকা ফল গাছ থেকে সহজেই ঝরে পড়ে না বেশ কিছুদিন গাছে রেখে দেওয়া যায়। পাকা ফল ৫-৭ ডিগ্রী তাপমাত্রায় ৩০-৩৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
আরও পড়ুন -Farm Sector is at peak stage: দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রের ব্যাপক উন্নতি ঘটছে